ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র
প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে এগিয়ে গেলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গোটা বিশ্ব জুড়ে তাপমাত্রা আরও ৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড করে বাড়তে চলেছে। ক্রমে ভয়ঙ্কর জলবায়ু পরিস্থিতি লক্ষ লক্ষ মানুষকে ঠেলে দেবে দারিদ্রের দিকে। এই পরিস্থিতিতে প্যারিসের জলবায়ু চুক্তি থেকে একমাত্র সরে গেল যে দেশটি, তার নাম আমেরিকা— বিশ্বে গ্রিনহাউস নির্গত করে যে সব দেশ, তার মধ্যে অন্যতম এবং তেল ও গ্যাস উৎপাদনেও প্রথম সারিতে থাকা দেশটি আর চুক্তির শরিক থাকছে না।
চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার জন্য এক বছর ব্যাপী সেই প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে মার্কিন সরকারের তরফে পাঠানো আনুষ্ঠানিক নথি অনুযায়ী। ২০১৫ সালে প্যারিসে রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সম্মেলনে এই চুক্তি হয়েছিল। বারাক ওবামা তখম মার্কিন প্রেসিডেন্টের পদে।
প্যারিস জলবায়ু চুক্তির ‘অপরিবর্তনীয়তা’ নিয়ে বুধবার বেজিংয়ে আবার একটি চুক্তি সই করবেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ এবং চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং। ট্রাম্পের দেশের সরে যাওয়া নিয়ে ফ্রান্স দুঃখপ্রকাশ করে জানিয়েছে, ‘জলবায়ু এবং জীববৈচিত্র নিয়ে ফ্রান্স-চিনের জোট আরও জরুরি হয়ে দাঁড়াল।’ চিন বলেছে, আমেরিকার উচিত এ ব্যাপারে আরও দায়িত্বশীল হওয়া। মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়ো সোমবার বিকেলে প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ওই চুক্তি মার্কিন কর্মী, ব্যবসায়ী এবং করদাতাদের উপরে অন্যায্য আর্থিক বোঝা চাপিয়ে দেয়। তা ছাড়া আমেরিকা ইতিমধ্যেই তার তাপ-বর্ধক নির্গমন কমিয়ে এনেছে।’’ যদিও আমেরিকা জুড়ে জলবায়ু সঙ্কট নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন প্রদেশ ও শহরে যারা কাজ করছে, সেই সব গোষ্ঠীর দাবি, যত উদ্যোগই থাকুক, আমেরিকাকে এখনও বড় লড়াই চালাতে হবে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে। বেশ কয়েকটি দেশ চাইছে ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন গ্যাস-নির্গমন শূন্যে নিয়ে আসতে। কিন্ত তারা বিশ্বের মাত্র ১১ শতাংশের প্রতিনিধি। কার্বন-নির্গমনের বড় তিন দেশ— চিন, আমেরিকা ও ভারত এই তালিকায় পড়ে না।
আমেরিকায় জলবায়ু নিয়ে আন্দোলনকারী এবং প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যাল গোর তাঁর দেশের অবস্থান নিয়ে টুইটারে লিখেছেন, ‘‘জলবায়ু সঙ্কট মেটাতে কোনও ব্যক্তি বা দল আমাদের পথ আটকাতে পারবে না। যারা সেটা করবে, তাদের পৃথিবী মনে রাখবে আত্মতুষ্টি, কুকর্মে সাহায্য আর মিথ্যাচারের জন্য।’’ ট্রাম্পের এই নীতিকে ‘বেপরোয়া’ আখ্যা দিয়ে গোর জানাচ্ছেন, ২০২০-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে না। তাঁর কথায়, ‘‘ট্রাম্প যতই দৌড়ন, নয়া প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় এলে ৩০ দিন লাগবে সমর্থন জোগাড় করতে। ভোটারদের হাতেই সিদ্ধান্তের ভার।’’
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সক্রিয় আন্দোলনের অন্যতম মুখ সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গকে গত কালই প্রশ্ন করা হয়েছিল, মার্কিন সফরে ট্রাম্পের সঙ্গে তার দেখা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি না? জলবায়ু পরিবর্তনের অস্তিত্ব মানতেই যিনি নারাজ, সেই প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করে সময় নষ্ট সে করবে না, সাফ জানিয়ে দিয়েছে গ্রেটা।
হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস-এর স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ট্রাম্পের পদক্ষেপ সম্পর্কে বলেছেন, ‘‘আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ বিক্রি করে দেওয়ার মতো বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত।’’ প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়কার বিদেশসচিব জন কেরি এবং প্রতিরক্ষাসচিব চাক হেগেল একটি মার্কিন দৈনিকে লিখেছেন, ‘‘আজ আমেরিকার একটা অন্ধকার দিন।’’ তাঁদের বক্তব্য, ‘‘আমেরিকার প্রতিটি অংশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে। গত পাঁচ বছর ছিল উষ্ণতম। দূষণের হার তীব্র মাত্রায় কমানো সম্ভব না হলে এই শতকের শেষে হাজার হাজার মার্কিন নাগরিকের জীবন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হবে।’’ তাঁদের মতে, ‘‘প্যারিস চুক্তি ছিল একটা শুরু, ইতি টানার বিষয় ছিল না ওটা।’’