বৃহস্পতিবার ভোট পাকিস্তানে। ছবি: রয়টার্স।
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আর্থিক সঙ্কটে ধ্বস্ত পাকিস্তান। ‘গোদের উপর বিষফোঁড়া’ ক্রমশ সন্ত্রাসবাদী হামলার বাড়বাড়ন্ত। এই জোড়া ‘কাঁটা’র আবহেই বৃহস্পতিবার সে দেশে হতে চলেছে সাধারণ নির্বাচন।
হলফিলে ভারতে নরেন্দ্র মোদী সরকার ‘এক দেশ এক ভোট’ কার্যকরে সক্রিয় হলেও ‘র্যাডক্লিফ লাইন’-এর ওপারে দীর্ঘ দিন ধরেই চালু রয়েছে সেই ব্যবস্থা। পাকিস্তান পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির পাশাপাশি বৃহস্পতিবার পাক পঞ্জাব, সিন্ধ, খাইবার-পাখতুনখোয়া এবং বালুচিস্তানে প্রাদেশিক আইনসভার ভোটগ্রহণও হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণের পরেই শুরু হবে গণনা।
এ বারের নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএলএন) এবং প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী বিলাবল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)-র মধ্যে। রয়েছে কট্টরপন্থী জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম দলও। তবে ২০১৮-র নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর স্বীকৃতি পাক নির্বাচন কমিশন বাতিল করায় তারা সরাসরি ভোটের ময়দানে নেই। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা বিশ্বকাপজয়ী পাক ক্রিকেট অধিনায়কের দলের অনেক নেতা ‘নির্দল’ হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে দু’টি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ইমরান এখন জেলবন্দি।
পাক ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে এখন মোট আসন ৩৩৬। কিন্তু তার মধ্যে ভোট হয় ২৬৬টি আসনে। বাকি ৭০টি আসন মহিলা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। এর মধ্যে মহিলাদের জন্য ৬০ এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য ১০টি আসন। পাক সংবিধান অনুযায়ী সরাসরি ভোটে যে দল যে সংখ্যক আসনে জয় পাবে, সেই অনুপাতে ওই সংরক্ষিত আসনগুলিতে প্রতিনিধি ঠিক করে দলগুলি। যদিও এই সংরক্ষিত আসনগুলির উপর সরকার গঠন নির্ভর করে না। সেই হিসাব হবে সংরক্ষিত বাদ দিয়ে ২৬৬টি আসনের মধ্যে। সেই অর্থে ১৩৪টি আসন জিতলেই পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ‘জাদু সংখ্যা’ ছোঁয়া সম্ভব হবে। এ বার মোট ১৬৭টি নথিভুক্ত রাজনৈতিক দল পাক নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।
প্রদেশওয়াড়ি হিসাবে পাক পঞ্জাবে ১৪১, সিন্ধে ৬১, খাইবার-পাখতুনখোয়ায় ৪৫, বালুচিস্তানে ৪৫ এবং রাজধানী ইসলামাবাদে তিনটি ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির আসন রয়েছে। মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৫,১২১। ৯০ হাজার ৬৭৫টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ভোটদাতা ১২ কোটি ৭৪ লক্ষেরও বেশি। ভারতর মতোই পাকিস্তানেও ১৮ বছর বয়স হলেই ভোটদানের অধিকার মেলে। ২০১৮ সালের ভোটে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির আসন সংখ্যা ছিল ৩৪২। এর মধ্যে ২৭২টিতে সরাসরি ভোট হয়েছিল। তার মধ্যে পিটিআই ১১৬, পিএমএলএন ৬৪, পিপিপি ৪৩ এবং নির্দল ও অন্য দলগুলির প্রার্থীরা ৪৯টি আসনে জয়ী হয়েছিলেন।
ঘটনাচক্রে, জন্মসূত্রে ইসলামি রাষ্ট্র পাকিস্তানে ৯৭ শতাংশ ভোটার মুসলিম হলেও ধর্মীয় দলগুলি কোনও দিনই খুব একটা জনসমর্থন পায়নি ভোটে। পাকিস্তান ভাগের আগে ১৯৭০-এ জামাত-ই-ইসলামি পশ্চিম পাকিস্তানে জ়ুলফিকার আলি ভুট্টোর পিপিপি এবং পূর্ব পাকিস্তানে মুজিবর রহমানের আওয়ামি লিগের বিরুদ্ধে প্রচুর প্রার্থী দিয়েছিল। কিন্তু হাতে গোনা কয়েকটি আসনে জিততে পেরেছিল। ২০১৮ সালে মুত্তাহিদা মজলিস-এ-আমল গোটা দেশে প্রচুর প্রার্থী দিয়েছিল। কিন্তু জিতেছিল মাত্র ১২টিতে। এ বার কট্টরপন্থী নেতা ফজল উর রহমান একাধিক ছোট দলকে সঙ্গে নিয়ে জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম ‘পতাকা’য় ভোটে লড়তে নেমেছেন। ভোটের লড়াইয়ে রয়েছে ২৬/১১ মুম্বই সন্ত্রাসের মূল চক্রী হাফিজ় সইদের সংগঠন জামাত উদ-দাওয়ার রাজনৈতিক শাখাও। এ কারণেই প্রতিবেশী দেশে ২৫ জুলাইয়ের ভোটের দিকে সতর্ক নজর রাখছে ভারতও।
মাঝপথে অঘটন কিছু না হলে, ৭৬ বছরের ইতিহাসে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত কোনও সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে নতুন কোনও নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসবে পাকিস্তানে। যদিও ভোটের আগেই সে দেশে শুরু হয়েছে ধারাবাহিক জঙ্গিহানা। বুধবার বালুচিস্তানের পিশিন জেলায় জোড়া বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। তার আগে সোমবার ভোরে সোমবার ভোরে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের ডেরা ইসমাইল খান জেলার চৌধওয়ান পুলিশ থানায় ঢুকে ১০ পুলিশকর্মীকে খুন করে সন্দেহভাজন তেহরিক-ই-তালিবান বিদ্রোহীরা।