ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি।
কলম্বিয়ায় মাঝ সমুদ্র থেকে দু’বছর নিখোঁজ থাকা এক মহিলাকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করা হল। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। শনিবার তাঁকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে একটি মাঝ ধরার নৌকা। সেই উদ্ধারের ভিডিয়ো এবং ওই মহিলার কাহিনি এখন সোশ্যল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে পোস্ট হওয়া ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, মাছ ধরার নৌকা থেকে সেটি রেকর্ড করা হয়েছে। প্রথমে জলে কিছু একটা ভাসতে দেখা যায়। সেটা ঠিক কী, প্রথমে বোঝা সম্ভব হচ্ছিল না। হঠাৎই সেটি থেকে একটি মানুষের হাত উপরে উঠতে দেখা যায়। তখনই বোঝা যায়, একটি জীবন্ত মানুষ ভাসছেন। সঙ্গে সঙ্গে নৌকা তাঁর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়া। দেখা যায়, তিনি একটি কমলা রঙের ফ্লোটিং রিং আঁকড়ে ভেসে রয়েছেন এক মহিলা। তাঁকে বোটে তুলে আনতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। উদ্ধারকারীরা তাঁকে জল খাওয়ান, শুশ্রুষা করেন।
ওই মহিলাকে সমুদ্রের তীর থেকে প্রায় দু’ কিলোমিটার দূরে উদ্ধার করা হয়। প্রথমে তাঁকে সৈকতে নিয়ে আসার পরে স্থানীয়রা তাঁর প্রাথমিক সেবা শুশ্রুষা করেন। পরে তাঁকে একটি গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমে পরিচয় জানা না গেলেও পরে ওই মহিলার নাম ঠিকানা প্রকাশ্যে আসে।
মহিলার নাম অ্যাঞ্জেলিকা গাইটান, বয়স বছর ৪৬। তিনি জানিয়েছেন, প্রাক্তন স্বামীর অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে তিনি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ঘর ছেড়ে পালিয়ে যান। তিনি বিয়ের পর থেকেই প্রায় ২০ বছর ধরে এই অত্যাচার সহ্য করছেন। প্রথম বার তিনি যখন সন্তান সম্ভবা ছিলেন, তখন তাঁর উপরে অত্যাচার যেন আরও বেড়ে যায়। দ্বিতীয়বার সন্তান সম্ভবা হওয়ার পরও তা চলতে থাকে। তখন ঘর ছেড়ে পালাতে পারেননি কারণ, দুই মেয়েরই বয়স ছিল কম।
অ্যাঞ্জেলিকার দাবি, স্বামীর অত্যাচার নিয়ে বার বার পুলিশে অভিযোগ করেও কোনও লাভ হয়নি। প্রতিবার পুলিশ অ্যাঞ্জেলিকার স্বামীকে ধরে নিয়ে যেত আর ২৪ ঘণ্টা পর তাঁকে ছেড়ে দিত। তার পর আবার সেই একই কাহিনি, অ্যাঞ্জেলিকার উপর অত্যাচার শুরু হয়ে যেত। শেষে একদিন তাঁর স্বামী অ্যাঞ্জেলিকার মুখ প্রায় ভেঙে দেয়, এমন কী তাঁকে খুনেরও চেষ্টা করেন। এই অত্যাচার সহ্য না করে শেষে তিনি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন।
প্রথমে মাস ছয়েক অ্যাঞ্জেলিকা এক রকম আশ্রয়হীন ভাবে ঘুরে বেড়ান। পরে একটি রেসকিউ সেন্টারে তিনি জায়গা পান। পরে পুলিশ তাঁকে বলে, তাঁর প্রাক্তন স্বামী অন্য শহরে চলে গিয়েছে, তাই তাঁর আর এই রেসকিউ সেন্টারে থাকার দরকার নেই। ফলে ফের আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন অ্যাঞ্জেলিকা। এর পর হতাশায় ডুবে যেতে থাকেন। অ্যাঞ্জেলিকা জানিয়েছেন, তিনি আর তাঁর এই জীবন রাখতে চান না। কোথাও কোনও আশ্রয়, সাহায্য না পেয়ে তিনি আত্মহত্যা করার জন্য সমুদ্রে ঝাঁপ দেন। তার পর তাঁর আর কিছুই মনে নেই। অবশেষে মাছ ধরার বোটটি তাঁকে উদ্ধার করে। জলে অচৈতন্য অবস্থায় তিনি প্রায় আট ঘণ্টা ভাসছিলেন বলে জানা গিয়েছে। উদ্ধার হওয়ার পর অ্যাঞ্জেলিকা বলেন, “ভবগান মনে হয় আমার মৃত্যু চান না, তাই আবার জীবন ফিরিয়ে দিলেন।”
আরও পড়ুন: গায়ে হলুদে সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং, মাথা খাটালে সবই সম্ভব
আরও পড়ুন: শুভক্ষণে দুর্ঘটনা, চুম্বন মুহূর্তে প্রেমিকার পা মুখে লেগে নদীতে যুবক
অ্যাঞ্জেলিকার উদ্ধার হওয়ার ও তার পরবর্তি সময়ের বেশ কয়েকটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।