উদ্ধারকাজ শেষ করেছে ভারত। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেন থেকে দেশে ফিরেছেন ৪৬,০০০ ভারতীয়। শুধু নিজের দেশের নাগরিকই নয়, ‘রাহত অপারেশন’-এ ভারতীয় বাহিনী ৪১টি দেশের হাজারেরও বেশি নাগরিককে উদ্ধার করেছে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর। গত কালই বাহিনীর সঙ্গে দেশে ফিরেছেন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহ। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মানও বেড়েছে ভারতের। যুদ্ধের মাটি থেকে ফিরেছে চিন, পাকিস্তান-সহ বিশ্বের একটা বড় অংশ। কিন্তু ইয়েমেনের পরিস্থিতি এখনও অশান্ত।
হামলা জারি রেখেছে ইরানের মদতপুষ্ট হুথি জঙ্গি গোষ্ঠী। পাল্টা জবাব দিচ্ছে সৌদির নেতৃত্বাধীন বাহিনীও। প্রশাসন সূত্রে খবর, সংঘর্ষে গত কাল মাঝ রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত দেশের দক্ষিণ প্রান্তে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, ভোর রাতেই আডেনের কিছু জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালায় বাহিনী। প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে চলে সংঘর্ষ। নিহতদের মধ্যে সাত সেনাও রয়েছে বলে দাবি। খোর মকসর থেকেও এ দিন সংঘর্ষের খবর মিলেছে। ঘটনায় ছ’জন জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যেও দেশ জুড়ে আজও দফায় দফায় সংঘর্ষের খবর মিলেছে। বাড়ছে নিহতের সংখ্যা।
অন্য দিকে, আজই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সৌদিকে আরও এক প্রস্ত সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছে আমেরিকা। ইয়েমেনের ঠিক কোথায় কোথায় ঘাঁটি গেড়েছে জঙ্গিরা, বাহিনীকে তা সবিস্তার জানাবে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা। পাশাপাশি যুদ্ধে প্রয়োজনীয় সমরাস্ত্র ও সেনার জোগানও তারা দিতে পারে বলে ইয়েমেন প্রশাসনের একাংশের দাবি। হুথি জঙ্গি গোষ্ঠীকে মদত দেওয়ার অভিযোগ খারিজ করেই চলেছে ইরান। তাই ইয়েমেনে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে আরও বেশি করে জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে ইরান সম্পর্ক নিয়েও ভাবছে ওয়াশিংটন। সূত্রের খবর, চলতি সপ্তাহের শুরু থেকেই বাহিনীর যুদ্ধবিমানে জ্বালানি সরবরাহের কাজে নেমেছে আমেরিকা। সরাসরি যুদ্ধে নামা নিয়ে পরিষ্কার কিছু জানায়নি আমেরিকা।
সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে আমেরিকার মতো পাকিস্তানকেও পাশে পেতে চাইছে সৌদি। কিন্তু পাকিস্তান এখনও দ্বিধা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বরং আদৌ এই যুদ্ধে অংশ নেওয়া উচিত কিনা, তা নিয়ে বিতর্কে উত্তাল দেশের পার্লামেন্ট। গতকাল এ নিয়ে বিশেষ ভোটাভুটিও হয়। অধিকাংশেরই ভোট যুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থানের পক্ষে।
যুদ্ধ পরিস্থিতি সামাল দিতে তৎপর ইউনিসেফ। প্রবাসীদের একটা বড় অংশ দেশে ফিরলেও, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আটক লাখখানেক ইয়েমেনি। তাঁদের কথা মাথায় রেখেই গত সপ্তাহে ১৬ টন ওষুধ-পথ্য ও চিকিৎসা সরঞ্জাম ইয়েমেনে পাঠানোর উদ্যোগ শুরু হয়। যুদ্ধের জন্য এত দিন তা না পৌঁছলেও, গত কাল তা এসেছে সানায়। তিন সপ্তাহের যুদ্ধে আহতের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘরছাড়া বহু মানুষ। জাহাজের ভাড়া জোগাড় করতে না পেরে, তাদের অনেকেই আশ্রয় নিচ্ছেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে। ভিড়ে ঠাসা জাহাজ যে ভাবে যাতায়াত করছে, তা নিয়েও আশঙ্কা বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দাবি, ৬ এপ্রিল থেকে এখনও পর্যন্ত ৬৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।