চিকিৎসা ক্ষেত্রে পরনির্ভরতা কমাতে নয়া নির্দেশিকায় সই করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
দেশীয় পণ্যের প্রচার ও প্রসারের আহ্বান জানিয়ে ‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযান’ প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সব ক্ষেত্রে না হলেও অন্তত চিকিৎসা ক্ষেত্রে কার্যত সেই পথেই হাঁটতে চলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। শুধুমাত্র আমেরিকান সংস্থাগুলির কাছ থেকেই ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী কেনার জন্য ‘বাই আমেরিকান’ নামে ‘এগজিকিউটিভ অর্ডার’-এ সই করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিদেশনির্ভরতা কমানোই এর উদ্দেশ্য। যদিও বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, চিনকে জব্দ করতেই এই নয়া পন্থা নিল হোয়াইট হাউস।
কিন্তু ভারতীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী রফতানির সবচেয়ে বড় বাজার তো আমেরিকা। এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারতীয় সংস্থাগুলির ক্ষতি হবে না তো? কিন্তু নয়াদিল্লির কর্তারা মনে করছেন, আমেরিকার এই সিদ্ধান্ত চিনকে টার্গেট করে। প্রকাশ্যে না বললেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের গোডা় থেকেই আমেরিকার সঙ্গে চিনের যে বৈরিতা তৈরি হয়েছে এবং তার প্রভাব চিনা অ্যাপ বন্ধ করার হুঁশিয়ারি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে প্রভাব পড়েছে, তাতে নিশানায় যে বেজিং-ই তা কার্যত স্পষ্ট। ফলে এই সিদ্ধান্ত ভারতের ক্ষতির বদলে লাভই হবে বেশি।
কেন লাভ হবে? কোন কোন ওষুধ বা চিকিৎসা সামগ্রীর ক্ষেত্রে ‘বাই আমেরিকান’ নীতি কার্যকর হবে, সেই বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। তবে নয়াদিল্লির কর্তারা মনে করছেন, মূলত অত্যাধুনিক প্রযুক্তির অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্ট বা এপিআই-এর উপরেই জোর দেবে ওয়াশিংটন। আর এই ক্ষেত্রে চিনের একাধিপত্য। সারা বিশ্বে এই ক্ষেত্রে একমাত্র বেজিংই এই পণ্য রফতানি করে। ভারতকেও কিনতে হয় চিনা সংস্থাগুলির কাছ থেকেই। ব্লুমবার্গের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী ভারত এপিআই ক্ষেত্রে মোট আমদানির ৭০ শতাংশই কেনে চিনের কাছ থেকে। ভারতও চাইছে এই চিন নির্ভরতা কমাতে।
আরও পড়ুন: সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে আমেরিকায় টিকটক নিষিদ্ধ, নির্দেশ ট্রাম্পের
নয়াদিল্লির কর্তারা তাই মনে করছেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে মার্কিন মুলুকে এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ও উৎপাদন শুরু হবে। ফলে ভারতও চিনকে বাদ দিয়ে আমেরিকার কাছ থেকেই এই এপিআই ক্ষেত্রের চিকিৎসা সামগ্রী কিনতে পারবে, যা কৌশলগত ভাবে ভারতকে লাভবান করবে। প্রথমত, চিনের একাধিপত্য কমে প্রতিযোগিতা তৈরি হওয়ায় দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার চিনের চেয়ে আমেরিকার কাছ থেকে আমদানি করা ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার স্বার্থেও সুবিধাজনক।
অন্য দিকে ভারত আমেরিকায় মূলত রফতানি করে ওষুধ ও কম দামি চিকিৎসা সামগ্রী। ২০১৯ সালেও ভারত আমেরিকায় রফতানি করেছে প্রায় ৬০০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য, যা এই ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে রফতানির নিরিখে তৄতীয় স্থানে। ওয়াশিংটনের ‘বাই আমেরিকান’ নীতি এই ওষুধ ও কম দামি চিকিৎসা সামগ্রীর ক্ষেত্রে লাগু হবে না বলেই নয়াদিল্লির কর্তাদের অভিমত। বিশেষ করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রথম দিকে ভারত আমেরিকাকে যে বিপুল পরিমাণ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন দিয়েছিল তাতে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে সমঝোতা আরও পোক্ত হয়েছে। ফলে নয়াদিল্লির ক্ষতি হবে, এমন সিদ্ধান্ত হোয়াইট হাউস নেবে না বলেই মনে করছেন ভারতীয় কূটনীতিকরা। তা ছাড়া কম দামি জেনেরিক ওষুধ তৈরির পরিকাঠামো তৈরিতে আমেরিকার যে খরচ হবে, এবং উৎপাদিত পণ্যের যা দাম হবে, তার চেয়ে ভারত অনেক কম দামে ওষুধ রফতানি করে আমেরিকাকে। ফলে আমদানি কমিয়ে এই ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হতে গেলে আখেরে আমেরিকার ক্ষতিই হবে।
আরও পড়ুন: জুলাইয়ে প্রথম ট্রায়াল, অগস্টেই তৈরি ভ্যাকসিন!
কিন্তু কেন হঠাৎ আমেরিকার এই সিদ্ধান্ত? বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনাভাইরাসের ভেন্টিলেটর-সহ বিপুল পরিমাণ চিকিৎসা সামগ্রী চিনের কাছ থেকে কিনতে হয়েছে আমেরিকাকে। কূটনীতিকদের মতে, সেই চিন নির্ভরতা কমিয়ে স্বনির্ভর হওয়ারি দিকে এগনোর পদক্ষেপ হিসেবেই হোয়াইট হাউস এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হোয়াইট হাউসের ট্রেড অ্যাডভাইজর পিটার নাভারো বলেছেন, ‘‘জীবনদায়ী ওষুধ-সহ মাস্ক, গ্লাভস, গগলস, ভেন্টিইলেটরের মতো চিকিৎসা সামগ্রীর জন্য আমরা ভয়ঙ্কর ভাবে অতিরিক্ত বিদেশ নির্ভরশীল। ’’ ডোনাল্ড ট্রাম্পও বলেছেন, ‘‘ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীর ক্ষেত্রে আমেরিকা অন্য দেশের উপর নির্ভরশীলতা শূন্যে নামিয়ে আনবে।’’ চিনের নাম করেও তিনি বলেছেন, ‘‘ভয়ঙ্কর করোনাভাইরাস ছড়িয়ে আমেরিকা ও অন্যান্য দেশে যে ক্ষত তৈরি করেছে, তার মূল্য চোকাতে হবে বেজিংকে।’’