India-China Relationship

‘দুই দেশের মানুষের স্বার্থেই ড্রাগন-হাতির এক ছন্দে নাচা দরকার’! শুল্কযুদ্ধের আবহে দ্রৌপদীকে চিঠি জিনপিংয়ের

ভারত এবং চিনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ৭৫ বছরে পা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চিনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংও পরস্পরকে অভিন্দন জানিয়েছেন।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:৫৫
Share:
(বাঁ দিকে) রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

ভারত এবং চিনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ‘ড্রাগন-হাতি’- যৌথ নাচের মতোই হওয়া উচিত। ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিঠি লিখে এমনটাই জানালেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ৭৫ বছরে পা দিয়েছে। সেই উপলক্ষে ভারতকে অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন জিনপিং। আর তাতেই দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত করার বার্তা দিয়েছেন চিনের প্রেসিডেন্ট। আমেরিকার সঙ্গে শুল্কযুদ্ধ চলছে চিনের। ভারতীয় পণ্যের উপরেও শুল্ক চাপানো হতে পারে বলে জানিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। এই আবহে পূর্ব লাদাখে সংঘর্ষের স্মৃতিকে পিছনে ফেলে জিনপিংয়ের এই বার্তা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করা হচ্ছে। এর আগে চিনের বিদেশমন্ত্রী ইয়াং ই ভারতকে পাশে চেয়ে এই বার্তা দিয়েছিলেন। এ বার জিনপিংও কি সেই পথেই পা বাড়ালেন, উঠছে প্রশ্ন।

Advertisement

রাষ্ট্রপতি মুর্মুকে চিঠি লেখার বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে চিনের সরকারি সংবাদ সংস্থায়। সেখানে জানানো হয়েছে, ভারত এবং চিনের পরস্পরের সহযোগী হওয়ার বিষয়টি একেবারেই সঠিক। জিনপিং দ্রৌপদীকে লেখা চিঠিতে আরও জানিয়েছেন, ভবিষ্যতের কথা ভেবে দুই দেশের কৌশলগত দিক থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত। পারস্পরিক বিশ্বাস, সহাবস্থান গড়ে তুলতে হবে দু’জনকেই। দুই দেশকে বৃহত্তর গণতন্ত্রের কথাও প্রচার করতে হবে। জিনপিংয়ের কথায়, ‘‘ভারত-চিনের সম্পর্কের উন্নতি থেকে এটা স্পষ্ট যে, দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত একেবারেই সঠিক। দুই দেশ এবং তাদের নাগরিকদের জন্য ড্রাগন এবং হাতির এক ছন্দে নাচা প্রয়োজন।’’

জিনপিং চিঠি দিয়ে আরও জানিয়েছেন, দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫ বছর পূর্তিতে ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী তিনি। বিভিন্ন বিষয়ে দুই দেশের আদানপ্রদান আরও বৃদ্ধি করার বিষয়েও তিনি উৎসুক। ভারত-চিন সীমান্তে স্থিতি, শান্তি আনতে দুই দেশের কথাবার্তা, সংযোগ বৃদ্ধির বিষয়েও জোর দিয়েছেন তিনি। তিনি মনে করেন, সারা দুনিয়ায় শান্তি, সমৃদ্ধি ফেরাতে দুই দেশের আরও বেশি সক্রিয় হওয়া উচিত। জিনপিং চিঠিতে এ-ও জানিয়েছেন যে, ভারত এবং চিন, দুই দেশেই প্রাচীনকালে সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। সেই দুই দেশই এখন দ্রুত উন্নতির পথে হাঁটছে। চিনের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতি মুর্মুও দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উপর জোর দিয়েছেন। তাঁর প্রস্তাব, দুই দেশের সম্পর্কের যে উন্নতি হয়েছে, তা প্রচার করা হোক। সে ক্ষেত্রে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫ বছর পূর্তির আবহকে একটি ‘সুযোগ’ বলে ধরে নেওয়া হোক।

Advertisement

দুই দেশের রাষ্ট্রপতির পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চিনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংও পরস্পরকে এই আবহে অভিন্দন জানিয়েছেন। বেজিংয়ে এই কথা জানিয়েছেন চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গুয়ো জিয়াকুন।

এর আগে চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং আমেরিকার সঙ্গে শুল্কযুদ্ধের আবহে জানান, ক্ষমতার রাজনীতির বিরুদ্ধে ভারত এবং চিনকে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে। ভারত এবং চিনের শক্তির কথা বলতে গিয়ে ‘হাতি’ এবং ‘ড্রাগন’-এর উপমা ব্যবহার করেছিলেন চিনের বিদেশমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরেই চিনকে কড়া বার্তা দেন। চিনের পণ্যের উপর প্রথমে ১০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছিলেন তিনি। তার পর তা দ্বিগুণ করে দেন। বর্তমানে চিনের পণ্যে আমেরিকা ২০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক নেয়। এই আবহে ভারতকে চিনের এই বার্তা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করা হচ্ছে।

১৯৬২-র যুদ্ধ এবং ১৯৬৭-র সীমান্ত সংঘর্ষের পর প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) তুলনামূলক শান্ত ছিল। ২০১৭ সাল থেকে পরিস্থিতি আবার উত্তপ্ত হতে শুরু করে। সে বছর ডোকলামে টানা ৭৩ দিন দু’দেশের বাহিনী পরস্পরের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিল। পরে কূটনৈতিক পথে সমস্যার সমাধান হয়। এর পর ২০২০ সালে পূর্ব লাদাখের গালওয়ানে সংঘর্ষ হয় ভারতীয় সেনার সঙ্গে চিনের বাহিনী। তার পরে কূটনৈতিক এবং সামরিক স্তরে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে শান্তি ফিরেছে। এ বার ভারতকে আবার এক সঙ্গে পথচলার বার্তা দিল চিন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement