খোশমেজাজে: স্বাস্থ্যবিমায় ভর্তুকি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে সইয়ের পরে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওয়াশিংটনে। ছবি: রয়টার্স।
‘ওবামাকেয়ার’-এর দিন শেষ! স্বাস্থ্যবিমা সংস্থাগুলিকে মার্কিন সরকার এত দিন যে ভর্তুকি দিত, তা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর ফলে স্বল্প আয়ের মানুষরা বিভিন্ন বিমা সংস্থা থেকে যে সুবিধে পেতেন, বন্ধ হয়ে যাবে সেই রাস্তা। দেশের বিমা ব্যবস্থায় যে সব পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, তা থেকে স্পষ্ট, ক্রেতা-সুরক্ষা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাতে চান না তিনি।
ট্রাম্পের নির্দেশে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ‘অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট’ বাতিল করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মার্কিন কংগ্রেস। বেশ কয়েক বারের চেষ্টাতেও সফল না হওয়ার পরে এ বার দায়িত্ব িনজের কাঁধেই নিয়ে নিলেন ট্রাম্প। শুক্রবার সকাল থেকে একের পর এক টুইটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, ‘‘ডেমোক্র্যাটদের ওবামাকেয়ার ধসে পড়েছে। ওদের পোষ্য বিমা সংস্থাগুলোয় গাদা গাদা ভর্তুকি বন্ধ হচ্ছে। সব ঠিক করতে এ বার আমায় ডাকুন।’’ ওবামাকেয়ার-এর ‘দুঃস্বপ্ন’ থেকে দেশকে মুক্ত করার ডাক দিয়েছেন ট্রাম্প।
হোয়াইট হাউসের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘‘সরকার আইনি ভাবে এই ভর্তুকি দিতে পারে না। ধ্বংসাত্মক ওবামাকেয়ার বাতিল করে পরিবর্তন আনতে হবে আইনে যাতে মার্কিন জনতার প্রকৃত উপকার হয়।’’ কিন্তু ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের সমালোচনায় রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দু’পক্ষই সরব হয়েছে। শীর্ষ ডেমোক্র্যাট নেতা-নেত্রীদের মধ্যে নিউ ইয়র্কের সেনেটর চাক শ্যুমার ও ক্যালিফোর্নিয়ার প্রতিনিধি ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, ‘‘ট্রাম্প মার্কিন জনতাকে শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’ তাঁদের মতে, ‘‘দেশের শ্রমজীবী ও মধ্যবিত্ত মানুষের পিঠে ছুরি মারবে এই সিদ্ধান্ত।’’
স্বাস্থ্যবিমায় সরকারি ভর্তুকি কমানো নিয়ে কয়েক মাস আগে রিপাবলিকানদের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। সেখানে রিপাবলিকান সেনেটররা অনেকেই তাঁকে এই সিদ্ধান্ত নিতে বারণ করেছিলেন। এ দিন ফ্লোরিডার রিপাবলিকান প্রতিনিধি ইলিনা রস-লেটিনেন জানান, ‘‘ট্রাম্প সাধ্যের মধ্যে সব কিছু পাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ তো ঠিক তার উল্টো।’’ স্পিকার ও উইসকনসিনের রিপাবলিকান সদস্য পল ডি রায়ান শুধু ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘‘ওবামা প্রশাসন ভর্তুকি দিতে গিয়ে কংগ্রেসের কর্তৃত্ব খর্ব করার দিকে এগিয়েছিল।’’
স্বাস্থ্য এবং জনপরিষেবা দফতরের হিসেব অনুযায়ী, বছরে প্রায় ৬০ লক্ষ মার্কিন এই ভর্তুকির সুবিধা পান। যে ভর্তুকির জন্য ২০১৭ সালে সরকারকে দিতে হবে ৭০০ কোটি ডলার। ভর্তুকি না পেলে বিমাসংস্থাগুলো আগামী বছর অন্তত ২০ শতাংশ দর বাড়িয়ে দেবে। তবে আগামী বছর বিমা ক্ষেত্রে তেমন প্রভাব পড়বে না। বিরাট পরিবর্তন শুরু হবে ২০১৯ সালে।
রোগী, চিকিৎসক, হাসপাতাল কর্মী ও বিমাসংস্থার নিয়ন্ত্রকদের কপালে ভাঁজ এখনই। কারণ তাঁদের খরচ বাড়বে। আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি-র প্রেসিডেন্ট ক্রিস হ্যানসেন বলছেন, ‘‘এই সিদ্ধান্তের ফলে লক্ষ লক্ষ ক্যানসার রোগী বা যাঁরা প্রচুর লড়াইয়ের পরে ক্যানসারকে হারিয়ে জীবনে ফিরেছেন, তাঁরা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।’’