ইরানের সেই বিস্ফোরণস্থল। ছবি: রয়টার্স।
ইরানে বুধবারের জোড়া বিস্ফোরণের জন্য পশ্চিম এশিয়ায় সক্রিয় সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী আইএসের দিকেই সন্দেহের তির আমেরিকার। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, ‘‘হামলার ধাঁচ দেখে অনুমান করা যেতে পারে, এর পিছনে আইএস রয়েছে।’’
ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে প্রায় হাজার কিলোমিটার দূরে, দক্ষিণ ইরানের কেরমান শহরে বুধবারের বিস্ফোরণে ৯৫ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন বলে বৃহস্পতিবার ইরান সরকারের স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে। এর আগে নিহতের সংখ্যা ১০৩ বলা হয়েছিল। সরকারি সূত্রের খবর, কয়েকটি নাম দু’বার লেখা হওয়ার কারণেই এই বিভ্রান্তি।
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খোমেইনি ওই জোড়া বিস্ফোরণের ঘটনাকে ‘জঙ্গি হামলা’ বলেছেন। সেই সঙ্গে তাঁর ঘোষণা— ‘‘ইরান এর প্রতিশোধ নেবে।’’ প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি আমেরিকার ক্ষেপণাস্ত্র হানায় নিহত হয়েছিলেন ইরান সেনার জনপ্রিয় জেনারেল কাসেম সোলেমানি। দ্বিতীয় মৃত্যুদিবসে শ্রদ্ধা জানাতে কেরমান শহরে সাহিব আল-জামান মসজিদের অদূরে তাঁর কবরের কাছে ছিল মানুষের ঢল। আর বুধবার বিকেলে সেখানেই ঘটে ভয়াবহ ধারাবাহিক বিস্ফোরণ!
এখনও পর্যন্ত কোনও জঙ্গিগোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করেনি। গাজ়ায় যুদ্ধের আবহে ইজ়রায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ এই নাশকতা চালাতে পারে বলে ইরানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দফতর বুধবার দাবি করেছিল। জানিয়েছিল আমেরিকার মদতের সম্ভবনার কথাও। কিন্তু বুধবার রাতে আমেরিকার বিদেশ দফতরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার অভিযোগ খারিজ করে বলেন, ‘‘আমেরিকা কোনও ভাবেই জড়িত নয়। ওই বিস্ফোরণের নেপথ্যে ইজ়রায়েলের হাত রয়েছে, এটাও বিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই।’’
এর পরেই ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসির রাজনৈতিক পরামর্শদাতা মহম্মদ জামশিদি এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘‘ওয়াশিংটন বলেছে, ইরানের কেরমানে সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনায় আমেরিকা এবং ইজ়রায়েলের ভূমিকা নেই। সত্যিই তা-ই? যে অপকর্মের জন্য তুমি অন্যকে দোষারোপ করো, সেটা তোমার মাথায় আগে ঘুরপাক খায়।’’ প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক যুদ্ধে গাজ়ার হামাস, লেবাননের হিজবুল্লা এবং ইয়েমেনের হুথি বাহিনীকে ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে ইরান মদত দিচ্ছে। তা নিয়ে একাধিক বার তেহরানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি ইরাকের রাজধানী বাগদাদের অদূরে আমেরিকার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হয়েছিলেন সোলেমানি। ইরানের ‘ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড কোর’-এর ওই কমান্ডার সেখানে আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মদত দিতে গিয়েছিলেন। আত্মরক্ষার জন্যই ইরানি কমান্ডার কাসেম সোলেমানিকে মারতে হয়েছে বলে সে সময় রাষ্ট্রপুঞ্জকে জানিয়েছিলেন আমেরিকার তৎকালীন প্রতিনিধি কেলি ক্রাফ্ট। তাঁর দাবি ছিল, পশ্চিম এশিয়ায় মোতায়েন আমেরিকার সেনার উপর ধারাবাহিক ভাবে হামলায় মদত দিচ্ছিলেন সোলেমানি।