মরণ-ঘূর্ণিই ঘুম ভাঙিয়েছিল যাত্রীদের, দাবি নয়া তত্ত্বে

পাঁচ মিনিটের মরণ-ঘূর্ণি! আর তার পর সলিল-সমাধি। এমএইচ ৩৭০-র যাত্রীদের শেষ মুহূর্তের অভিজ্ঞতা ছিল এরকমই। অন্তত তেমনই বিশ্বাস ‘সিমুলেটর’ বিশেষজ্ঞ জিওফ্রে টমাসের। সম্প্রতি এই অভিজ্ঞ অস্ট্রেলীয় পাইলট একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৫৫
Share:

পাঁচ মিনিটের মরণ-ঘূর্ণি! আর তার পর সলিল-সমাধি।

Advertisement

এমএইচ ৩৭০-র যাত্রীদের শেষ মুহূর্তের অভিজ্ঞতা ছিল এরকমই। অন্তত তেমনই বিশ্বাস ‘সিমুলেটর’ বিশেষজ্ঞ জিওফ্রে টমাসের। সম্প্রতি এই অভিজ্ঞ অস্ট্রেলীয় পাইলট একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে বোয়িং ৭৭৭-এর সিমুলেটরে বসে রয়েছেন জিওফ্রে। এমএইচ ৩৭০-র ককপিটে যা যা হয়ে থাকতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান, সেই সমস্ত কিছুই ওই সিমুলেটর-এর ককপিটে করে দেখাচ্ছেন তিনি। আর তা থেকেই পরিষ্কার, মৃত্যুযন্ত্রণাকে খুব কাছ থেকে অনুভব করেছিলেন যাত্রীরা। ঘুমের মধ্যে পরম শান্তিতে নয়, বরং শেষের ওই পাঁচ মিনিট তাঁরা কাটিয়েছিলেন ভয়াবহ মৃত্যুর অপেক্ষায়। বিমানের দু’টি ইঞ্জিনই তখন বন্ধ। ২৩০০০ ফুট থেকে অবিশ্বাস্য গতিতে নীচে নেমে আসছে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর। সাংঘাতিক ঝাঁকুনি ও প্রবল ঘূর্ণি তখনই যাত্রীদের বুঝিয়ে দিয়েছিল, শেষ আসন্ন।

এ সবই অবশ্য জিওফ্রের বিশ্বাস। গত এক মাস ধরে মালয়েশীয় সরকার, সেনাবাহিনী আর উপগ্রহ চিত্র থেকে পাওয়া তথ্যগুলি জোগাড় করেছেন তিনি। সে সবের ভিত্তিতেই ‘সিমুলেটর’-এর ককপিটে এমএইচ ৩৭০-র শেষ মুহূর্তের ‘অ্যাকশন’ ফুটিয়ে তুলেছেন জিওফ্রে। তাঁর দৃঢ় সন্দেহ, ক্যাপ্টেন জাহারি আহমেদ শাহই উধাও-রহস্যের নেপথ্যে। সিমুলেটর-এর ভিডিওটি দেখার পর সে সন্দেহ জোরদার হচ্ছে অনেকের মনেই।

Advertisement

এই সিমুলেটর জিনিসটা ঠিক কী? সহজ ভাবে বলতে গেলে এটি আসলে মাটিতে দাঁড় করিয়ে রাখা বিমান। প্রধানত পাইলটদের প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের জন্যই এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিমানে যে সব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়, সিমুলেটরের ভিতরেও সে সবই থাকে। সিমুলেটর-এর ককপিট দেখতেও আসল বিমানের ককপিটের মতো। আকাশে ওড়ার সময়ে বিমানের ভিতরে যে কম্পন, শব্দ, অনুভূতি হয়, ঠিক একই রকম অভিজ্ঞতা হয় সিমুলেটরেও।

