পার্লামেন্টে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।—ছবি এপি।
প্রথম ভোটে পাশ করে গেলেও দ্বিতীয় ভোটে আটকে গেলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
মঙ্গলবার সন্ধেবেলা ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে বরিস তাঁর ১১০ পাতার ‘উইথড্রয়াল এগ্রিমেন্ট বিল’ পেশ করেছিলেন। এই বিল-ই আসলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট চুক্তি, যা ইতিমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) মেনেও নিয়েছে। দীর্ঘ বিলটির কপি আজই সব ব্রিটিশ এমপিকে দেওয়া হয়েছে। তবে বিলটি নিয়ে পার্লামেন্টে এখনও কোনও আলোচনা হয়নি। আজ প্রথম ভোটটি হয় এই বিল নিয়েই। ‘মতাদর্শগত ভাবে’ (কোনও আলোচনার আগেই) বরিসের বিল মেনে নেন সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপি। বরিসের পক্ষে ভোট পড়ে ৩২৯, আর বিপক্ষে ২৯৯টি। ভোটের ফলে খুশি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই প্রথম ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ব্রেক্সিট নিয়ে একটা স্পষ্ট অবস্থান নিল।’’
কিন্তু কয়েক মিনিট পরের ভোটে ছবিটা একদম পাল্টে যায়। এই ভোটে বরিসের প্রস্তাব ছিল, তিন দিনের মধ্যে ব্রেক্সিট বিল নিয়ে আলোচনা শেষ করতে হবে এমপিদের। আজ সারা দিন ধরেই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিন দিনের মধ্যে ওই চুক্তি নিয়ে বিতর্ক সেরে ফেলবেন এমপি-রা, এমনটাই চাইছেন তিনি। না হলে ৩১ অক্টোবর ব্রেক্সিট করা সম্ভব হবে না।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সেই আশায় জল ঢেলে দিয়ে এ বার সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপি ভোট দেন প্রস্তাবের বিপক্ষে। বরিসের পক্ষে ভোট পড়ে ৩০৮টি, আর বিপক্ষে ৩২২টি। বিশালায়তনের বিলটি দেখেশুনে অধিকাংশ এমপি-ই বলছেন, গোটা বিষয়টি যথেষ্ট জটিল, তাড়াহুড়ো করে এ বিল পাশ করানো সম্ভব নয়। তিন দিনে ব্রেক্সিট বিল নিয়ে আলোচনা শেষ না হলে ঠিক ৯ দিন পরে ৩১ অক্টোবর ব্রিটেনের পক্ষে ইইউ ছেড়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। ফলে ইইউ কর্তাদের কাছে ব্রেক্সিট পিছিয়ে দেওয়ার আর্জি জানানো ছাড়া আর কোনও রাস্তা খোলাও রইল না প্রধানমন্ত্রী জনসনের সামনে।
পার্লামেন্ট তাঁর ‘তিন দিনের সময়সীমা’ মেনে না-নেওয়ায় প্রথমে বেজায় চটে যান প্রধানমন্ত্রী। ভোটের ফল প্রকাশ হওয়ামাত্র স্বভাবসিদ্ধ ভাবে হুমকি দিতে শুরু করেন— তাঁর ব্রেক্সিট বিল নিয়ে এ ভাবে টালবাহানা চালালে বিলটিই সরিয়ে নেবেন তিনি। তখন চুক্তিহীন ব্রেক্সিট ছাড়া ব্রিটেনের সামনে আর কোনও পথ থাকবে না।
তবে মুখে বললেও কাজে তা করেননি প্রধানমন্ত্রী। দ্বিতীয় ভোটের ফল প্রকাশের কিছু ক্ষণ পরে তিনি জানান, আজ পার্লামেন্টে যা আলাপ-আলোচনা হল, তা তিনি ইইউ নেতাদের সামনে তুলে ধরবেন। তার পরে যদি ইইউ কর্তারা মনে করেন, তা হলে ব্রেক্সিট পিছিয়ে দেওয়ার জন্য ৩১ অক্টোবরের পরেও ব্রিটেনকে আরও কিছু দিন সময় দেবেন তাঁরা।
কতটা সময়, তা এখনও অস্পষ্ট। ব্রেক্সিট পিছিয়ে দিতে আপত্তি থাকলেও বরিস ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, যদি একান্তই ব্রেক্সিট স্থগিত হয়, তা হলে তা একটু বেশি সময়ের জন্য হোক। তা হলে সেই সময়টা কাজে লাগিয়ে সাধারণ নির্বাচনের ডাক দেবেন তিনি। এখন পার্লামেন্টে তাঁর কনজ়ারভেটিভ দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। তাই বরিসের ইচ্ছে ভোটে জিতে আরও বেশি সংখ্যক এমপি নিয়ে পার্লামেন্ট দখল করবেন। কিন্তু ব্রেক্সিট যদি অল্প কিছু দিনের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়, তা হলে সাধারণ নির্বাচন করা যাবে না। যা বরিসের কাছে একদমই অনভিপ্রেত।
ইতিমধ্যে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক স্ট্রাসবুর্গে ইউরোপীয় পার্লামেন্টকে জানিয়েছেন, ব্রেক্সিটের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য কী প্রতিক্রিয়া জানানো হবে, তা নিয়ে ২৭ জন ইইউ নেতার সঙ্গে তিনি আলোচনা চালাচ্ছেন। এর পরে সেই মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাত পৌনে ন’টা নাগাদ হাউস অব কমন্সের সাধারণ অধিবেশন শেষ হয়। আগামিকালের অধিবেশনে প্রথমেই আলোচনা হবে রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথের বক্তৃতা নিয়ে।