—প্রতীকী ছবি।
‘সিভিডি এইচএনটিআর’। মার্সিডিজ় ৫৫০-এর লাইসেন্স প্লেটে এটাই লেখা। গাড়ির মালিককেও লোকে ওই নামেই ডাকছেন— ‘কোভিড হান্টার’। হিউস্টনের ইউনাইটেড মেমোরিয়াল মেডিক্যাল সেন্টারের ৫৮ বছর বয়সি চিকিৎসক ব্যারন গত ২৬৭ দিনে কোনও ছুটি নেননি। হাসপাতালের কোভিড ইউনিট-ই এখন তাঁর অস্থায়ী ঠিকানা। একটানা প্রায় ন’মাস ধরে করোনা-রোগীদের শুশ্রূষা করে চলেছেন তিনি।
শুধু ব্যারন নন, আমেরিকার চিকিৎসক-নার্সদের অবস্থা এ রকমই। আইসিইউয়ের শয্যা ফাঁকা নেই, হাসপাতালে উপচে পড়ছে রোগীর ভিড়। আর দীর্ঘদিন ধরে এ সব সামলাতে গিয়ে ‘রণক্লান্ত’ স্বাস্থ্যকর্মীরা। ব্যারনের কথায়, ‘‘এটা অনেকটা যুদ্ধ-পরিস্থিতি। কখন কোথায় কী ভাবে বোমা পড়বে, আমরা জানি না। যতটুকু যা সামর্থ্য আছে, যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। কখন কোনও ওষুধ আকাশ থেকে খসে পড়বে, সেই অপেক্ষায় থাকার উপায় নেই।’’
আমেরিকায় ১ কোটি ৬৫ লক্ষ ছাড়িয়েছে সংক্রমিতের সংখ্যা। মৃত ৩ লক্ষের বেশি। শুক্রবারও এক দিনে ২ লক্ষ ৩২ হাজারের বেশি নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। গত সাত দিনের গড় দৈনিক মৃত্যু ২৪১১। এর মধ্যে শনিবারের মৃত্যু-সংখ্যা রেকর্ড গড়েছে। এক দিনে মারা গিয়েছেন ৩৩০৯ জন। এই পরিস্থিতিতে আজ-কালের মধ্যে টিকাকরণ শুরু হয়ে গেলেও দুশ্চিন্তা কাটছে না প্রশাসনের। এই বিশাল সংখ্যক সংক্রমণকে কী ভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব, সে নিয়ে পথ খুঁজে পাচ্ছে না প্রশাসন। নয়া নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট যার জন্য বারবার বলে চলেছেন, টিকা দেওয়া শুরু হলেও মাস্ক পরা বন্ধ করা যাবে না।
আরও পড়ুন: কেন্দ্র অনড়, কৃষকরা আজ অনশনে, যোগ দিচ্ছেন কেজরী
আরও পড়ুন: ভাঙচুর-বিক্ষোভ, দ্বন্দ্ব বাড়ছে আপ-বিজেপির
গত শুক্রবার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইট করে জানান, জরুরি ভিত্তিতে ফাইজ়ারকে ছাড়পত্র দিয়েছে ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (এফডিএ)। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টিকাকরণ শুরু হবে। কিন্তু আমেরিকার আর্মি জেনারেল গুস্তাভ পার্না শনিবার বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে টিকা পাঠানোর কাজ শুরু হবে। রবিবার প্রথম শিপমেন্ট হবে। সোমবারের মধ্যে দেশের ১৪৫টি অঞ্চলে পৌঁছে যাবে টিকা। বাকি ৬৩৬টি অঞ্চলে টিকা পৌঁছতে মঙ্গলবার, নয়তো বুধবার হবে। এ ভাবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ৩০ লক্ষ ডোজ় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
তবে আগামিকাল, সোমবারের মধ্যেই টিকাকরণ শুরু হয়ে যাবে বলে শোনা যাচ্ছে। পার্না জানিয়েছেন, এক দিকে যেমন শিপমেন্টের কাজ চলবে, অন্য দিকে ফাইজ়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আরও বেশি পরিমাণ টিকা পাঠাতে থাকবে তারা। টিকাকরণ শুরু হলে, প্রথম দফায় প্রবীণ নাগরিক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দেওয়া হবে। বাইডেনের মতো পার্নাও সতর্ক করেছেন, ‘‘এটা একটা লম্বা পদ্ধতি। প্রতিটি বাসিন্দা ভ্যাকসিন না-পাওয়া পর্যন্ত নিশ্চিন্ত হওয়ার নয়।’’ তবে একটা বিষয়ে তিনি নিশ্চিত, ‘‘টিকাতেই এই যুদ্ধ থামবে।’’