বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।
নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক এবং রিপাবলিকান পার্টির কোন দু’জন প্রার্থী প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তা বেছে নেওয়ার জন্য তাৎপর্যপূর্ণ দিন হল ‘সুপার মঙ্গলবার’। তার কারণ, পশ্চিমে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে পূর্বে ভেরমন্ট পর্যন্ত ষোলোটি প্রদেশে একসঙ্গে এই দিন প্রাথমিক নির্বাচন হয়। এই বছর সেই ‘সুপার মঙ্গলবার’-এর ভোটাভুটি হয়ে গেল ৫ মার্চ। সেই সঙ্গে বোঝা গেল, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মুখোমুখি সংঘাতে নামতে চলেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট
ডোনাল্ড ট্রাম্প।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেনই ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী হতে চলেছেন। তাই ‘সুপার মঙ্গলবার’ এই দলের জন্য ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, যতটা রিপাবলিকান দলের জন্য। সাউথ ক্যারোলাইনার প্রাক্তন গভর্নর নিকি হেলি ৫ তারিখের ফলাফলের পরে রিপাবলিকান প্রার্থী পদের দৌড় থেকে সরে গিয়েছেন। রিপাবলিকানদের পছন্দের তালিকায় প্রথম থেকে এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্পই।
ভার্জিনিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, টেনেসি, ওকলাহোমা, মেন, আরকানস, অ্যালাবামা, টেক্সাস, মিনেসোটা, ম্যাসাচুসেটস, কলোরাডো, ক্যালিফোর্নিয়া— এই ১২টি প্রদেশে প্রতিদ্বন্দ্বী নিকি হেলিকে পরাজিত করে ট্রাম্প প্রত্যাশামতো রিপাবলিকান পার্টির নির্বাচিত প্রার্থী হতে চলেছেন। একমাত্র ভেরমন্টে ট্রাম্পকে পরাজিত করেছেন নিকি। এখনও পর্যন্ত ট্রাম্পের ঝুলিতে রয়েছে ৯৯৫ জন ডেলিগেট।
‘সুপার মঙ্গলের’ ঠিক আগের দিন, কলোরাডোর সুপ্রিম কোর্ট কলোরাডোর নির্বাচনে ট্রাম্পের অংশগ্রহণ করায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। তার কারণ, সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী অনুসারে রাষ্ট্রদ্রোহে ইন্ধন জোগানো কোনও ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় কোনও পদে নির্বাচিত হতে পারেন না। ক্যাপিটল-কাণ্ডের মামলাতেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এই নির্দেশ। কিন্তু দেশের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, স্রেফ একটি প্রদেশ এই বিষয়ে সামগ্রিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
অন্য দিকে, বাইডেন প্রত্যাশা মতো সব প্রদেশেই জয়লাভ করেছেন। বাকি দু’জন প্রধান প্রার্থী ডিন ফিলিপস এবং মেরিয়ান উইলিয়ামসন প্রায় কোথাও নেই। এক মাত্র দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের আমেরিকান ভূখণ্ড আমেরিকান সামোয়ায় জেসন পামার ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী পদে জয়লাভ করেছেন। বাইডেনের ডেলিগেট সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ১৪৯৭।
এ বার ডেমোক্র্যাট ভোটদাতাদের ব্যালটে ‘আনকমিটেড’ বলে একটি বিকল্পও ছিল। এই ‘আনকমিটেড’ ভোটদাতাদের সংখ্যা কিন্তু চোখে পড়ছে মিনেসোটা, টেক্সাস, ওকলাহোমা, ম্যাসাচুসেট্স এবং ক্যালিফোর্নিয়ার মতো বেশ কিছু প্রদেশে। রাজনীতিকদের মতে, এ যেন নির্বাচনী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর এক নতুন পন্থা। কোনও বিকল্প প্রার্থী না-থাকায়, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিরুদ্ধে সুর চড়াবার এক পন্থাও বটে।
আমার প্রদেশ ম্যাসাচুসেটসেও মঙ্গলবার প্রাথমিক নির্বাচন ছিল। আমার শহরের একটি ইয়ুথ সেন্টারের বিরাট জিমন্যাশিয়ামে শেষ দুপুরের দিকে আমি যখন ভোট দিতে যাই, তখন দু’এক জন পুলিশ অফিসার, টেবিলে বসে থাকা নির্বাচনী অফিসার, আমার মতো কয়েক জন ভোটার ছাড়া মোটামুটি খালি ছিল। টেবিলে পৌঁছে নিজেদের পরিচয়পত্র দেখালে, তাঁরা পার্টির রেজিস্ট্রেশন মিলিয়ে নির্দিষ্ট ব্যালট হাতে দেন। এই দেশে বেশির ভাগ ভোটার নির্দিষ্ট দলের রেজিস্টার্ড তথা নথিভুক্ত সমর্থক হন।
ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান পার্টির ব্যালট প্রাথমিক নির্বাচনে সম্পূর্ণ আলাদা হয়। প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর সঙ্গে নিজের শহরের বা রাজ্যের অন্য কোনও প্রশাসনিক পদের জন্য নির্বাচন হলে সেই প্রার্থীরাও একই ব্যালটে থাকেন।
আপাতত ফল বলছে মুখোমুখি ট্রাম্প ও বাইডেন। আগামী প্রেসিডেন্ট কে হবেন, তাঁর উপরেই নির্ভর করছে আমেরিকার আগামী।