ইউক্রেনের মূল ভূখণ্ড থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করার যে ডাক গত কয়েক দিন ধরে রুশপন্থী বিক্ষোভকারীরা দিয়ে আসছিলেন, তাতে খুব একটা সাড়া দিচ্ছেন না ওই সব শহরের লোকজনই। আর যে উৎসাহ ও উদ্যমে পূর্ব ইউক্রেনের একের পর এক শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, তাতেও যেন খানিকটা ভাটা পড়েছে।
ক্রাইমিয়ার দেখাদেখি গণভোটের ডাক দিয়েছিল পূর্ব ইউক্রেনের ডনেৎস্ক শহর। সেখানেই নতুন গোলমালের সূত্রপাত। দিন কয়েক আগে সেখানকার একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনের দখল নিয়েছিল রুশপন্থীদের একটি দল। এখনও পর্যন্ত ওই ভবনটি বিক্ষোভকারীদের দখলেই রয়েছে। একই ভাবে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল খারকিভ আর লুহানস্ক শহরে। ওই সব শহরেও একের পর সরকারি দফতরের দখল নিয়েছিল রুশপন্থী বিক্ষোভকারীরা। সেই সব দফতরে টাঙিয়ে দেওয়া হয় রুশ পতাকাও।
কিন্তু ডনেৎস্কের ওই ভবন দখলকে সমর্থন করেননি স্থানীয় বাসিন্দাদেরই একাংশ। তাঁদের অনেকেই এখন ইউক্রেন থেকে আলাদাও হতে চাইছেন না। অতি সম্প্রতি করা একটি আঞ্চলিক জনসমীক্ষার ফল অনুযায়ী, মাত্র ২৬ শতাংশ ডনেৎস্কবাসী রুশপন্থীদের সে দিনের ওই অভিযান সমথর্র্ন করেছেন। ওই সমীক্ষাতেই জানা গিয়েছে, ইউক্রেন থেকে আলাদা হতে চান মাত্র চার শতাংশ বাসিন্দা। ফলে মে মাসে ইউক্রেনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ডনেৎস্ক শহরে যে গণভোটের ডাক দেওয়া হয়েছিল, তা আদৌ হবে কি না, সে নিয়েই এখন সংশয় রয়েছে।
এই অবস্থায় ডনেৎস্কে দখল করা সরকারি ভবনটি থেকে বিক্ষোভকারীরা বেরিয়ে আসতে চাইছেন। তাঁদের মতে, সরকারি কাজকর্ম শুরু করার জন্য ওই ভবনটি দখলমুক্ত করা প্রয়োজন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত কাল কিয়েভের অন্তর্বর্তী সরকার যে বিক্ষোভকারীদের প্রতি কড়া বার্তা দিয়েছে, তাতেই ভয় পেয়েছেন তাঁরা। রুশপন্থীদের সঙ্গে কোনও চুক্তি সইয়ের ক্ষেত্রে আসল সুযোগ বলেও মনে করছেন তাঁরা।
এই প্রথম ইউক্রেন সমস্যায় একটি বিষয়ে একমত হয়েছে আমেরিকা এবং রাশিয়া। গত কালই মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি এবং রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের দু’দফা ফোনে কথা হয়েছে। আর সেখানে দু’জনেই একমত হয়ে জানিয়েছেন, পূর্ব ইউক্রেনের সমস্যা মেটানোর ক্ষেত্রে কোনও ভাবেই বল প্রয়োগ করা হবে না। এই সপ্তাহের শেষের দিকেই এ নিয়ে চার দফা আলোচনার প্রথম দফা শুরু হওয়ার কথা। রাশিয়া, ইউক্রেন, আমেরিকা ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরও থাকার কথা সেই বৈঠকে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও ওই বৈঠকে সদর্থক ফল হবে বলেই আশা প্রকাশ করেছেন।