আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় সিরিয়ায় বিমান হানা চালিয়ে ৬৪ জন মহিলা ও শিশুকে হত্যা করার কথা গোপন করে গিয়েছিল আমেরিকার সেনাবাহিনী
সালটা ২০১৯। জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় সিরিয়ায় বিমান হানা চালিয়ে ৬৪ জন মহিলা ও শিশুকে হত্যা করার কথা গোপন করে গিয়েছিল আমেরিকার সেনাবাহিনী, এমনটাই দাবি করেছে সে দেশের প্রথম সারির এক সংবাদমাধ্যম। শনিবার প্রকাশিত আমেরিকার ওই সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, এই হত্যাকাণ্ড যুদ্ধাপরাধ হয়ে থাকতে পারে।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ায় স্থল অভিযানের দায়িত্বপ্রাপ্ত আমেরিকান স্পেশাল অপারেশন্সের একটি গোপন ইউনিটের নির্দেশে দু’বছর আগে সিরিয়ার বাঘুজ় টাউনের কাছে পর পর দু’টি বিমান হামলা চালানো হয়। সিরিয়ায় বিমান হানার তত্ত্বাবধান করে আমেরিকার সেন্ট্রাল কমান্ড। চলতি সপ্তাহে প্রথম বার এই দু’টি বিমান হামলার কথা স্বীকার করেছে তারা। সেই সঙ্গে এই দু’টি হামলাকে ‘ন্যায়সঙ্গত’ বলেও দাবি করা হয়েছে।
শনিবার সংবাদমাধ্যমটিকে দেওয়া আমেরিকান সেন্ট্রাল কমান্ডের বিবৃতি অনুয়ায়ী ১৬ জন আইএস যোদ্ধা এবং চার জন সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছিলেন। নিহত ৮০ জনের মধ্যে বাকি ৬০ জনও সাধারণ নাগরিক কি না, তা স্পষ্ট নয়। কারণ মহিলা এবং শিশু যোদ্ধা থেকে থাকতে পারেন। পাশাপাশি বিবৃতি দিয়ে আমেরিকার সেনা দাবি করেছে, ‘ন্যায়সঙ্গত আত্মরক্ষার’ জন্যই হামলাগুলি চালানো হয়েছে। সাধারণ মানুষেরা যাতে হামলার শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে যথাযথ পদক্ষেপও করা হয়েছিল।
সেন্ট্রাল কমান্ডের বক্তব্য, ‘‘নিরাপরাধ মানুষের মৃত্যুকে আমরা ঘৃণার চোখে দেখি এবং তা ঠেকাতে যথাযথ পদক্ষেপ করে থাকি। এই ঘটনায় আমাদের নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত চালিয়েছি এবং অনিচ্ছাকৃত মৃত্যুর পুরো দায়িত্ব নিচ্ছি।’’ তারা জানিয়েছে, ওই ঘটনার ভিডিয়োয় ‘অস্ত্রধারী বহু নারী এবং অস্ত্র হাতে এক শিশুকে দেখা গিয়েছিল।’ তাই নিহত ওই ৬০ জনের মধ্যে কত জন সাধারণ নাগরিক ছিলেন, তার বার করা যায়নি। সেন্ট্রাল কমান্ডের দাবি, নিহত ওই ৬০ জনের মধ্যে সিংহ ভাগই সম্ভবত যোদ্ধা ছিলেন। সেন্ট্রাল কমান্ড আরও জানিয়েছে, হামলার সময় ব্যাপক গুলির মুখে পড়েছিল সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স (এসডিএফ)। তাদের মধ্যে পরাজয়ের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছিল। এসডিএফ-ই জানিয়েছিল এলাকায় কোনও সাধারণ মানুষ নেই।
সংবাদমাধ্যমটির দাবি, ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছিলেন আমেরিকার প্রতিরক্ষা দফতরের ইনস্পেক্টর জেনারেল। কিন্তু তদন্ত রিপোর্ট থেকে বোমা ফেলার বিষয়টি ‘ছেঁটে ফেলা’ হয়েছিল। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, গোপন নথি এবং গোপন রিপোর্টের বর্ণনার উপর ভিত্তি করেই প্রতিবেদনটি লেখা হয়েছে। ঘটনাটির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িতদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। ঘটনার সময় অভিযান কেন্দ্রে হাজির ছিলেন বায়ু সেনার এক আইনজীবী। কারণ মনে করা হয়েছিল, এই বিমান হামলা দু’টি যুদ্ধপরাধের শামিল, জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।