নিউ ইয়র্কে খোশ মেজাজে রাজ, শ্রাবন্তী, মিমি।
বছরভরই গ্ল্যামার চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ে নিউ ইয়র্কের এই জগদ্বিখ্যাত পাঁচতারা সমাবেশস্থলটার গা বেয়ে। মেগা ইভেন্টের ছড়াছড়ি। বেশির ভাগই আন্তর্জাতিক মানের। নিউ ইয়র্কের অনেক বাঘা নাগরিকও গাঁটগচ্চার কথাটা ভেবে ম্যাডিসন স্কোয়্যার গার্ডেন এড়িয়ে যেতে বাধ্য হন। এ হেন ম্যাডিসন স্কোয়্যার আপাতত বাঙালিদের কব্জায়। শুধু কব্জায় বললে কম বলা হবে। আমেরিকায় বঙ্গ সম্মেলনের যে আয়োজন এ বার নর্থ আমেরিকান বেঙ্গলি কনফারেন্স (এনএবিসি) করেছে, তার দৌলতে ম্যাডিসন স্কোয়্যারের গ্ল্যামার আরও বাড়ছে, নাকি ম্যাডিসনের দৌলতে বঙ্গ সম্মলনের মর্যাদা বাড়ছে, তর্কটা আপাতত তা নিয়েই চলতে পারে।
উত্তর আমেরিকার বাঙালিদের সংগঠন এনএবিসি সেই ১৯৮০ সাল থেকে বঙ্গ সম্মলনের আয়োজন করে আসছে। আন্তর্জাতিক বাঙালির কাছে অন্তত কয়েক দশক ধরে এই বঙ্গ সম্মেলন খুব বড় বাৎসরিক আকর্ষণ। কিন্তু বঙ্গ সম্মেলন ঘিরে নিউ ইয়র্কে এ বার যে আয়োজন হয়েছে, শেষ কবে বাঙালিদের কোনও ইভেন্ট আন্তর্জাতিক মঞ্চে এতটা আলো কেড়েছে, তা অনেকেই মনে করতে পারবেন না।
এনএবিসি-র বঙ্গ সম্মেলনের আয়োজন বছর বছর বাড়তেই থাকে, তা নিয়ে সংশয় নেই। এক সময় অনাবাসী বাঙালিরা নিজেদের খরচেই আয়োজন সেরে ফেলতেন। কিন্তু বঙ্গ সম্মেলনের প্রতি আমেরিকায় এবং আমেরিকার বাইরেও আকর্ষণটা এত দ্রুত বেড়েছে যে, আয়োজনের সঙ্গে আপোস করতে পারেন না আয়োজকরা। প্রতি বছর নতুন উচ্চতা ছোঁয় বঙ্গ সম্মেলন। পরের বছর তাকেও ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা থাকে। তাই এখন স্পনসর ছাড়া আয়োজন অসম্ভব। তবে প্রবাসে বাৎসরিক বাঙালিয়ানার এই আয়োজনের নামমাহাত্ম্য এমনই, যে মজবুত স্পনসর খুঁজে নিতে আর তেমন কাঠখড় পোড়াতে হয় না। আর এ বছর নিউ ইয়র্কে যে আয়োজন হয়েছে, তা এনএবিসির বঙ্গ সম্মলনকে একটু সম্পূর্ণ নতুন যুগে পৌঁছে দিচ্ছে। কারণ ম্যাডিসন স্কোয়্যার গার্ডেনে এ বার বঙ্গ সম্মলেন অন্যতম অঙ্গ হয়ে উঠেছে আইবিএফএ— ইন্টারন্যাশনাল বেঙ্গলি ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড। ফি বছর বিদেশের মাটিতে যে ভাবে অপরিমেয় জৌলুস ছড়িয়ে আসে বলিউডের আন্তর্জাতিক পুরস্কার মঞ্চ আইআইএফএ (আইফা), ঠিক সেই ধাঁচেই এ বার বাংলা ছবির জন্য আইবিএফএ। ম্যাডিসন স্কোয়্যার গার্ডেন থেকেই যাত্রা শুরু হচ্ছে আইবিএফএ-র। এর পর থেকে ফি বছর, বঙ্গ সম্মেলনের অঙ্গ হিসেবেই। ঘোষণা করে দিয়েছে আয়োজক এনএবিসি।
