ইন্টারনেটে ভিডিও প্রকাশ করে ফের দাদাগিরি বহাল রাখল ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইএসআইএস) জঙ্গি গোষ্ঠী। মধ্যযুগীয় বর্বরতার অজুহাত এ বার ধর্মীয় ও সামাজিক নীতিরক্ষা।
সমকামিতায় লিপ্ত থাকার ‘অপরাধে’ দুই যুবককে আকাশছোঁয়া এক বহুতল থেকে রাস্তায় জ্যান্ত ছুড়ে ফেলল জঙ্গিরা। প্রায় একই শাস্তি বরাদ্দ ডাকাতির অপরাধেও। তাই ইরাকের মসুল শহরের জনবহুল রাস্তার উপরেই খুঁটিতে বেঁধে মাথায় গুলি করে খতম করা হল অন্য দুই যুবককে। ‘নীতি-জঙ্গিদের’ হাত থেকে রেহাই নেই মহিলারও। যৌন অনাচারের অভিযোগে হাত-পা বেঁধে মাটির উপর ফেলে পাথর ছুড়েই মেরে ফেলা হল এক মহিলাকে। মহিলার পরনে কালো বোরখা। উপরে নীল রঙের ত্রিপল বিছানো। সম্প্রতি একসঙ্গেই এই তিনটি ভিডিও প্রকাশ করেছে জঙ্গিরা। প্রাথমিক ভাবে ধারণা, তিনটি ঘটনাই ইরাকের মসুল শহর ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার।
সাংবাদিক থেকে শুরু করে ত্রাণকর্মী, এমনকী সাধারণ পণবন্দিদের মুণ্ডচ্ছেদের ভিডিও গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকেই ইন্টারনেটে প্রকাশ করে আসছে আইএস। প্রকাশিত হয়েছে নাবালককে দিয়ে বন্দি-হত্যার ভিডিও-ও। তবে সাম্প্রতিক এই তিন ভিডিও নাড়িয়ে দিয়েছে সারা বিশ্বকেই।
শার্লি এবদোর দফতরে জঙ্গি হামলা ঘুম কেড়েছে প্যারিসের। পরবর্তী জঙ্গি হামলা থেকে বাঁচতে নিজেদের ঘর গোছাতে শুরু করেছে ইউরোপের একটা বড় অংশ। তাই এ রকম একটা সময়ে আইএসের তরফে এই নৃশংস তিন ভিডিও প্রকাশের অন্য তাৎপর্য আছে বলেও মনে করা হচ্ছে। প্যারিসে হামলার দায় স্বীকার করেছে ইয়েমেনের আল কায়দা জঙ্গি গোষ্ঠী। এই মুহূর্তে তাই আল কায়দা-ই সংবাদের শিরোনামে। অনুমান, আল কায়দা থেকে নিজেদের দিকে নজর ফেরাতেই সম্প্রতি এই ভিডিও ছড়িয়েছে আইএস গোষ্ঠী।
অন্য দিকে পেন্টাগন সূত্রের খবর, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই জঙ্গি দমনে সিরিয়া সেনাকে প্রশিক্ষণ দিতে আরও ৪০০ বিশেষ সেনা পাঠাচ্ছে মার্কিন সেনাবাহিনী। তাই নৃশংসতার এই তিন ভিডিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রতি জঙ্গিদের সতর্কবার্তা হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
বহুতল থেকে দুই যুবককে ছুড়ে ফেলার ভিডিওতে কালো মুখোশে ঢাকা দুই জঙ্গিকে দেখা গিয়েছে পিছন থেকে ধাক্কা দিতে। নীচে তখন জনতার ভিড়। উপর থেকে দেহ মাটিতে পড়তেই জনতা মুহূর্তে ছত্রখান। সেই নৃশংস ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছে জঙ্গিরা। শরিয়ত আইনে সমকামিতা অপরাধ। জঙ্গিদের দাবি, বহুতল থেকে ছুড়ে ফেলাই এর একমাত্র শাস্তি। শরিয়ত আদালতের সেই বিধান এক জঙ্গিনেতাকে জনসমক্ষে পড়তেও শোনা গিয়েছে। অবশ্য সমকামিতার এই শাস্তি এ বারই প্রথম নয়। গত ডিসেম্বরেও একই ঘটনা ঘটিয়েছিল জঙ্গিরা। প্রকাশিত হয়েছিল সেটিও।
ডাকাত অভিযোগে দুই যুবককে প্রকাশ্য রাস্তায় গুলি করে মারার ভিডিওতেও একই রকম বর্বরতার ছবি। শরিয়ত আইনে শাস্তি দিতেই হলুদ এবং সবুজ ফিতে দিয়ে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে আনা হয় ওই দু’জনকে। কালো কাপড়ে চোখ বাঁধা দু’জনেরই। আশপাশ ভিড়াক্কার সাধারণ জনতায়। সেনার পোশাকে বেশ কয়েক জন জঙ্গিকেও দেখা গিয়েছে। তবে ভিড়ের মধ্যে একটিও মহিলার মুখ দেখা যায়নি। প্রথম ভিডিওটির মতো এটিতেও গুলি করে মেরে ফেলার আগে কাগজে লেখা সাজা ঘোষণা করতে দেখা গিয়েছে এক জঙ্গিকে। অনুমান, বন্দুকবাজদের ঠিক পাশেই আপাদমস্তক কালো পোশাক এবং সাদা চুল-দাড়িতে যাকে দেখা গিয়েছে, সে আবু ওমর আল আনসারি। সম্প্রতি আইএসের অন্য একটি প্রচারমূলক ভিডিওতেও দেখা গিয়েছিল তাকে। মনে করা হচ্ছে, এই তিন কাণ্ডের সে-ই মূল হোতা।
যৌন অনাচারের অভিযোগে পাথর ছুড়ে এক মহিলাকে মেরে ফেলার যে তৃতীয় ভিডিওটি মিলেছে, তাতেও আল আনসারিকে দেখা গিয়েছে। তবে প্রকাশ্য রাস্তায় নয়, মনে করা হচ্ছে মূল শহর থেকে দূরে কোথাও নিয়ে গিয়ে এই কাণ্ড ঘটায় জঙ্গিরা। যন্ত্রণায় ছটফট করতে দেখা গিয়েছে ওই মহিলাকে। কালো বোরখা, লাল মোজা মাঝে মাঝে নজরে এসেছে তা-ও।