ফুলে ঢাকা পাহাড়ি এলাকা ‘হাইল্যান্ডস’, চমৎকার হ্রদ, স্কচ হুইস্কি। স্কটল্যান্ড সম্পর্কে ধারণাটা অনেক সময়েই ঘোরে এই ছবিগুলিকে কেন্দ্র করে। ব্রিটেনগামী পর্যটকদের অনেকেই পা রাখতে চান স্কটল্যান্ডে। কিন্তু আপাতত রাজনৈতিক তরজায় সরগরম স্কটল্যান্ড। ১৯ সেপ্টেম্বর ভোট দেবেন স্কটল্যান্ডের মানুষ। স্থির হবে ব্রিটেনের অংশ হিসেবেই থাকবে স্কটল্যান্ড, নাকি স্বাধীন দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু হবে তার।
স্কট স্বাধীনতার আন্দোলনে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি। ১৯৯৯ সালে তৈরি হয় স্কটিশ পার্লামেন্ট। আপাতত সেই পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে স্কটল্যান্ডে সরকার গঠন করেছে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি। তাদের নেতা ও স্কট সরকারের প্রধান অ্যালেক্স স্যামন্ডের মতে, লন্ডন তথা ওয়েস্টমিনস্টার সরকারের অধীনে থাকার কোনও প্রয়োজনই নেই স্কটল্যান্ডের। স্বাধীন দেশ হিসেবে উন্নতির জন্য যথেষ্ট সম্পদ রয়েছে স্কটল্যান্ডের।
ভৌগোলিক ভাবে স্কটল্যান্ডের অন্তর্ভুক্ত উত্তর সাগরেই রয়েছে ব্রিটেনের খনিজ তেলের ৮৪ শতাংশ। ব্রিটেন ছেড়ে বেরিয়ে এলে এই ধরনের সম্পদের উপরে নির্ভর করেই স্কটল্যান্ড বহু দূর এগোতে পারে বলে দাবি স্যামন্ডদের। কিন্তু এ কথা মানতে রাজি নন ব্রিটেনের অংশ হিসেবে থাকার পক্ষপাতীরা। স্কট স্বাধীনতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে ব্রিটেনের লেবার পার্টি। অ্যালিস্টেয়ার ডার্লিংয়ের মতো লেবার নেতাদের মতে, উত্তর সাগরের তেল সম্পদ থেকে আয় ক্রমশই কমছে। ফলে ব্রিটেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ওই সম্পদের উপরে নির্ভর করা ঠিক হবে না।
প্রশ্ন রয়েছে অন্য বিষয় নিয়েও। যেমন স্কটল্যান্ডের মুদ্রা কী হবে? স্যামন্ডরা চান, চালু থাকুক পাউন্ডই। তাতে রাজি নয় লন্ডন। স্কটল্যান্ডে নয়া মুদ্রা ও কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক চালু হলে ব্রিটেন ও ইউরোপের বাণিজ্যিক পরিবেশে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। ব্রিটেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশ হতে গেলে নতুন ভাবে সদস্যপদের জন্য আবেদন জানাতে হবে স্কটল্যান্ডকে।
১৯ সেপ্টেম্বর গণভোটের মূল পর্ব অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে পোস্টাল ব্যালটের পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে। সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, এখন স্কটল্যান্ডের ৪৭ শতাংশ মানুষ স্বাধীনতার পক্ষে। বিষয়টি নিয়ে দোলাচলে স্কটল্যান্ডের প্রবাসী ভারতীয়রাও।
দু’দশক ধরে স্কটল্যান্ডের বাসিন্দা অধ্যাপিকা ও লেখিকা বাসবী ফ্রেজার। বাংলা ও স্কটল্যান্ডের সাংস্কৃতিক যোগের কথা বার বার ফুটে উঠেছে তাঁর লেখায়। বাসবীদেবী জানাচ্ছেন, স্কটল্যান্ডের প্রতি তাঁর আনুগত্যে কোনও ঘাটতি নেই। তবে ব্রিটিশ পাসপোর্ট বদলে স্কটিশ পাসপোর্ট হওয়া উচিত কি না তা নিয়ে এখনও মনস্থির করতে পারেননি তিনি। সংখ্যালঘুদের অধিকারের মতো বিষয়গুলি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে তাঁর।
মনের এমন অবস্থা আরও অনেকেরই। মন্দির, গুরুদ্বার, স্থানীয় স্তরের বৈঠকে চলছে বিতর্ক। তবে মনস্থিরও করে ফেলেছেন অনেকে। ৫৫ বছরের শিখ রাশপাল নোটের মতে, স্কটল্যান্ড স্বাধীন হলে কর্মসংস্থান-সহ নানা বিষয়ে আরও সমস্যায় পড়বেন এশীয় বংশোদ্ভূতরা।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে গোটা ব্রিটেন।