Bangladesh Situation

ঢাকার ‘দুর্বুদ্ধি’, সরব নয়াদিল্লি

গত অগস্টে হাসিনা সরকারের পতনের পরে বাংলাদেশে বেড়ে চলা ভারত-বিদ্বেষের দিক থেকে বিমস্টেক সম্মেলনের ফাঁকে তাইল্যান্ডে বৈঠকটি দু’পক্ষের জন্যই গুরত্বপূর্ণ ছিল। বস্তুত, এই বৈঠকের জন্য ঢাকা প্রথম থেকেই মুখিয়ে ছিল।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:০৩
Share:
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের। —ফাইল চিত্র।

বৈঠকের ২৪ ঘণ্টা পার হতে-না-হতেই সংঘাতের বাতাবরণ তৈরি হয়ে গেল। গত কাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ব্যাঙ্ককে একটি পার্শ্ববৈঠক হয় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের। তার পরেই আজ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম একটি ফেসবুক পোস্টে দাবি করেন, মোদী নাকি ইউনূসকে বলেছেন, “আপনার প্রতি ওঁর (শেখ হাসিনা) অমার্জিত ব্যবহার আমরা লক্ষ করেছি। কিন্তু আপনার প্রতি আমাদের সম্মান ও শ্রদ্ধা একই রয়েছে।” তাঁর আরও দাবি, হাসিনার প্রত্যর্পণের ব্যাপারে মোদী সরাসরি ‘না’ করেননি। রাতে নয়াদিল্লি সূত্র এ নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ইউনূসের প্রেস সচিবের এই বয়ান রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, দুর্বুদ্ধির পরিচায়ক। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের দার্ঢ্য এবং সদিচ্ছা নিয়েই প্রশ্ন উঠে যায়।

Advertisement

গত অগস্টে হাসিনা সরকারের পতনের পরে বাংলাদেশে বেড়ে চলা ভারত-বিদ্বেষের দিক থেকে বিমস্টেক সম্মেলনের ফাঁকে তাইল্যান্ডে বৈঠকটি দু’পক্ষের জন্যই গুরত্বপূর্ণ ছিল। বস্তুত, এই বৈঠকের জন্য ঢাকা প্রথম থেকেই মুখিয়ে ছিল। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের জন্য ইউনূসের নয়াদিল্লি সফরের প্রস্তাব বাতিলের পরে অন্তর্বর্তী সরকার চিন ও পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে পাল্টা চাপ তৈরির চেষ্টা চালিয়েছে। তার পরে দু’দেশের শীর্ষ স্তরের প্রথম বৈঠক ছিল এটিই। বৈঠকের পরে ঢাকা একটি দীর্ঘ বিবৃতি দিয়েছিল। হাসিনার প্রত্যর্পণের মতো নানা বিষয়ে কথা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছিল তাতে। এ বারে উদ্দেশ্যমতো সেই বয়ানে রং ও মাত্রা চড়ানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে, মনে করছে কূটনৈতিক মহল।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ বলেছিলেন, “এই বৈঠক নতুন আশার সঞ্চার করেছে।” কিন্তু রাতেই ছন্দপতন হয় শফিকুলের ফেসবুক পোস্টটি ঘিরে। নয়াদিল্লি সূত্রের তরফে বলা হয়, মোদী ২০১৪ সাল থেকে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে তা দু’দেশের মানুষ এবং সমাজের মধ্যে গভীর বন্ধুত্বের নিরিখে দেখার কথা বলেছেন ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে। বলা হয়েছে, ইউনূসের সঙ্গে আগের সরকারের সম্পর্কের বিষয়ে মোদীর নাম করে ভ্রান্ত মন্তব্য প্রচার করা হচ্ছে। যে কোনও গণতন্ত্রে ভোট যে মান্যতা দেয়, সেই বিষয়টিই স্মরণ করিয়ে মোদী বৈঠকে বার্তা দিয়েছেন, এই নিয়ে গড়িমসি প্রধান উপদেষ্টার সুনামই নষ্ট করবে। ইউনূসের তোলা নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে মোদী বলেছেন, এগুলি বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকেই আলোচনা করা ভাল।

Advertisement

বাংলাদেশে রাজনৈতিক হিংসা ও সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার পাশাপাশিই সে দেশের মানুষের প্রতি আন্তরিকতা যে অক্ষুণ্ণ রয়েছে, সেই বার্তা প্রথম থেকেই দিয়ে আসছে নয়াদিল্লি। জোর দেওয়া হচ্ছে নির্বাচন করে গণতান্ত্রিক ও বহুদলীয় সরকার দ্রুত গঠন করার বিষয়ে। বাংলাদেশেও ক্রমশ প্রশ্ন উঠছে অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন ভূ্মিকায়। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ায় কয়েক জন গ্রেফতার হয়েছিলেন। মোদী-ইউনূস বৈঠকের দিনই তার নিন্দা করে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, “জয় বাংলা কোনও দল, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্লোগান নয়। এটা স্বাধীনতার স্লোগান। যত দিন বাংলাদেশে থাকবে, তত দিন জয় বাংলা থাকবে।”

কূটনৈতিক সূত্রের দাবি, আগামী বছর গ্রীষ্মকালের আগে ভোট করানো সম্ভব নয় বলে পার্শ্ববৈঠকে ইউনূসের তরফে ইঙ্গিত মিলেছে। কূটনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, জামাতের রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে ওঠা, ক্রমশ বিএনপি দুর্বল হওয়া এবং আওয়ামী লীগ মুছে সাফ হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন করানো নিয়ে গড়িমসি চলতে পারে। ফলে হাসিনার সূত্রে ভারত-বিদ্বেষের যে ধুয়ো তোলা হয়েছে, তা ধরে রাখা এখন অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য
অত্যন্ত জরুরি। এবং তার জন্যই এই ধরনের নানা আখ্যানের অবতারণার প্রয়োজন হচ্ছে। বাস্তবে, হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে ভারত এখনও একটি কথাও বলেনি।

অবশ্য, ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পরে হাসিনার বিভিন্ন বিবৃতি কিছুটা অস্বস্তিতে রেখেছে নয়াদিল্লিকে। তবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে তিনি কিছু বললেনি। যা বলেছেন, নিজের দলের সমাজমাধ্যম অ্যাকাউন্ট থেকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement