দুই ভারতীয়কে জঙ্গি ঘোষণার জন্য পাকিস্তানের প্রস্তাব খারিজ রাষ্টপুঞ্জে। ছবি: এপি
জইশ-ই-মহম্মদ প্রধান মাসুদ আজহারকে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণার বদলা নিতে চেয়েছিল পাকিস্তান। রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের চার জনকে জঙ্গি ঘোষণার প্রস্তাব দিয়েছিল ইসলামাবাদ। কিন্তু সেই উদ্দেশ্য সফল হওয়ার বদলে উল্টে অস্বস্তি বাড়ল ইমরান খানের। আগেই দু’জনকে জঙ্গি ঘোষণার প্রস্তাব খারিজ হয়েছিল। বুধবার শেষ দু’জন আঙ্গারা আপ্পাজি এবং গোবিন্দ পট্টনায়েককে জঙ্গি ঘোষণার প্রস্তাবও খারিজ হয়ে গেল রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাস বিরোধী ১২৬৭ কমিটিতে।
কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রস্তাবের পক্ষে অর্থাৎ আঙ্গারা ও গোবিন্দের বিরুদ্ধে তেমন কোনও তথ্যপ্রমাণই দিতে পারেনি ইসলামাবাদ। সেই কারণেই আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও বেলজিয়াম এই প্রস্তাব আটকে দিয়েছে। তার পরেই টুইট করে এই খবর জানিয়ে এই সব দেশের প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি টি এস তিরুমুর্তি। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘‘সন্ত্রাস সম্পর্কিত ১২৬৭ বিশেষ পদ্ধতিকে পাকিস্তান নির্লজ্জ ভাবে রাজনীতিকরণ করতে ও ধর্মীয় রং দিতে চেয়েছিল। পরিষদের যে সব সদস্য এই প্রস্তাবকে আটকে দিয়েছেন, তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ।’’
আফগানিস্তানে কর্মরত মোট চার ভারতীয়র বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগ তুলে রাষ্ট্রপুঞ্জে অভিযোগ জানিয়েছিল পাকিস্তান। ইসলামাবাদের অভিযোগ ছিল, বেনুমাধব ডোঙ্গারা, অজয় মিস্ত্রি, আঙ্গারা আপ্পাজি এবং গোবিন্দ পট্টনায়েক আফগানিস্তানে কাজ করলেও তারা তেহরিক-ই-তালিবানের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীকে মদত দিতেন এবং অর্থসাহায্য করতেন। পেশওয়ারে সেনা স্কুলে হামলায় ১৫০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ওই হামলাতেও এই চারজনের যুক্ত থাকার দাবি করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: পাবজি-সহ ১১৮টি অ্যাপ নিষিদ্ধ
এই সব অভিযোগের ভিত্তিতেই তাদের সন্ত্রাসবাদী ঘোষণার দাবিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাস বিষয়ক ১২৬৭ কমিটির কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয় পাক সরকারের তরফে। কিন্তু এ বছরের গোড়ার দিকেই প্রথম দুই ভারতীয়র সম্পর্কিত প্রস্তাবে পদ্ধতিগত ত্রুটি দেখিয়ে আটকে দেয় আমেরিকা। এ বার আঙ্গারা আপ্পাজি এবং গোবিন্দ পট্টনায়েককে জঙ্গি ঘোষণার চেষ্টাও ব্যর্থ হল। এই দু’জনের কারও বিরুদ্ধেই উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ জমা দিতে পারেনি পাকিস্তান। নিয়ম অনুযায়ী কোনও দেশের প্রস্তাবে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের যে কেউ স্থগিত করে দিতে পারে। নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে তা তুলে না নিলে ওই প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: হ্যাকারদের কবলে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটের টুইটার হ্যান্ডল
জানা গিয়েছে, অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা আঙ্গারা আপ্পাজি আফগানিস্তানের একটি ব্যাঙ্কে কাজ করতেন। কিন্তু এ বছরের জানুয়ারিতে তাঁকে কাবুলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। অন্য দিকে আফগানিস্তানের একটি সংস্থায় উচ্চ পদে কর্মরত ছিলেন ওড়িশার বাসিন্দা গোবিন্দ পট্টনায়েক।
গত বছরের মে মাসে পাক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের মাথা মাসুদ আজহারকে বিশ্ব সন্ত্রাসী ঘোষণা করেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের এই ১২৬৭ কমিটি। চিন সেই প্রস্তাবে ভেটো দিলেও তা কার্যকর হয়নি। কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, তার বদলা নিতেই চার ভারতীয়কে জঙ্গি তকমা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ইসলামাবাদ। কিন্তু তাদের সেই চেষ্টায় কার্যত পুরোপুরি জল ঢেলে দিল রাষ্ট্রপুঞ্জ।