কানসাসে নিহত ছেলে শ্রীনিবাসের শেষকৃত্যে বাবা। মঙ্গলবার হায়দরাবাদে। ছবি: রয়টার্স
তাঁর জমানায় এই প্রথম কোনও অভিবাসী খুন হলেন বর্ণবৈষম্যের শিকার হয়ে। অথচ গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে পাঁচ দিন সময় নিয়ে ফেলল ট্রাম্প প্রশাসন। এই প্রথম হোয়াইট হাউস একটি বিবৃতিতে জানাল, কানসাসে বর্ণবিদ্বেষের শিকার হয়ে ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারের মৃত্যু সরকারের পক্ষে যথেষ্ট অস্বস্তিকর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদিও বিষয়টি নিয়ে এখনও পর্যন্ত মুখ খোলেননি। তাঁর প্রতিনিধিই রুটিন মাফিক প্রেস বিবৃতিতে কানসাসের বাসিন্দা শ্রীনিবাস কুচিভোটলার মৃত্যু নিয়ে যা বলার বলেছেন। আর গোটা বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্পের এই নীরবতাকেই হাতিয়ার করেছে বিরোধী শিবির। ডেমোক্র্যাট নেত্রী হিলারি ক্লিন্টন টুইটারে বিঁধেছেন ট্রাম্পকে। বাদ যাননি আর এক ডেমোক্র্যাট নেতা বার্নি স্যান্ডার্সও।
এই অবস্থায় চার দিনের সফরে আজই আমেরিকায় পৌঁছচ্ছেন ভারতের বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর। এইচ ওয়ান-বি ভিসা নীতি তো বটেই, ভারতীয়দের প্রতি বাড়তে থাকা বর্ণবিদ্বেষ নিয়েও সরব হওয়ার কথা রয়েছে তাঁর।
হোয়াইট হাউসের প্রেসসচিব শন স্পাইসার বলেছেন, ‘‘দেশের প্রতিটি নাগরিকের নিজস্ব ধর্মাচরণের অধিকার রয়েছে। আমেরিকায় কেউ যেন তাঁর নিজের ধর্মপালনে ভয় না পান। আমাদের প্রেসিডেন্ট সেটাই আবার সবাইকে মনে করাতে চান। কানসাসে গুলি চালনার ঘটনা নিয়ে যা যা শোনা যাচ্ছে, তার প্রতিটি অংশই আমাদের কাছে সমান অস্বস্তিকর।’’ এই বার্তায় অবশ্য ভুলছেন না ডেমোক্র্যাটরা। হিলারি টুইট করেছেন, ‘‘যে ভাবে বর্ণ-বিদ্বেষের ঘটনা বাড়ছে, তাতে প্রেসিডেন্টের কী করা উচিত, তা কি আমরা বলে দেব! ওঁর নিজেরই তো উচিত বিষয়টি নিয়ে বার্তা দেওয়া।’’ ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি নিয়ে অনেক দিন ধরেই সমালোচনার ঝড় বইছে। শ্রীনিবাসের মৃত্যু তা আরও তীব্র করেছে। একটি প্রথম সারির মার্কিন দৈনিক নিজেদের সম্পাদকীয়তেও শ্রীনিবাসের মৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনে ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া সমালোচনা করেছে।
গত কাল থেকে শ্রীনিবাস হত্যায় ধৃত প্রাক্তন নৌসেনা সদস্য অ্যাডাম পিউরিনটনের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গোটাটাই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। প্রশাসন সূত্রে খবর, দোষ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ৫০ বছর কারাদণ্ড হতে পারে ৫১ বছরের অ্যাডামের।
আজ সকালেই হায়দরাবাদে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে শ্রীনিবাসের। কাল রাতেই এসি কফিনে বাড়ি পৌঁছেছিল তাঁর দেহ। মহাপ্রস্থানাম শ্মশানে ছেলের অন্ত্যেষ্টির যাবতীয় রীতি পালন করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শ্রীনিবাসের বাবা মধুসূদন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি। জানি যা হওয়ায় ছিল, হয়েছে। ওখানে বসবাসকারী বাকি ভারতীয়দের জীবনগুলো যাতে সুরক্ষিত থাকে, সেটুকু শুধু চাই।’’ শ্রীনিবাসের মা অবশ্য ট্রাম্প প্রশাসনের উপর যাবতীয় আস্থা হারিয়েছেন। পার্বতীদেবী জানিয়ে দিয়েছেন, ছোট ছেলে সাই কিরণকে আর কিছুতেই সে দেশে ফেরত পাঠাবেন না তিনি।