ইউক্রেনের পেরেভালনেতে টহল রুশপন্থী সেনার। মঙ্গলবার। ছবি: এপি।
অন্য দেশের মাটিতে যুদ্ধক্ষেত্র প্রস্তুত করার মাঝেই এল দেশে ফিরে যাওয়ার ডাক। ক্রিমিয়া উপদ্বীপে ভিড় জমানো হাজার হাজার রুশ সেনাকে সেই বার্তাই দিয়েছেন দেশের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফলে ইউক্রেনে যুদ্ধের আশঙ্কা থেকে আপাতত হাঁফ ছেড়ে বাঁচল গোটা বিশ্ব। আর এ দিনই মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি তদারকি সরকারের সঙ্গে ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য কিয়েভে রওনা দিয়েছেন।
পুতিন সেনা ফেরানোর ডাক দিয়ে যুদ্ধের সম্ভাবনা ক্ষীণ করলেও এখনই আশ্বস্ত নয় আমেরিকা। মার্কিন প্রশাসনের এক শীর্ষ স্তরের অফিসার আজ জানিয়েছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে রাশিয়া।
পশ্চিমী দেশগুলির অর্থনৈতিক অবরোধ ও বয়কটের হুমকিতেই পুতিন সেনা ফিরিয়ে নিচ্ছেন কিনা, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। কিন্তু আজ ক্রিমিয়ার বেলবেক বিমানঘাঁটি থেকে শূন্যে গুলি ছোড়ে রাশিয়াপন্থী সেনা। এরাই আপাতত ওই বিমানঘাঁটি দখলে রেখেছে। তাতে আপত্তি জানিয়েছে ইউক্রেনের সেনারা। এমন তিনশো সেনা আজ বেলবেক বিমানঘাঁটিতে এসে রুশ সেনাদের সরাসরি বলেন, আমাদের কাজে ফিরতে দিন। তাঁদের হাতে কোনও অস্ত্র ছিল না। তাঁরা মিছিল করে আসেন বিমানঘাঁটিতে। মূলত এঁদের সতর্ক করতেই শূন্যে পর পর গুলি ছোড়ে রুশ সেনা। তাঁরা জানিয়ে দেন, বিমানঘাঁটির দিকে আর এগোলেই মরতে হবে। ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখলে রাখার প্রক্রিয়ায় এই প্রথম সেখানে গুলি ছুড়ল রুশ সেনা। অবশ্য এর পরে আর কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি সেখানে।
ইউক্রেন নিয়ে গত তিন-চার দিনে বিশ্ব জুড়ে আশঙ্কা ছড়ালেও এত দিন প্রায় চুপই ছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। আজ রুশ টিভি চ্যানেলে মুখ খুলেছেন তিনি। বলেছেন, পদচ্যুত প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচই তাঁকে চিঠি দিয়ে সাহায্য করার আবেদন জানিয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য, “ইউক্রেনের মানুষের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করছি না। যদি আমাদের সেনা তৎপরতা দেখাতে হয়, তা হবে শুধুমাত্র ইউক্রেনের মানুষকে রক্ষা করার জন্যই। তা ছাড়া রুশ সেনা কোনও অবস্থাতেই মহিলা ও শিশুদের উপরে গুলি চালাবে না।” সামরিক অভ্যুত্থানে ভিক্টর ইয়ানুকোভিচকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন পুতিন। যা একেবারেই অসাংবিধানিক। ইয়ানুকোভিচকেই এখনও দেশের বৈধ প্রেসিডেন্ট আখ্যা দিয়ে তিনি জানান, মে মাসে ইউক্রেনে যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে চলেছে তা তিনি মানবেন না। তাঁর দাবি, “ইউক্রেন শুধু আমাদের প্রতিবেশী নয়। ভাইয়ের মতো। রাশিয়া আর ইউক্রেনের সেনাও বন্ধুর মতো। ছোটখাট ঘটনা ছাড়া সেখানে গুলি ছোড়ার মতো কিছু হয়নি।” তবে রুশভাষী সেনা ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে রয়েছে এমন তথ্য স্বীকার করেননি রুশ প্রেসিডেন্ট। তাঁর বক্তব্য, ওই সেনা রাশিয়াপন্থী, নিজেদের রক্ষার জন্য এলাকা ঘিরে রেখেছে।
পশ্চিমী দেশগুলিকে বার্তা দিতেও পুতিনের এই ঘোষণা বলে মনে করছেন অনেকে। পুতিনের হুঁশিয়ারি: জি-এইট সদস্যপদ খোয়ানোর আশঙ্কা বা অর্থনৈতিক অবরোধের হুমকি দিয়ে রাশিয়াকে পর্যুদস্ত করা যাবে না। তাঁর মতে, ওটা আসলে দ্বিমুখী অস্ত্র। রাশিয়াকে চাপে ফেললে বাকিদেরও অর্থনৈতিক দিক থেকে ভুগতে হবে।