দূরবীনে চোখ আফগান পড়ুয়ার —ছবি সংগৃহীত।
গত জুলাই মাসেই পোল্যান্ডে অনুষ্ঠিত জ্যোতির্বিজ্ঞান ও অ্যাস্ট্রোফিজিক্স বা নভোপদার্থবিদ্যার একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছিলেন কয়েক জন আফগান ছাত্রী। অগস্টের মাঝামাঝি সে দেশে তালিবানি শাসন শুরু হওয়ার পর থেকেই তাঁরা গৃহবন্দি। বিজ্ঞানচর্চা, গবেষণার পাঠ চুকিয়ে প্রাণ বাঁচাতে কেউ কেউ স্বদেশ ছেড়েছেন। ‘নেচার’ পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আফগানিস্তানের ভূতত্ত্ববিদ হামিদুল্লা ওয়াইজি বলেছেন, ‘সব শেষ, আমাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত।’ খননকার্য সংক্রান্ত একটি বিশেষ গবেষণার কাজে সদ্যই তাঁকে নিয়োগ করেছিল আফগানিস্তানের খনি ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক। সে সব এখন বন্ধ। নেটমাধ্যমে প্রশ্ন করছেন অনেকে, ‘টেলিস্কোপ নয়, গবেষকদের হাতে কি এ বার উঠবে বন্দুক?’
সম্প্রতি তালিবান বাহিনী কাবুল দখল করার পর থেকেই রাজধানী শহর কাবুলের সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গবেষণা কেন্দ্র বন্ধ। বিদেশি অর্থসাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তা আর কখনও খুলবে কি না, তা-ও জানেন না সে দেশের গবেষকরা। আরও এক ভূতত্ত্ববিদ নাজিবুল্লা কাকর বলেন, ‘‘বিজ্ঞানী মহলের কাছে আফগানিস্তান একটি ব্ল্যাক হোল।’’ একটি বিষয় নিয়ে গবেষণার জন্য ২০১৪ সালে আফগানিস্তানে যে ‘সিসমিক নেটওয়ার্ক’ তৈরি করা হয়েছিল, তার মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন নাজিবুল্লা। সে দেশের গবেষক মহম্মদ আসিম মায়ারের কথায়, ‘‘এখানে গবেষকদের ভবিষ্যত অন্ধকার।’’
পরিবসংখ্যান বলছে, প্রথম দফার তালিবানি শাসনের পর আফগানিস্তানে ১০০টির বেশি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছিল। সব বিশ্ববিদ্যালয় ধরে ২০০১ সালে মোট পড়ুয়ার সংখ্যা যেখানে ৮ হাজার ছিল, সেখানে ২০১৮ সালে তা বেড়ে ১ লক্ষ ৭০ হাজার দাঁড়ায়। তার মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা এক তৃতীয়াংশ। কাবুলের কাতেব বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানী আত্তাউল্লাহ আহমদি বলছেন, ‘‘বিগত ২০ বছর ধরে আমরা যা করেছি, সব ধ্বংস হয়ে যেতে বসেছে।’’
গবেষকদের আন্তর্জাতিক মঞ্চ ‘স্কলার্স অ্যাট রিস্ক’-এর বক্তব্য, ‘‘বিজ্ঞানচর্চা, গবেষণা— এ সব নিয়ে তালিবানের কিছু আসে যায় না। এখন ওই দেশে গবেষক আর পড়ুয়াদের জীবন সত্যিই বিপন্ন। তালিবান বলছে, মেয়েদের পড়াশোনা করতে দেবে। কিন্তু কী পড়াশোনা করতে দেবে, তা বোঝা যাচ্ছে না।’’