ডোনাল্ড ট্রাম্প।—ছবি এএফপি।
পিছু হটল ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। জানিয়ে দিল, এফ-১ এবং এম-১ ভিসা নিয়ে আমেরিকায় রয়েছেন যে সব বিদেশি পডুয়া, তাঁরা যদি বর্তমান এই কোভিড পরিস্থিতিতে পুরোপুরি অনলাইনে পড়াশোনা করেন, তা হলেও আপাতত তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে না।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা, প্রাদেশিক সরকার থেকে দলীয় নেতারা, সব পক্ষ থেকে চাপ আসার পরে দিন কয়েক আগেই নেওয়া সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হল ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। এফ-১ ও এম-১ ভিসা নিয়ে আমেরিকায় রয়েছেন যে সব বিদেশি পডুয়া, শুধু অনলাইনে কোর্স করলে তাঁদের ভিসা খারিজ করে দেশে ফিরিয়ে দেওয়া হবে, সেই নির্দেশিকা প্রত্যাহার করে নিল মার্কিন অভিবাসন ও শুল্ক দফতর। ফলে আপাতত কিছুটা স্বস্তিতে বিদেশি পড়ুয়ারা, যাঁদের মধ্যে বিশাল সংখ্যক ভারতীয় পড়ুয়াও রয়েছেন। তবে আগামী অগস্ট-সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া ফল সিমেস্টারে ভর্তি হয়ে আমেরিকায় আসার জন্য অপেক্ষা করছেন যে সব বিদেশি পডুয়া, তাঁদের ভিসা দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
গত ৬ জুলাই মার্কিন অভিবাসন ও শুল্ক দফতর হঠাৎ এক নির্দেশিকা জারি করে জানায়, যে সব বিদেশি পড়ুয়া এফ-১ কিংবা এম-১ ভিসা নিয়ে আমেরিকায় রয়েছেন, তাঁরা যদি শুধু অনলাইনেই ক্লাস করেন, তা হলে তাঁদের আমেরিকায় থাকার কোনও প্রয়োজন নেই। তাঁদের দেশে ফিরে যেতে হবে। এর কয়েক দিন আগেই এইচ১বি-সহ বেশ কয়েকটি ভিসা নিয়ে নানা ধরনের কড়া নির্দেশিকা জারি করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যার ফলে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন অসংখ্য অভিবাসী এবং তাঁরা মূলত যেখানে কাজ করেন সেই সব তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। কিন্তু পিছু হটেননি ট্রাম্প। উল্টে পড়ুয়া ভিসাধারীদের ফেরত পাঠানোর নির্দেশিকা জারি করে তাঁর প্রশাসন।
আরও পড়ুন: অগ্রাধিকার মেধার, নতুন অভিবাসন আইনে সই শীঘ্রই, জানালেন ট্রাম্প
মার্কিন অভিবাসন ও শুল্ক দফতরের জারি করা সেই নির্দেশিকার বিরুদ্ধে প্রথমেই মামলা করেছিল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)। তাদের যুক্তি ছিল, করোনা আবহে নিরাপদে থাকার জন্য অনলাইনে পঠনপাঠন চালিয়ে নিয়ে যাওয়া খুবই জরুরি। তা ছাড়া, তাদের বহু পড়ুয়া আসেন বিদেশ থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোটা ফি দেন তাঁরা। তাঁদের যদি ভিসা খারিজ করে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়, বড় আর্থিক ক্ষতি হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিরই। একই যুক্তি দেখিয়ে ম্যাসাচুসেটস প্রাদেশিক আদালতে করা ওই মামলায় যোগ দেয় ক্যালিফর্নিয়া প্রদেশও। সেখানে বহু বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তার পরে সোমবার মার্কিন শুল্ক ও অভিবাসন দফতরের বিরুদ্ধে করা এই মামলায় যোগ দেয় গুগল, মাইক্রোসফ্ট ও ফেসবুকের মতো বিভিন্ন মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। তাদের যুক্তি ছিল, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পড়ুয়ারা এই সব সংস্থায় প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করে দেন। এই ‘ইন্টার্নরা’ সংস্থাগুলির গুরুত্বপূর্ণ কর্মী। তাঁদের দেশে পাঠিয়ে দিলে মুশকিলে পড়বে মার্কিন সংস্থাগুলিই।
আরও পড়ুন: সৎছেলেকে বিয়ে করলেন রাশিয়ার এক সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার, ভাইরাল সেই বিয়ের ভিডিয়ো
মঙ্গলবার ম্যাসাচুসেটস প্রাদেশিক আদালতে বিচারক অ্যালিসন বরোজ় ঘোষণা করেন, অভিবাসন ও শুল্ক দফতর তাদের নির্দেশিকা আপাতত প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। আদালতের এই ঘোষণার পরে এমআইটি-র প্রেসিডেন্ট রাফায়েল রিফের মন্তব্য, ‘‘সরকার যে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করেছে, তা খুবই স্বস্তির বিষয়। এই ধরনের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত যে কী ভাবে সাধারণ মানুষের ক্ষতি করতে পারে, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল এই নির্দেশিকায়।’’