উষ্ণায়নের জেরে বাড়ছে অ্যান্টার্কটিকায় বরফ গলার হার।
শিয়রে শমন! চূড়ান্ত বিপর্যয়ের আর দেরি নেই। বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সাবধান করছেন বিজ্ঞানীরা। টনক নড়েনি কারও। পরীক্ষার ফল বেরোতে দেখা যাচ্ছে, সর্বনাশের থেকে মাত্র বারো বছর দূরে দাঁড়িয়ে আছে পৃথিবী!
সোমবার রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ’ (আইপিসিসি) একটি রিপোর্ট পেশ করে জানিয়েছে, উষ্ণায়নের জেরে পরিস্থিতি ক্রমশ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। ভারতের অবস্থাও শোচনীয়। রিপোর্ট বলছে, অদূর ভবিষ্যতেই মারণ তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হতে হবে এ দেশকে। ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গির মতো রোগ বাড়বে। গরমে আক্ষরিক অর্থেই ধুঁকবে মেগাসিটিগুলো। যার মধ্যে সবার আগে থাকছে কলকাতা!
রিপোর্টে প্রকাশ, গত দেড়শো বছরে কলকাতার গড় তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছে ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিল্লির তাপমাত্রার গড় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে মুম্বই ও চেন্নাই। পরিস্থিতিতে রাশ টানতে হলে বড়সড় বদল আনতে হবে জীবনযাপন থেকে শুরু করে কৃষি-শিল্প-শক্তিনীতিতে, বার্তা রাষ্ট্রপুঞ্জের বিজ্ঞানীদের। হাতে আছে মাত্র ১২টা বছর! না হলে ২০৩০ সালের মধ্যেই ভূপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা বেড়ে যাবে আরও ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাতে, ক্রান্তীয় অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রতলের উচ্চতা বাড়বে। যা ডেকে আনবে প্লাবন। বিপন্ন হবে বদ্বীপ এবং দ্বীপরাষ্ট্রগুলি। পরপর ঝড় আছড়ে পড়বে বিভিন্ন প্রান্তে।
আরও পড়ুন: অর্থনীতিতে পরিবেশ, প্রযুক্তির নোবেল-যোগ
২০১৫-য় প্যারিস চুক্তি সইয়ের আগে পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়া পর্যন্ত পৃথিবী নিরাপদ। কিন্তু আইপিসিসি-র রিপোর্টে জানানো হয়েছে, সামগ্রিক ভাবে ভূপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা এখনই গত ১৫০ বছরের তুলনায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। এবং তাতেই যা অবস্থা, সেটা সমুদ্রতল বিপদসীমা ছাড়ানোর জন্য যথেষ্ট। ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসেই বেঁধে রাখতে হবে। কিন্তু এখন কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা যে হারে বাড়ছে তাতে অদূর ভবিষ্যতেই তাপমাত্রা ৩-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে।
এখন তাপমাত্রার বৃদ্ধি যদি ১.৫ ডিগ্রিতে বেঁধে রাখতে হয়, তা হলে ২০৫০ সালের মধ্যে গোটা পৃথিবীকে ‘কার্বন নিরপেক্ষ’ হতে হবে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাইমেট রিসার্চ প্রোগ্রাম-এর প্রধান এবং আইপিসিসি রিপোর্টের মূল লেখক মাইলস অ্যালেন বললেন, ‘কার্বন নিরপেক্ষ’ হওয়া মানে প্রকৃতি থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ ও ত্যাগের মধ্যে একটা সমতা রাখা। সেটা অর্জন করতে হলে প্রতি বছর আনুমানিক ২ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি ডলার শক্তি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে হবে, যা কিনা বিশ্বের জিডিপি-র ২.৫ শতাংশ। গ্রিন হাউস গ্যাস তৈরি অবশ্যই কমাতে হবে। কমাতে হবে গ্যাজেটের ব্যবহার। সেই সঙ্গে জোর দিতে হবে ‘জিও-ইঞ্জিনিয়ারিং’য়ে।
কী সেই পদ্ধতি? বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শুষে নিয়ে তা থেকে জ্বালানি প্রস্তুত করা বা মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া। পদ্ধতিটি যদিও বেশ খরচসাপেক্ষ। ব্যাপক বৃক্ষরোপণও একটা উপায়। বাঁচাতে হবে জঙ্গল। জৈবজ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। আখ, গম, ভুট্টার মতো ‘বায়োফুয়েল’ চাষ বাড়ালে উপকার হবে। আইপিসিসি-র কো-চেয়ার এবং লন্ডনে ‘সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল পলিসি’র অধ্যাপক জিম স্কেয়া-র কথায়, ‘‘আমরা আমাদের কাজ করেছি। বাকিটা সরকারের দায়িত্ব।’’