নিউ ইয়র্কে ইমন, সুদেষ্ণা, অপরাজিতারা।
শুক্র, শনি, রবি— তিন দিন চলবে সম্মেলন। গোটা আমেরিকার প্রায় সব বাঙালির ঠিকানা এখন নিউ ইয়র্ক— এ রকম বললেও খুব বাড়াবাড়ি হয় না। শুধু ম্যাডিসন স্কোয়্যার বা এয়ারপোর্টে যে বাঙালির দেখা পাচ্ছি, তা কিন্তু নয়। সমাগমের বাইরে নিউ ইয়র্কে একটু ইতিউতি ঘুরতে বেরিয়েও বেশ দেখতে পাচ্ছি, বাঙালির উপস্থিতি হঠাৎ বেড়ে গিয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম শহরটাতে। কেউ বস্টন থেকে, কেউ মায়ামি থেকে, কেউ হিউস্টন থেকে। কেউ মিসৌরি, কেউ লস অ্যাঞ্জেলেস, কেউ ক্যালিফোর্নিয়া। কেউ আবার নিউ ইয়র্কেরই বাসিন্দা। অন্তত তিনটি প্রজন্মের উপস্থিতি। সারা বছর সকলেই বাঙালিয়ানা থেকে অনেকটা দূরে। কারও কাছে বাঙালিয়ানা এখন নস্টালজিয়া। কারও কাছে তা জাতিসত্ত্বার অভ্যাস, কারও কাছে আবার নিজের ভাষা-সংস্কৃতি-শিকড়কে জানার, চেনার চেষ্টা। ধুতি-পাঞ্জাবি আর শাড়ির প্রতি ঝোঁক স্বাভাবিক ভাবেই বেশি। কলকাতার জমকালো জমায়েতে বরং বাঙালিয়ানা আজকাল এর চেয়ে অনেক কম।
টলিউডটাকে যেন তুলে আনা হয়েছে নিউ ইয়র্কে। ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছেন প্রসেজনিৎ, যিশু, পরমব্রত, শ্রাবন্তী, মিমি, আবির, রাজ চক্রবর্তীরা। বঙ্গ সম্মেলন শুরুর আগের সন্ধ্যাতেই পৌঁছে গিয়েছেন বেশিরভাগ। বৃহস্পতিবার প্রাক-সম্মিলনী সন্ধ্যাতেই তাই আসর জমজমাট নিউ ইয়র্কে। আলাপচারিতা, হাসিঠাট্টা, খোসগল্প— সব মিলিয়ে নিউ ইয়র্কে বাঙালিদের জমায়েত যেন মিনি কলকাতাই।
আরও পড়ুন: আমেরিকায় বঙ্গ সম্মেলনের সেকাল একাল
শুক্রবার সন্ধ্যায় সেই মাহেন্দ্রক্ষণ— বাংলা চলচ্চিত্রের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব। আইবিএফএ-র আয়োজনে গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিতে চাইছে এনএবিসি। বাঙালিয়ানার উদযাপনে এমন ঝকঝকে কর্পোরেট ব্যবস্থাপনা কমই দেখা যায়। তবে ব্যবস্থাপকরা যথেষ্ট আবহ-সচেতন। কর্পোরেটে চক্কোরে বাঙালির সহজাত আন্তরিকতা যাতে উধাও না হয় ম্যাডিসন স্কোয়্যার থেকে, সে বিষয়ে যথেষ্ট যত্নবান সকলেই। এনএবিসির কর্মকর্তা প্রবীর রায় জানালেন, আইবিএফএ এখন প্রাইম ফোকাস। যাত্রার শুরুতেই গোটা বিশ্বের নজর কাড়তে হবে। ম্যাডিসন স্কোয়্যার গার্ডেনকে বেছে নেওয়া সেই কারণেই।
ছবি: ফেসবুক ও টুইটার থেকে।