কলকাতার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার তথা গোয়েন্দাপ্রধান মুরলীধরকে বদলি করা হল ব্যারাকপুরের পুলিশ অ্যাকাডেমিতে। —ফাইল চিত্র।
আরজি কর-কাণ্ড থেকে বিতর্কের সূত্রপাত। প্রশ্ন উঠতে শুরু করে কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। তিন মাসের মধ্যেই কসবাকাণ্ড। কলকাতার বুকে শাসকদলের কাউন্সিলরকে গুলি করে খুনের চেষ্টা। আবারও প্রশ্নের মুখে পড়ে পুলিশের ভূমিকা। এই আবহে বুধবার কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধানের পদ থেকে সরানো হল মুরলীধরকে। কলকাতার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পদে ছিলেন তিনি। একই সঙ্গে গোয়েন্দাপ্রধানের দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে। বুধবার বিবৃতি জারি করে সেই মুরলীধরকে বদলি করা হয়েছে ব্যারাকপুরের পুলিশ অ্যাকাডেমিতে। ব্যারাকপুর পুলিশ অ্যাকাডেমির ডিরেক্টর প্রণব কুমারকে নিয়ে আসা হয়েছে কলকাতা পুলিশে মুরলীধরের জায়গায়।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে মহিলা চিকিৎসক-পড়ুয়াকে ধর্ষণ ও খুনের মামলার তদন্তভার প্রথমে কলকাতা পুলিশের হাতে ছিল। পুলিশি তদন্তের শুরু থেকে ঘটনা পরম্পরা এবং তদন্তের খুঁটিনাটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মুরলীধর। আরজি করের অকুস্থলেও তিনি গিয়েছেন একাধিক বার। নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে তাদের বাড়িতে গিয়েছেন। ওই ঘটনার মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতারের পর তৎকালীন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের সাংবাদিক বৈঠকেও তাঁকে কথা বলতে দেখা গিয়েছে একাধিক বার। এমনকি, ধর্ষক এবং খুনি যে এক জনই— এই দাবিও কলকাতা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তাদের মধ্যে তাঁর গলাতেই প্রথম শোনা গিয়েছিল। মুরলীধরের ওই দাবির পর থেকেই আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে আলোড়ন পড়ে যায়। ওই ঘটনায় দোষী এক জনই— এই তত্ত্ব মানতে রাজি ছিলেন না জুনিয়র ডাক্তারেরা। ওই ঘটনা কোনও এক জনের পক্ষে ঘটানো সম্ভব নয় বলে দাবি করতে থাকেন তাঁরা।
পরবর্তী সময়ে আরজি কর-কাণ্ডের তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। সিবিআই-তদন্তে আরজি করে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় অভিযুক্ত হিসাবে এক জনের নামই উঠে আসে। যাকে আগেই গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। এতে মুরলীধরের দাবি আরও মান্যতা পায়। তবে আন্দোলনকারীরা তৎকালীন পুলিশ কমিশনার-সহ একাধিক প্রশাসনিক আধিকারিকের অপসারণ চাইলেও কখনও মুরলীধরের অপসারণের দাবি তোলেননি।
আরজি করের আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হতে না-হতেই গত সপ্তাহে কসবায় গুলি করে খুনের চেষ্টা করা হয় তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষকে। তবে অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান কলকাতা পুরসভার ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। সুশান্তের বাড়ির সামনেই তাঁকে গুলি করার চেষ্টা করে আততায়ী। তবে পিস্তল কাজ না করায় খুনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ওই ঘটনার পর কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। কসবাকাণ্ডে ‘অসন্তুষ্ট’ ফিরহাদ বলেছিলেন, “দুষ্কৃতীদের আটকানো ফিরহাদ হাকিম, সুশান্ত ঘোষেদের কাজ নয়। এটা আটকানোর কথা পুলিশের।” ওই দিন কসবাকাণ্ডের জন্য গোয়েন্দা ব্যর্থতার দিকেই ফিরহাদ ইঙ্গিত করেছিলেন। যদিও সরাসরি পুলিশের কোনও বিভাগের কথা বলেননি মেয়র। ঘটনাচক্রে, এই আবহেই বুধবার কলকাতার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার তথা গোয়েন্দাপ্রধানকে বদলি করা হয় ব্যারাকপুর পুলিশ অ্যাকাডেমিতে। নবান্ন সূত্রে যদিও দাবি করা হয়েছে, এটি রুটিন বদলি।
বুধবার রদবদল সংক্রান্ত যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে মুরলীধর ছাড়া আরও কয়েক জনের বদলির কথা জানানো হয়েছে। হাওড়া (গ্রামীণ)-এর পুলিশ সুপার স্বাতী বাঙ্গালিয়াকে সাইবার শাখার পুলিশ সুপার করা হয়েছে। তাঁর জায়গায় হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (সেন্ট্রাল) সুবিমল পালকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। হাওড়ার ডিসি (দক্ষিণ) বিশ্বজিৎ মাহাতোকে সুবিমলের জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে। রাজ্য পুলিশের আইবি থেকে সুরিন্দর সিংহকে হাওড়ার ডিসি (দক্ষিণ) পদে বদলি করা হয়েছে।