জাহাজ ডুবছে দেখেও শতাধিক যাত্রীকে ফেলে তিনি উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে চলে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সমুদ্রে ডুবে যাওয়া সেই জাহাজের ক্যাপ্টেন লি জুন সিওককে আজ ভোরে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে ওই জাহাজের আরও দুই কর্মীও গ্রেফতার হয়েছেন। এই তিন জনের বিরুদ্ধেই গত কাল গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল পুলিশ। তবে ডুবে যাওয়া ওই জাহাজ থেকে কোনও যাত্রীর বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা প্রায় নেই বলেই আজ ইঙ্গিত দিয়েছে পুলিশ। তবে অত বড় জাহাজটি কী ভাবে ডুবে গেল, তার কোনও ব্যাখ্যা এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। যে সময় জাহাজটি ডোবে, তখন আবহাওয়া একেবারেই প্রতিকূল ছিল না বলে জানা গিয়েছে। তবে বেঁচে ফেরা বেশ কিছু যাত্রী জানিয়েছেন, হঠাৎই একটা বিকট আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন তাঁরা। তার পরেই জাহাজটি ডুবতে শুরু করে। সুতরাং মাঝ সমদ্রে বড় কোনও বস্তুর সঙ্গে ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা।
লি-র বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, মূলত তাঁর সিদ্ধান্তেই ওই ডুবন্ত জাহাজটি থেকে যাত্রীদের উদ্ধার করতে প্রায় ৪০ মিনিট দেরি হয়েছিল। তিনিই নাকি যাত্রীদের জাহাজের লাইফ বোটগুলি ব্যবহার করতে বারণ করেছিলেন। শুধু তা-ই নয়, যাত্রীদের পরিবারের লোকজনদের আরও অভিযোগ, যাত্রীদের উদ্ধার কাজ শুরু হওয়ার আগেই লি নিজে জাহাজ ছেড়ে উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে চলে আসেন। খোদ জাহাজের ক্যাপ্টেনের বিরুদ্ধে এত বড় অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসেছিল দক্ষিণ কোরীয় পুলিশ। তার পরই তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
তবে গ্রেফতার হওয়ার পরেও নিজের সিদ্ধান্তের সমর্থনে আজ বেশ কিছু যুক্তি দিয়েছেন লি। তাঁর বক্তব্য, অত ঠান্ডায় যাত্রীরা লাইফ বোট নিয়ে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারত। তখন কোনও উদ্ধারকারী নৌকা সমুদ্রে ছিল না। অত স্রোতের মধ্যে যাত্রীরা সমুদ্রে হারিয়ে যেতে পারতেন। এই সব কথা মাথায় রেখেই লি সব যাত্রীকে জাহাজে থাকারই নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন।
দক্ষিণ কোরীয় পুলিশ আবার এর মধ্যে জানিয়েছে, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা পেরিয়ে আজ প্রথম বারের জন্য ডুবে যাওয়া জাহাজটির ভিতরে ঢুকতে সফল হয়েছে উদ্ধারকারী দলটি। এখনও ওই জাহাজের ২৭৪ জন যাত্রী নিখোঁজ, যাদের মধ্যে বেশির ভাগই দানওন হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রী। তবে উদ্ধারকারী দলটি জানিয়েছে, জাহাজে ঢুকেই একের পর এক মৃতদেহ তাদের চোখে পড়েছে। ওই জাহাজ থেকে কারও বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
এর মধ্যেই গত কাল পুলিশ দানওন হাইস্কুলের ভাইস প্রিন্সিপ্যালের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেছে। মৃত কাঙ্গ মিন কিউ-ও ওই জাহাজের যাত্রী ছিলেন। ডুবন্ত জাহাজটি থেকে যাঁদের সবার আগে উদ্ধার করে আনা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। কাল সকালে জিন্দো দ্বীপের একটি জিমের কাছে গাছ থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ পাওয়া যায়। গত তিন দিন ধরে ওই চত্বরেই নিখোঁজ পড়ুয়াদের আত্মীয়রা শিবির করে বসে আছেন। কাঙ্গের স্কুলের বহু ছাত্রছাত্রীর এখনও কোনও খোঁজ নেই। পুলিশের ধারণা, সম্ভবত সেই অবসাদ থেকেই আত্মহত্যা করেছেন কাঙ্গ। তবে নিখোঁজ পড়ুয়াদের বাড়ির লোকজন হতাশা থেকে কোনও ভাবে স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপ্যালের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিলেন কি না, সেই সম্ভাবনাও এখন খতিয়ে দেখছে পুলিশ।