প্রতীকী ছবি।
ধনী দেশগুলো কোভিড টিকার বুস্টার ডোজ় দেওয়া শুরু করায় তীব্র নিন্দা করেছিল তারা। অবশেষে সেই একই পথে হেঁটে আজ ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ় দেওয়ার পরামর্শ দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। বার্ধক্য বা কোনও শারীরিক অসুস্থতায় দুর্বল ব্যক্তিদের এবং যাঁরা ইনঅ্যাকটিভেটেড ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তাঁদের আগে বুস্টার ডোজ় দেওয়ায় জোর দিয়েছে হু। উল্লেখযোগ্য, এই ইনভ্যাকটিভেটেড ভ্যাকসিনের মধ্যে রয়েছে ভারত বায়োটেকের তৈরি কোভ্যাক্সিনও।
করোনার ওমিক্রন স্ট্রেন আসার বহু আগেই একাধিক দেশ বুস্টার ডোজ় দেওয়া শুরু করে দিয়েছিল। মূলত প্রবীণ বা অসুস্থতায় দুর্বল ব্যক্তিদের আগে তৃতীয় ডোজ় নেওয়ায় অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে এ সব দেশে। এটি প্রথম শুরু করে ব্রিটেন ও ইজ়রায়েল। এ সময়ে দেশগুলির এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছিল হু। টিকার অসমবণ্টন নিয়েও অভিযোগ জানায় তারা। তাদের বক্তব্য ছিল, বিশ্বের একাংশ যখন টিকাহীন অবস্থায় রয়েছে, তখন ধনী দেশগুলো কেন তৃতীয় ডোজ় দেওয়া শুরু করছে। এ ঘটনার বেশ কয়েক মাস পরে এ বার হু-ও বুস্টার ডোজ়ের পরামর্শ দিল। হু-র ‘স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভাইজ়রি গ্রুপ অব এক্সপার্টস’ (সেজ)-এর বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। তবে তাদের বক্তব্য, যাঁরা শারীরিক ভাবে দুর্বল এবং যাঁরা ইনঅ্যাকটিভেটেড ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তাঁদের বুস্টার ডোজ় দেওয়া হোক। ইনঅ্যাকটিভেটেড ভ্যাকসিন হল, যেগুলি শরীরে সার্স-কোভ-২-র প্রবেশ ঘটলে তাকে নিষ্ক্রিয় করে বা হত্যা করে। চিনের ‘সিনোভ্যাক’, ‘সিনোফার্ম’ এবং ভারতের ‘ভারত বায়োটেক’ সংস্থার তৈরি টিকা হল এ ধরনের ভ্যাকসিন।
সেজ-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রবীণদের শরীরে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গিয়েছে। তাদের বক্তব্য, টিকার দ্বিতীয় ডোজ়টি নেওয়ার পরে ৬ মাস পর্যন্ত ভ্যাকসিন দারুণ ভাল কাজ করছে। কিন্তু তার পরই এর কর্মক্ষমতা কমছে। যেহেতু প্রবীণদের সবার আগে টিকাকরণ শুরু হয়েছে, তাই এখন দেখা যাচ্ছে তাঁদের শরীরে টিকার প্রভাব বেশ কম।
ওমিক্রন আতঙ্কে এখন সার্বিক ভাবেই দেশবাসীকে বুস্টার ডোজ় দেওয়া শুরু করেছে একাধিক দেশ। এই নিয়ে হু-র বক্তব্য, বুস্টার ডোজ় দেওয়ার পাশাপাশি দেশের প্রত্যেকের প্রথম ডোজ়টি নিশ্চিত করাও জরুরী।
প্রথম বিশ্বের একাধিক দেশে টিকাকরণের গতি বেশ শিথিল। ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে মোট টিকাকরণের হার ৫৫ শতাংশের নীচে। এর জন্যে অনেকাংশে দায়ী বাসিন্দাদের টিকা নিতে অনীহা। সম্প্রতি জার্মানি, ইটালি-সহ কিছু দেশ ঘোষণা করেছে, টিকা না নিলে গৃহবন্দি থাকতে হবে। পোলান্ডে স্বাস্থ্যকর্মী ও শিক্ষকদের টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক ঘোষণা করা হয়েছে। এক দিকে যখন, টিকা নেওয়ার জন্য বাসিন্দাদের একাংশকে জোর করতে হচ্ছে, অন্য অংশের বুস্টার (তৃতীয়) ডোজ় দেওয়া শুরু হয়েছে। এতে একটি অংশ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।