হোয়াইট হাউস। —ফাইল চিত্র।
আমেরিকার বল্টিমোরে ফ্রান্সিস স্কট কি সেতু ভেঙে পড়ার কাণ্ডে নিখোঁজ ছ’জন হয়তো আর বেঁচে নেই— প্রশাসনের আশঙ্কা এমনই। ইউএস কোস্ট গার্ড ও মেরিল্যান্ডের স্টেট পুলিশ অফিসারদের ধারণা, সেতু ভেঙে পড়ার পরে দীর্ঘ সময় কেটে গিয়েছে। জলের তাপমাত্রাও যথেষ্ট কম। এত তল্লাশির পরেও যখন ছ’জনের খোঁজ নেই, হয়তো তাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন। দেহ ভেসে গিয়েছে নদীর জলে বা সেতুর ভাঙা লোহালক্কড়ের টুকরোয় আটকে রয়েছে। নদীতে ভাঙা সেতুর অনেক অংশ থাকায় উদ্ধারকাজে যথেষ্ট বেগও পেতে হচ্ছে ডুবুরিদের।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত দেড়টা নাগাদ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফ্রান্সিস স্কট কি সেতুর পাইলনে ধাক্কা মারে পণ্যবাহী জাহাজ ‘দালি’। পাটকাঠির মতো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় সেতুটি। ধাক্কা মারার আগে কোস্ট গার্ড ও ব্রিজের নিয়ন্ত্রক পুলিশকে বিপদসঙ্কেত পাঠিয়েছিলেন জাহাজের ক্যাপ্টেন। ৩০০ মিটার দীর্ঘ এই জাহাজটি চালনা করছিলেন ২২ জন ভারতীয় নাবিক। অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে ‘মে ডে’ সতর্কবার্তা পাঠানোর জন্য জাহাজের ভারতীয় ক্যাপ্টেন ও কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। হোয়াইট হাউসে তিনি বলেন, ‘‘এই তৎপরতার জন্য অনেক প্রাণ বাঁচানো গিয়েছে।’’ মেরিল্যান্ডের গভর্নর ওয়েস মুর-ও এ দিন বলেন, ‘‘কেন দুর্ঘটনা, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। তবে এক কথায় স্বীকার করে নেওয়াই যায় যে, জাহাজের কর্মীদের তৎপরতা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। জাহাজে বিদ্যুৎ চলে যাওয়া মাত্রই তাঁরা সতর্কবার্তা পাঠিয়েছিলেন। এবং সেই সতর্কবার্তা পেয়েই সেতুতে ট্রাফিক চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল বল্টিমোর পুলিশ। আমেরিকায় ভারতীয় দূতাবাস এক্স হ্যান্ডলের পোস্টে নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারকে সমবেদনা জানিেয়ছে।
সেতুর সঙ্গে ধাক্কায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে জাহাজটির। তবে জাহাজের সব কর্মীকেই উদ্ধার করা গিয়েছে। ট্রাফিক বন্ধ করে দিলেও কয়েকটি গাড়ি ব্রিজের উপরে ছিল। তা ছাড়া, সেতুর উপরে একটি কংক্রিট ডেকের মেরামতির কাজ করছিলেন কয়েক জন শ্রমিক। ইউএস কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, মোট ২০ জন নদীতে পড়ে গিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১৪ জনকে উদ্ধার করা হলেও ছ’জন এখনও নিখোঁজ। পুলিশের আশঙ্কা, তাঁদের জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করার আর কোনও সুযোগ নেই। নিখোঁজ ছ’জনের মধ্যে দু’জনের পরিচয় জানা গিয়েছে। তাঁদের নাম মেনর ইয়াসির সুয়াজ়ো সান্দোভাল এবং মিগুয়েল লুনা। ইয়াসিরের দুই সন্তান রয়েছে, মিগুয়েলের তিন সন্তান।
এই সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনায় স্তম্ভিত বল্টিমোরের সাধারণ মানুষ। সমাজমাধ্যমের পোস্টগুলিতে রয়েছে তার রেশ। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ‘কন্সপিরেসি থিয়োরি’ বা চক্রান্তমূলক তত্ত্বের পোস্টও। অনেকেরই ধারণা, এই হামলার পিছনে রয়েছে নাশকতামূলক কার্যকলাপ। অনেকের দাবি, ইজ়রায়েলকে সমর্থন করছে আমেরিকা, তার প্রতিবাদে এই জাহাজ-হামলা। এর পাশাপাশি উঠে এসেছে সাইবার হামলার দাবিও। বলা হচ্ছে, এ ভাবে বিদ্যুৎ চলে যাওয়া এক মাত্র সাইবার হামলাতেই হতে পারে। অনেকের আবার দাবি, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল!
যদিও এই তত্ত্বগুলি সঠিক নয় বলেই দাবি হোয়াইট হাউস এবং বল্টিমোর প্রশাসনের। হোয়াইট হাউসের এক প্রতিনিধি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমরা পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রেখেছি। যাঁরা এখনও নিখোঁজ, তাঁদের পরিবারকে আমাদের বার্তা— আমরা এই কঠিন সময়ে আপনাদের পাশে আছি।’’ বল্টিমোরের পুলিশ কমিশনার রিচার্ড ওরলিও জানিয়েছেন, তদন্তে নাশকতার কোনও চিহ্ন মেলেনি।