এ রকমই এক সিমুলেটরে এমএইচ ৩৭০-র শেষ মুহূর্তগুলি ফুটিয়ে তুলেছেন জিওফ্রে। তথ্য অনুযায়ী এমএইচ ৩৭০ এক বার ৪৫ হাজার ফুট উচ্চতায় উঠে গিয়েছিল, আবার ২৩ হাজার ফুটে নেমে এসেছিল। জিওফ্রেও সিমুলেটরের উচ্চতা সেই মতো পরিবর্তন করেছেন। বিমানটি যে ভাবে অভিমুখ ঘুরিয়েছিল ঠিক সে ভাবেই সিমুলেটরের মুখ ঘুরিয়েছেন তিনি। এক সময় বন্ধ করে দিয়েছেন সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা। কিন্তু সব কিছুর মধ্যে শেষের পাঁচ মিনিটের অভিজ্ঞতাই ভয়াবহ। জিওফ্রে দেখাচ্ছেন, বিমানের জ্বালানি তখন প্রায় শেষ। প্রথমে বাঁ দিকের ইঞ্জিন বন্ধ হল। তার মিনিট খানেক পর ডান দিকের ইঞ্জিন। ২৩০০০ ফুট উচ্চতা থেকে তখন মরণঝাঁপ দিচ্ছে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর। ককপিটে বেজে উঠছে একাধিক বিপদ্সঙ্কেত। থরথর করে কাঁপছে বিমান। এ দিকে যন্ত্র দেখাচ্ছে অতি দ্রুত নীচে নেমে আসছে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর। তার পর সটান ভারত মহাসাগরের গর্ভে।

সে সময়ে অবশ্য যাত্রীদের ঘুমিয়ে থাকার কথা। কিন্তু জিওফ্রের ধারণা, বিমানের ঝাঁকুনি আর ঘূর্ণি শুরু হতেই জেগে গিয়েছিলেন যাত্রীরা। হয়তো আসন থেকে ছিটকেও পড়ে গিয়েছিলেন অনেকে। কারণ রাতের দিকে পাইলট সতর্ক না করলে সচরাচর ‘সিটবেল্ট’ বেঁধে রাখেন না যাত্রীরা। সব মিলিয়ে যাত্রীদের মানসিক অবস্থার কথা ভেবেই কেঁপে উঠছেন অনেকে।

জিওফ্রের প্রশ্নটা অবশ্য অন্য। বোয়িং ৭৭৭-এর মতো বিমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত জোরদার। সে ক্ষেত্রে এমন দুর্ঘটনা প্রায় অসম্ভব। তবে পাইলট যদি গোটা বিষয়টির নেপথ্যে থাকেন সে ক্ষেত্রে এমনটা যে অপ্রত্যাশিত নয়, সেটাও পরোক্ষে মেনেছেন জিওফ্রে। অর্থাৎ ঘুরেফিরে সন্দেহের তির জাহারি আহমেদ শাহের দিকেই। তবে জাহারিকে সরিয়ে যাত্রী সেজে থাকা অন্য কোনও পারদর্শী পাইলটের পক্ষেও এই কুকীর্তি করা সম্ভব বলে মনে করছেন তিনি। সবটাই অবশ্য অনুমান। কিন্তু সেটাই কেড়ে নিল শেষ ভরসাটুকু। এত দিন ভাবা হচ্ছিল ঘুমন্ত অবস্থাতেই হয়তো মারা গিয়েছিলেন যাত্রীরা। কিন্তু জিওফ্রের ভিডিও উস্কে দিল এক ভয়ঙ্কর মৃত্যুর সম্ভাবনা। অপারগ যাত্রীরা যেখানে শুধুই মৃত্যুর অপেক্ষায়।

ব্ল্যাক বক্স নিয়ে প্রায় নিশ্চিত অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী টোনি

এমএইচ ৩৭০-র ব্ল্যাক বক্সের অবস্থান নিয়ে প্রত্যয়ী অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টোনি অ্যাবট। শুক্রবার তিনি বলেন, “আমরা ব্ল্যাক বক্স ফ্লাইট রেকর্ডারের অবস্থান সম্পর্কে প্রায় নিশ্চিত। কয়েক কিলোমিটার এলাকাও চিহ্নিত করেছি।” কিন্তু তিনি এ-ও জানান, ব্ল্যাক বক্সের আনুমানিক অবস্থান জানা আর সমুদ্রের গভীর থেকে বিমানের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে বের করে আনা দু’টো সম্পূর্ণ পৃথক বিষয়। তবে তাঁর মতে, শব্দসঙ্কেতের তীব্রতা কমতে থাকা আসলে ব্ল্যাক বক্সের ব্যাটারির আয়ু কমারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। তা সম্পূর্ণ শেষ হওয়া পর্যন্ত ব্ল্যাক বক্সের সঠিক অবস্থান বোঝার চেষ্টা চলবে। প্রসঙ্গত, গত কাল যে সঙ্কেতটি ধরা পড়েছিল তার সঙ্গে এমএইচ ৩৭০-র যোগ নেই বলেই ধারণা উদ্ধারকারী দলের প্রধান অ্যাঙ্গাস হিউস্টনের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement