টিন্ডার ভরছে অনুরোধে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
আকাশে বারুদের গন্ধ। পদে পদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ভয়। সব মিলিয়ে ইউক্রেনের রাজধানী কিভ যেন এক সন্ত্রস্ত শহর। রাশিয়ার আক্রমণ থেকে বাঁচতে মানুষ রাজধানী ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছেন। কিন্তু অন্য বিপদ তাড়া করছে কিভের রমনীদের। ডেটিং অ্যাপ টিন্ডারে ঝাঁকে ঝাঁকে আসছে বন্ধুত্বের আবদার। কিন্তু সেই বন্ধুত্ব চাইছে শত্রুপক্ষ রাশিয়ার সৈনিকরাই। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, রুশ সৈনিকদের লোভ থেকে শরীর বাঁচাতে ইউক্রেনের মহিলারা তাই ঠিকানা বদলে দিচ্ছেন তাঁদের টিন্ডার অ্যাপে। কিন্তু তাতেও কতটা রক্ষা পাওয়া যাবে তা নিয়ে চিন্তা যাচ্ছে না। কারণ, চারদিকে শত্রু শিবিরের সামরিক বাহিনী। আর তার মধ্যেই মিশে রয়েছে লোলুপ চোখ।
রুশ সৈনিকদের ডেটিং আবদার আসতে শুরু করার পরেই টিন্ডারের মহিলা গ্রাহকরা সতর্ক হয়ে গিয়েছেন। রাজধানী কিভের পরেই ইউক্রেনের বড় শবর খারকিভ। এখন তাই কিভের মেয়েরা সম্ভ্রম বাঁচাতে এখনও পর্যন্ত কিছুটা নিরাপদ খারকিভকে ঠিকানা হিসেবে বাছছেন। জানা গিয়েছে, দলে দলে মেয়েরা টিন্ডারের সেটিংসে গিয়ে লোকেশন বদলে খারকিভ করে দিচ্ছেন। ইউক্রেনের এক ভিডিয়ো প্রোডিউসার ডাসা সিনলেনিকোভা সংবাদমাধ্যকে বলেছেন, ‘‘আমি আসলে কিভের বাসিন্দা। কিন্তু এখন টিন্ডারে ঠিকানা বদলে খারকিভ করে দিয়েছি। কারণ, আমার এক বন্ধুর কাছে জানতে পেরেছি টিন্ডার ছেয়ে রয়েছে রাশিয়ার সেনা।’’
জানা গিয়েছে, মহিলাদের কাছে ডেটিং-এর আবদার জানাতে রুশ সৈনিকরা সামরিক পোশাকেই আবির্ভূত হচ্ছেন। ডাসা জানিয়েছেন, এক রুশ সৈনিক বিছনায় অশ্লীল ইঙ্গিতে শুয়ে হাতে পিস্তল নিয়ে ছবি দিয়েছেন। আবার অনেকে খালি গায়ের ছবি দিয়ে মেয়েদের প্রলুব্ধ করতে চাইছেন। সংবাদমাধ্যমের দাবি, ডাসার মতো একই অভিজ্ঞতা অনেক ইউক্রেন রমনীর। টিন্ডারে তৈরি হওয়া নতুন বিপদ সম্পর্কে জানাতে গিয়ে ডাসা বলেছেন, ‘‘যাঁরা অনুরোধ পাঠাচ্ছেন, তাঁদের কারও ছবিই আমায় আকৃষ্ট করেনি। আর কোনও ভাবেই আমি শত্রুপক্ষের কারও সঙ্গে শুতে চাই না। আমি তাই প্রতিটি অনুরোধ পত্রপাঠ বাতিল করে দিয়েছি।’’
তবে সবাইকে যে প্রথমেই ডাসা বাতিল করেছেন এমনটা নয়। শত্রুপক্ষের এক সৈনিকের সঙ্গে খানিক চ্যাটও করেছেন। ডাসা জানিয়েছেন, সেই সৈনিকের নাম আন্দ্রৈ। বয়স ৩১। টিন্ডারে আন্দ্রৈ যে ছবি দিয়েছেন তাতে হাতে রয়েছে কালাশনিকভ রাইফেল ও অন্যন্য যুদ্ধ সরঞ্জাম। ডাসা তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘আপনার কী অতীতে ইউক্রেন ভ্রমণের কোনও পরিকল্পনা ছিল।’’ জবাবে আন্দ্রৈ জানান, ‘‘আমার তো খুবই ইচ্ছা ছিল এখানে আসার। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে তো রাশিয়ার বাসিন্দাদের এখানে প্রবেশাধিকারই ছিল না।’’
এখানেই থামেনি ওঁদের চ্যাটালাপ। আন্দ্রৈ জানিয়েছেন, তাঁর জন্ম বেলগোরদে। তিনি আদতে ইঞ্জিনিয়র। ২০১৪ সালের আগে খারকিভে বেড়াতে এসেছিলেন এবং খুব ভাল লেগেছিল। লিখেছেন, ‘‘আমি বেড়াতে যেতে ভালবাসি। এশিয়া, বিশেষ করে তাইল্যান্ড যাওয়ার খুব ইচ্ছা। ইউরোপ বেরানোরও শখ রয়েছে। কিন্তু এখন সময় ভাল নয়। কারণ, রাশিয়াকে কেউ পছন্দ করছে না। ফলে কোনও দেশই ভিসা দিতে চাইবে না।’’ ডাসার সঙ্গে কথার সময়ে অনেক কথা জানালেও আন্দ্রৈ অবশ্য এ কথা স্বীকার করেননি যে, তিনি এখন পুতিনের পাঠানো সেনার অঙ্গ হিসেবে ইউক্রেনে এসেছেন। ডাসা দাবি করেছেন, ‘‘এই ভাবেই রুশ সৈনিকরা বন্ধুত্ব পাতাতে চাইছেন। ভাবতে অবাক লাগছে যে এরাই আবার আমাদের দেশ আক্রমণে যুক্ত। তবে আমি মনে করি এই ভাবে ওরা আমাদের কাছে টানতে পারবে না।’’
রুশ সেনা শুধু ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলাই নয়, সেই সঙ্গে সাইবার হামলাও শুরু করে দিয়েছে বলে খবর। সেই সঙ্গে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরের দখল নিতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেন প্রশাসন অবশ্য দেশের সব নাগরিককেই মোবাইল ফোন ব্যবহার করা বন্ধ রাখতে বলেছে। বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগ মাধ্যম।