অনুুপ্রবেশ। ভিটালিকে তখন সামলাতে ব্যস্ত নিরাপত্তারক্ষীরা।
রেড কার্পেটে দাঁড়িয়ে পোজ দিচ্ছেন দেশবিদেশের নায়ক-নায়িকারা। দুনিয়ার নানা প্রান্ত থেকে ভিড় জমিয়েছেন সাংবাদিকরাও। সুদৃশ্য পোশাক, নায়িকাদের লাস্যময়ী হাসি, চাপা উত্তেজনা আর ক্যামেরার ঝলকানিতে জমজমাট কান চলচ্চিত্র উৎসব।
ছন্দপতন ঘটল হঠাৎই। প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে নায়িকা আমেরিকা ফেরারা-র গাউনের তলায় ঢুকে পড়লেন এক ইউক্রেনীয় সাংবাদিক!
ভিটালি সেডিউক নামে ওই সাংবাদিক অবশ্য ‘রেড কার্পেটের জীবাণু’ বলেই কুখ্যাত। এ ধরনের কাণ্ড তিনি আগেও ঘটিয়েছেন। উইল স্মিথকে চুমু খেয়ে পাল্টা চড় খেয়েছেন, জড়িয়ে ধরেছিলেন অভিনেতা ব্র্যাডলি কুপারকে, অ্যাডেল গ্র্যামি নিতে মঞ্চে ওঠার সময় হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। তার পর এক রাত জেলেও কাটিয়েছেন। কিন্তু এত সব করেও ক্লান্ত হননি ভিটালি। জানান দিল তাঁর এ বারের ‘অভিযান’। তালিকায় সংযোজন হল ভিটালির আরও এক কীর্তি।
শুক্রবার কানের ‘দ্য প্যালেস দে ফেস্টিভ্যাল’-এ হলিউডের ছবি ‘হাউ টু ট্রেন ইউর ড্রাগন ২’-এর প্রিমিয়ার ছিল। সেই উপলক্ষে হাজির ছিলেন কেট ব্ল্যাঞ্চেট, আমেরিকা ফেরারা, কিট হ্যারিংটন ও আরও অনেকে। তাঁরা রেড কার্পেটে পা ফেলতেই চার পাশ থেকে ক্যামেরার ঝলকানি। সাংবাদিকদের অনুরোধেই সকলে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে পোজ দিচ্ছিলেন। ক্যামেরার লেন্সে হঠাৎই ধরা পড়ল আগন্তুকের আবির্ভাব।
কান চলচ্চিত্র উৎসবের সেই মুহূর্ত।
সবার নজর যখন অভিনেতাদের দিকে, নিরাপত্তার ঘেরাটোপ পেরিয়ে চুপিচুপি রেড কার্পেটে ঢুকে পড়লেন ভিটালি। প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে একেবারে দুই নায়িকার পিছনে। আর তার পর... সোজা ফেরারার সাদা গাউনের ভিতর মাথা গলিয়ে দিলেন।
নিরাপত্তারক্ষী থেকে সাংবাদিক, ঘটনার আকস্মিকতায় স্তম্ভিত ভিড়ের সব ক’টা মুখই। পলক পড়ছে না কারও। হুঁশ ফিরল মুহূর্তের ব্যবধানে। তখন “ধর ধর” রব। ছুটে এলেন রক্ষীরা। এক জন পা ধরে হিড়হিড় করে টানতে শুরু করলেন। আর এক জন চেপে ধরলেন হাতটা। ভিটালিও একরোখা। নড়বেন না এক চুলও। ডান হাত দিয়ে চেপে ধরলেন ফেরারার পা-টাই।
পরিস্থিতি বেসামাল দেখে ছুটে এলেন আরও ক’জন রক্ষী। মিনিট খানেকের ধস্তাধস্তির পর নিরস্ত করা গেল ইউক্রেনীয় সাংবাদিকটিকে। পা ধরে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে নিয়ে যাওয়া হল তাঁকে। ভিটালির মুখে কিন্তু হাসি তখনও অটুট। জয়ের হাসি! শেষ পর্যন্ত তিনি তো সফল।
কেন এমন করলেন? ভিটালির সঙ্গে কোনও ক্যামেরা ছিল না। সুতরাং বলাই যায়, বিতর্কিত কোনও ছবি তোলার উদ্দেশ্য ছিল না তাঁর। তবে? একাংশের মতে, বরাবরই খবরে আসতে ভালবাসেন ইউক্রেনীয় সাংবাদিকটি। তাই এ হেন কাণ্ড।
বছর দুই আগে ‘মেন ইন ব্ল্যাক ৩’-এর প্রিমিয়ারে উইল স্মিথকে চুমু খেয়ে বসেন ভিটালি। তা-ও একেবারে ঠোঁটে। তবে স্মিথও সঙ্গে সঙ্গে এক লাফ দেন। চুমুটা ঠিকমতো ঠোঁটে না লেগে পড়ে গালে। জবাব দিতে ছাড়েননি স্মিথ। বেমক্কা চড় কষান। পরে অবশ্য বলেন, “লোকটার ভাগ্য ভাল... ওঁর মুখেঘুঁষি মারিনি।”
গত বছর ‘স্কাই ফল’-এর জন্য অ্যাডেল গ্র্যামির মঞ্চে পুরস্কার নিতে উঠবেন, ভিটালি এক দৌড়ে তাঁকে টপকে মঞ্চে উঠে পড়লেন। ট্রফি হাতে তখন মঞ্চে দাঁড়িয়ে জেনিফার লোপেজ এবং পিটবুল। তাঁদের থেকে ট্রফিটি প্রায় ছিনিয়ে নিতে যাবেন ভিটালি, ছুটে এলেন রক্ষীরা। সেই রাত্তিরটা জেলেই কাটাতে হয়েছিল তাঁকে।
লক্ষ্যে পৌঁছতে এ বছর কোমর বেঁধে নেমেছেন ভিটালি। মে মাসের মধ্যেই খবরের শিরোনামে চলে এসেছেন তিন-তিন বার। জানুয়ারি মাসে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে হঠাৎই ব্র্যাডলি কুপারের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়েন। তার পর তাঁর কোমর জড়িয়ে জাপটে ধরেন। ব্র্যাডলির বুকে মুখ গুঁজে তৈরি করেন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। কোনও মতে তাঁকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে আত্মরক্ষা করেন ব্র্যাডলি। ফেব্রুয়ারিতে একই কাজ করেন লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও-র সঙ্গেও।
তিনি অবশ্য নিজেই খানিক লজ্জা পেয়ে হেসে ফেলেছিলেন। জল আর বেশি দূর গড়ায়নি।
এ বার হয়তো নিজের কর্মকাণ্ডে খানিক বৈচিত্র আনতে চেয়েছিলেন ভিটালি। তাই সোজা ঢুকে পড়েন অভিনেত্রীর গাউনের ভিতরে।
প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন ফেরারা। কেট ব্ল্যাঞ্চেটকে দেখা যায় বিধ্বস্ত নায়িকাকে শান্ত করছেন। কিন্তু এ বারের মতো ফাঁড়া কাটল। ভিটালির পরবর্তী লক্ষ্য কে? ফিল্ম দুনিয়ার নিন্দুকরা কিন্তু বলছেন, “নায়ক-নায়িকারা সাবধান!!! ভিটালি আসবে। চলচ্চিত্র উৎসবগুলো কিন্তু আর নিরাপদ নয়।”