মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় জঙ্গিশূন্য হবে দেশ! আগামী ছ’সপ্তাহের মধ্যে ধ্বংস হবে জঙ্গিগোষ্ঠী বোকো হারামের প্রত্যেকটি ঘাঁটি। সোমবার এ কথাই ঘোষণা করেছেন নাইজেরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সাম্বো দাসুকি।
তিনি জানান, ধর্মীয় মানচিত্র আঁকার নামে বোকো হারাম জঙ্গিরা দেশ জুড়ে যে ভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে বিঘ্নিত হচ্ছে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা। জঙ্গি নাশকতার প্রশ্নে দেশের সাধারণ নির্বাচন ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের দাবি, সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। নাইজেরিয়া এবং ক্যামেরুন, চাদ, বেনিন, নাইজেরের মতো পড়শি দেশগুলো যৌথ ভাবে সেনা অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া নিয়ে দেশ জুড়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে সরকারকে। প্রাথমিক ভাবে ভোটের তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার সময়ে প্রশাসনের তরফে দাবি করা হয়েছিল, নির্বাচন হলে সেনার পক্ষে দেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই নির্বাচন আধিকারিকদের কাছে ভোট পিছিয়ে দেওয়ার আর্জি জানানো হয়। যদিও দাসুকি পরে জানান, এই আবেদনের পিছনে রাজনৈতিক কারণ নেই। তাঁর পাল্টা দাবি, এই সিদ্ধান্তে সুবিধা হবে বিরোধী দল অল প্রোগ্রেসিভ কংগ্রেসেরই (এপিসি)। কারণ, সেনা নামিয়ে ভোট হলে উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়ার মতো এপিসির শক্ত ঘাঁটিতে মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবেন। যদিও প্রশাসনের এই দাবি খারিজ করে সময়ে ভোট করানোর পক্ষেই কথা বলেন এপিসি নেতারা।
এ দিকে, বোকো হারামকে ঠেকাতে সোমবার নাইজেরের পার্লামেন্টে একপ্রস্ত ভোটাভুটি হয়। নাইজেরিয়া এবং নাইজেরের সীমান্তবর্তী দিফা প্রদেশের একটি বাজারে ওই দিনই গাড়িবোমা বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। নিহত হন ১৫ জন। এই ঘটনার পর পার্লামেন্টে ভোটাভুটিতে সিদ্ধান্ত হয়, জঙ্গিবিরোধী লড়াইয়ে নাইজেরিয়াকে সমর্থন করবে নাইজের। দু’দেশের সীমান্তে সাড়ে সাতশো অতিরিক্ত সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্তও হয়েছে পার্লামেন্টে। গত সপ্তাহেই প্রথম নাইজেরে হামলা চালায় বোকো হারাম। পাশাপাশি, জানিয়ে দেয়, নাইজেরিয়ার মতোই ধর্মীয় সাম্রাজ্য গঠিত হবে সেখানেও।
নাইজেরের প্রেসিডেন্ট মাহমাদো ইসোফু প্রকাশ্যেই জানিয়ে দেন, বোকো হারামকে নিরস্ত করতে মাঠে নামবে দেশ। তিনি বলেন, “ওরা ধার্মিক নয়। কোনও ভাবে ধর্মকে সাহায্যও করছে না।” নাইজেরিয়ার ঘাঁটি থেকে পড়শি দেশে জঙ্গিদের ঢোকা থামাতে রাতারাতি কার্ফু জারি হয় দিফা প্রদেশে। সেখানে মোটরবাইক চালানোর উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। প্রশাসনের দাবি, মোটরবাইকে চেপে সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশেই বেশির ভাগ সময়ে জঙ্গিরা অনুপ্রবেশ করে। ক্যামেরুনেও ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে বোকো হারাম। নাইজেরিয়ার সরকারি আধিকারিকদের অবশ্য দাবি, পড়শি দেশের সঙ্গে যৌথ ভাবে জঙ্গিদমনে শুরু হলে পিছু হটতে বাধ্য হবে জঙ্গিরা।