ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকাকে প্রত্যাঘাতের হুমকি কালই দিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আর আজই ফের ক্রিমিয়া উপদ্বীপে রুশপন্থী সেনা আগ্রাসনের অভিযোগ আনল ইউক্রেনের অন্তর্বর্তী সরকার। আঞ্চলিক রাজধানী সিমফেরোপোলে একটি সেনা দফতরের নিয়ন্ত্রণ নেয় প্রায় ১০০ জনের সশস্ত্র বাহিনী। তাঁরা নিজেদের ক্রিমিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য বলে দাবি করলেও গোটা ঘটনায় রাশিয়ার প্রত্যক্ষ ইন্ধন আছে বলে মনে করছে সদ্য নির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকার। তাদের দাবি, কৌশলগত ভাবে ক্রিমিয়া দখলের পথে আজ আরও এক ধাপ এগোল পুতিন সরকার।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকরা জানাচ্ছেন, আজ সকালের অভিযানের পর থেকেই গোটা এলাকা একদম চুপচাপ। ওই সেনা দফতরের গেটেই ঝুলছে রাশিয়ার পতাকা। সশস্ত্র বাহিনীর লোকজন মুখে কুলুপ এঁটেছেন। সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্নেরই কেউ উত্তর দিচ্ছেন না।
এক দিকে সিমফেরোপোলের সেনা দফতরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সশস্ত্র বাহিনী। অন্য দিকে, সেনাদের একটি বহুজাতিক দলকে ক্রিমিয়ার সীমান্তেই আজ আটকে দিয়েছেন রুশপন্থী সেনারা। ‘অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন’ নামে ওই ইউরোপীয় দলটি ক্রিমিয়ার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি জানতে এসেছিল। কিন্তু সীমান্তেই তাদের আটকাতে শূন্যে গুলি ছোড়ে রুশপন্থী সেনারা।
এ অবস্থায় ইউক্রেনের রাজনৈতিক সঙ্কট কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। ভূ-রাজনৈতিক কারণেই ইউক্রেনে এই পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। তবে সেই সঙ্গেই তাঁর দাবি, পশ্চিমী দেশগুলো যদি সততার সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসে, তা হলে রাশিয়াও তাতে অংশ নিতে রাজি।
ইউক্রেন আর ক্রিমিয়ার জটিল পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত রাষ্ট্রপুঞ্জও। ক্রিমিয়ায় যে গণভোটের সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাকে আজ উদ্বেগজনক বলে আখ্যা দিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। মহাসচিব বান কি মুন ইউক্রেন ও ক্রিমিয়ার নেতৃত্বকে মাথা ঠান্ডা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, কোনও এক পক্ষের ভুল সিদ্ধান্তের ফল গোটা বিশ্বকে ভুগতে হতে পারে। এমনিতেই ইউক্রেনে গত মাসে প্রচুর রক্তপাত হয়েছে। তার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সেটাই এখন সকলের মাথায় রাখা উচিত বলে জানিয়েছেন মুন।
এত দিন চুপ থাকার পর ইউক্রেনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ মুখ খুলেছে ভেনেজুয়ালা সরকার। নিজের দেশেই চাপের মুখে পড়ে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাডুরো আজ জানিয়েছেন, গদিচ্যুত ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ আসলে মার্কিন মদতপুষ্ট সেনা অভ্যুত্থানেরই শিকার।
আমরিকা অবশ্য ভেনেজুয়েলার এই অভিযোগ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে ইউক্রেনে রুশ সেনার উপস্থিতি নিয়ে আজ একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে পেন্টাগন। মার্কিন প্রশাসনের বক্তব্য, বর্তমানে প্রায় কুড়ি হাজার রুশ সেনা মোতায়েন রয়েছে ইউক্রেন আর ক্রিমিয়ায়। যদিও পড়শি দেশে রুশ সেনার উপস্থিতির খবর বরাবরই অস্বীকার করে আসছে মস্কো।