ইয়োহানি রোজ়ারিয়োর(ইনসেটে) কফিন পৌঁছল লরেন্সে। শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় শহরবাসীর। ছবি রয়টার্স।
আফগানিস্তান ছাড়তে তখন মাত্র কয়েক দিনের অপেক্ষা। কাবুলের হামিদ কারজ়াই বিমানবন্দরের বাইরে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে ১২ জন আমেরিকান সেনার সঙ্গে মৃত্যু হয়েছিল মেরিন সার্জেন্ট ইয়োহানি রোজ়ারিয়োরও। ২৫ বছরের সেই সেনার দেহ গত কাল কফিনবন্দি হয়ে তাঁর বাড়ি ম্যাসাচুসেটসের লরেন্সে এসে পৌঁছল। দিনটি ছিল সেই ১১ সেপ্টেম্বর। ২০ বছর আগে যে দিনটিতে আল কায়দার বিমানহানায় গুঁড়িয়ে গিয়েছিল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার। যে দিনটির পরেই আফগানিস্তানে সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আমেরিকা।
ইয়োহানিকে সম্মান জানাতে গত কাল লরেন্সে জমায়েত হয়েছিল কয়েক’শো মানুষের। উর্দি পরা মেরিন বাহিনীর সদস্যেরা তাঁর দেহটি নিয়ে আসেন অন্ত্যেষ্টির জন্য। ১২ বছরের ছেলেকে নিয়ে সেখানেই অপেক্ষা করছিলেন মেরি বেথ। তাঁর বড়ছেলেও সেনাবাহিনীতে রয়েছেন। মেরির কথায়, ‘‘রোজ়ারিয়ো আমাদের হিরো। ওঁর জন্যই অপেক্ষা করে রয়েছি। ওঁর সাহস, ত্যাগ সব সময়ে স্মরণে থাকবে।’’
২০০১ সালের সেই হামলার সময়ে ইয়োহানির বয়স ছিল মাত্র ৫ বছর। ২০১৪ সালে স্নাতক হওয়ার পরে তিনি ‘ফিফ্থ মেরিন এক্সপিডিশনারি ব্রিগেড’-এ যোগ দেন। সেনাবাহিনীর সাপ্লাই চিফ হিসেবে আফগানিস্তানে কাজে যোগ দেন তিনি। এই দায়িত্বে সাধারণত সেনার অভিজ্ঞ কর্তারা থাকেন। এ ছাড়া, অপরিচিত পুরুষদের সঙ্গে কথা বলতে অনিচ্ছুক বা ‘অনুমতি’ না থাকা আফগান মহিলাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার দায়িত্ব ছিল রোজ়ারিয়োর। মৃত্যুর মাত্র তিন মাস আগে কর্মক্ষেত্রে অসাধারণ দক্ষতার জন্য বিশেষ সম্মান পেয়েছিলেন তিনি।
শনিবার রোজ়ারিয়োকে সম্মান জানাতে হাজির ছিলেন তাঁর স্কুলবেলার বহু বন্ধু। চোখে জল, বন্ধুর ছবি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক মহিলা। বললেন, ‘‘কথা বলার ভাষা নেই। শুধু কান্না পাচ্ছে।’’ এক ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে উস্টার থেকে এসেছিলেন মারিয়া ওগান্ডো। সঙ্গে থাকা তাঁর ৯ বছরের মেয়ের গায়ে ছিল ইয়োহানির নাম লেখা টি-শার্ট। ছোট্ট মেয়েটি বলে, ‘‘আমি সব সময় ওঁকে মনে রাখব। মনে রাখব আমাদের দেশের জন্য ইয়োহানি কী করেছেন।’’