গত কালের তুলনায় শুক্রবার সকাল থেকেই আবহাওয়া ছিল অপেক্ষাকৃত ভাল। তাতে অনুসন্ধান অভিযানে সুবিধা হলেও লাভ কিছুই হল না। দিনের শেষে অস্ট্রেলীয় প্রশাসন জানাল, পারথ থেকে প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার দূরে যে দু’টি বস্তু উপগ্রহচিত্রে ভাসতে দেখা গিয়েছিল, এ দিনও সেগুলির খোঁজ পাননি উদ্ধারকারী বিমানের কর্মীরা। সব মিলিয়ে নিখোঁজ হওয়ার চোদ্দো দিন পরেও বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর রহস্য ভেদ হল না।
অস্ট্রেলিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী ওয়ারেন ট্রাস অবশ্য জানিয়েছেন, ওই বস্তুদু’টি যেগুলিকে বিমানের ধ্বংসাবশেষ বলে অনুমান করা হচ্ছিল, হয়তো সমুদ্রগর্ভে কোথাও ডুবে গিয়েছে। কেউ কেউ সে ধারণা সমর্থনও করছেন। তাঁদের মতে, ১৬ মার্চ ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ প্রান্তে একটি দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় বস্তুদু’টিকে ভাসতে দেখা গিয়েছিল। তার পর কেটে গিয়েছে পাঁচ দিন। এই সময়ের মধ্যে টুকরোগুলো ডুবে যেতেই পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। আর সে ক্ষেত্রে সেগুলির হদিস মেলা যে দুষ্কর, তা-ও স্পষ্ট। এ দিনের অনুসন্ধান অভিযানের ফলাফল জানতে পারার পর সে আশঙ্কা আরও জোরদার হচ্ছে নিখোঁজ যাত্রীদের আত্মীয়দের মনে।
গত কাল অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টোনি অ্যাবটের ঘোষণার পর থেকেই অনুসন্ধান অভিযান শুরু হয়। কিন্তু কিছুই মেলেনি। এ দিন সকাল হতেই ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ প্রান্তের ওই এলাকায় হাজির হয় পাঁচটি নজরদারি বিমান। একটি জাহাজও খোঁজ চালিয়েছে দিনভর। কিন্তু রাত পর্যন্ত কিছুই মেলেনি। টোনি অ্যাবট বলেন, “বিশ্বের অন্যতম দুর্গম জায়গা ওটি। কিন্তু সেখানে যদি আদৌ কিছু থাকে, তা হলে আমরা নিশ্চয় খুঁজে বের করব।” কিন্তু নিশ্চিত হওয়ার আগে কেন আচমকা এমন ঘোষণা করলেন টোনি, তা নিয়ে এ দিন আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রীর অবশ্য ব্যাখ্যা, নিখোঁজ যাত্রীদের আত্মীয়দের কথা ভেবেই বিষয়টি জানিয়েছিলেন তিনি। তবে এ দিন টোনি ফের সতর্ক করেন, এখনই টুকরোগুলোকে বিমানের ধ্বংসাবশেষ ভাবার কোনও কারণ নেই। কারও কারও আবার ধারণা, উপগ্রহচিত্রে যেগুলিকে টুকরো বলে মনে হয়েছে, সেগুলি আসলে সূর্যের আলোর খেলা। আদতে সেখানে হয়তো কিছুই ভাসছিল না। বিশেষজ্ঞদের একাংশ আবার অন্য আশঙ্কা করছেন। তাঁদের মতে, ওই টুকরোদু’টি যদি আদৌ নিখোঁজ বিমানের অংশ হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে পরবর্তী কাজ হবে ‘লোকেটর’-এর সাহায্যে বিমানের ‘ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার’-এর খোঁজ করা। আর আশঙ্কাটা ঠিক এখানেই। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মহাসাগরের ওই অংশে যা গভীরতা, তা পেরিয়ে ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার থেকে কোনও সঙ্কেত পৌঁছনো মুশকিল। তা ছাড়া, এই যন্ত্রের ব্যাটারির ক্ষমতা থাকে ৩০ দিন। তার মধ্যে ১৪ দিন কেটে গিয়েছে। বাকি ১৬ দিনের মধ্যে কোনও ভাবে সেটিকে খুঁজে না বের করতে পারলে অনুসন্ধান অভিযান আরও কঠিন হয়ে পড়বে। সে কথা অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন মালয়েশিয়ার পরিবহণ মন্ত্রী হিশামুদ্দিন হুসেইনও। এ দিনও তিনি বলেন, ‘এটি দীর্ঘমেয়াদি অভিযান।’ অস্ট্রেলীয় প্রশাসন সূত্রেও একই দাবি করা হয়েছে। এ দিনের অভিযানে রেডারের তথ্যের উপর ভিত্তি না করে বিমানের জানলা থেকে খালি চোখেই বিস্তীর্ণ জলরাশির উপর নজরদারি চালিয়েছেন কর্মীরা। এ কাজ যে ভীষণ কঠিন, তা মেনে নিয়েছে অস্ট্রেলীয় প্রশাসন। আগামী দিনে এ কাজে অস্ট্রেলিয়াকে সাহায্য করতে যোগ দেবে চিন ও জাপান। ভারতও একটি পোসেইডন পি-৮১ নজরদারি বিমান এবং সি-১৩০ হারকিউলিস ট্রান্সপোর্টার পাঠাবে বলে ঘোষণা করেছে।
অন্য দিকে, আন্দামান সাগরে তল্লাশি অভিযানও ফের জোরদার হয়েছে। ভারত এই অভিযানেও সাহায্য করবে বলে জানিয়েছে। খোঁজ চলছে উত্তর করিডরেও।