জেসিকা লিডস। ১৯৭৮ সালের ছবি।
শ্লীলতাহানির চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠল ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। প্রায় একই ধরনের অভিযোগ তুললেন আমেরিকার দুই প্রান্তের দুই মহিলা। দু’জনেরই অভিযোগ, আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ট্রাম্প বহু দিন আগে অত্যন্ত কুরুচিকর ব্যবহার করেছিলেন তাঁদের সঙ্গে। দু’জনেরই অভিযোগ, ট্রাম্প ওই সময় তাঁদের সঙ্গে এমন ব্যবহার করেছিলেন, যা থেকে তাঁদের মনে হয়েছে, শুধুমাত্র ভুলবশত অমন আচরণ করেননি অধুনা রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী। ওই স্বভাব ট্রাম্পের মজ্জাগত। ‘ট্রাম্পের হাতে মান-সম্মান খোয়ানো’ দুই মহিলার এক জন, ম্যানহাটনের বাসিন্দা জেসিকা লিডস ই মেলে তাঁর লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’কে। অন্য জন ওহায়োর বাসিন্দা র্যাচেল কুক্স ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছিলেন তাঁর বন্ধুবান্ধব মহলে। তাঁদেরই কেউ কেউ সে খবর জানিয়েছেন সংবাদ মাধ্যমে। দ্বিতীয় ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে’ তাঁর অতীতের ‘নারীসঙ্গ-লীলা’ নিয়ে রিপাবলিকান প্রার্থীকে মডারেটর সরাসরি প্রশ্ন করলে ‘একেবারে বাজে কথা, যত সব আজগুবি’ বলে তা অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। আর মার্কিন টেলিভিশনে তা দেখার পরেই আরও ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন ওই দুই মহিলা। তাঁদের সেই ক্ষোভ আর চাপা না থেকে তা গড়াতে গড়াতে সংবাদ মাধ্যমের দরজায় পৌঁছে গিয়েছে। আর দুই মহিলার অভিযোগ প্রকাশ্যে এসে পড়ার পর অতীতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘নারীসঙ্গ-লীলা’র আরও অনেক কাহিনী ডালপালা মেলতে শুরু করেছে।
‘‘ট্রাম্প মিথ্যে বলছে দেখে (দ্বিতীয় প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে) আমার তো টেলিভিশনের স্ক্রিনেই ঘুষি মারতে ইচ্ছে করছিল’’, বলেছেন ম্যানহাটনের বাসিন্দা ৭৪ বছর বয়সী জেসিকা লিডস।
কেন টেলিভিশনের স্ক্রিনে ঘুষি মারতে ইচ্ছে করছিল তাঁর?
জেসিকা লিডস।
জেসিকা মার্কিন সংবাদপত্র ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’কে পাঠানো ই মেল ও পরে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘ট্রাম্প ডাহা মিথ্যে কথা বলেছে। সেটা তিন দশকেরও বেশি আগেকার কথা। আমার বয়স তখন ৩৮ বছর। কানেকটিকাটে থাকি। তখন একটা কাগজ সংস্থার বাণিজ্যিক প্রতিনিধি হিসেবে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছি। তেমনই একটা কাজে বিমানে নিউইয়র্ক যাচ্ছিলাম। বিমানে উঠে প্রথম শ্রেণির একটা সিটে বসেছিলাম। কিন্তু কোনও এক কারণে এক বিমানসেবিকা আমাকে ওই সিটটা ছেড়ে দিয়ে একটি দু’ সিটের কেবিনে গিয়ে বসতে বলেন। সেখানে গিয়েই দেখি, আমার পাশের সিটে বসে রয়েছে ট্রাম্প। তার আগে ট্রাম্পের সঙ্গে আমার কোনও আলাপ, পরিচয় ছিল না। সিটে বসার মিনিট পঁয়তাল্লিশের মধ্যেই ট্রাম্প আমার সঙ্গে যেচে আলাপ করে। জানতে চায়, আমি বিবাহিত কি না। আমি যখন বলি, সদ্য আমার বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে, তখনই ট্রাম্প আমার গা ঘেঁযে বসার চেষ্টা করতে থাকে, নানা অজুহাতে। প্রথমে ওর কনুই দিয়ে আমাকে ঠেলতে থাকে ট্রাম্প। তার পর হঠাৎই আমার মুখের ওপর ঝুঁকে পড়ে চুমু খায়। আমার শরীরের আপত্তিজনক জায়গায় হাত দেয়। তার পরেই অক্টোপাসের মতো জড়িয়ে ধরে হাত দেয় আমার গোপনাঙ্গে। আমি তাতে খুব রেগে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠি। উঠে গিয়ে বিমানের পিছনের দিকের একটি সিটে চলে যাই।’’ জেসিকা অবশ্য তখন লিখিত ভাবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন।
এত বছরের পুরনো ঘটনা এখন কেন প্রকাশ্যে আনলেন জেসিকা?
তাঁর জবাব, ‘‘টেলিভিশনে ট্রাম্পকে ডাহা মিথ্যে কথা বলতে দেখেই মেজাজ গরম হয়ে গিয়েছে আমার। এই মিথ্যেবাদী লোকটা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে চাইছে? তখনই ঠিক করি, সব কিছু প্রকাশ্যে বলে দেব।’’
ডোনাল্ড ট্রাম্প।
আরেক অভিযোগকারিণী ওহায়োর বাসিন্দা র্যাচেল কুক্সকেও তাতিয়ে দিয়েছিল মার্কিন টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত দ্বিতীয় ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট’। ওই বিতর্কে ট্রাম্প একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে জানান, তাঁর কর্কশ কথাবার্তা হয়তো কখনও সখনও কাউকে চটিয়ে থাকতে পারে। কিন্তু কোনও দিনই তিনি কারও সঙ্গে কোনও রকম অশালীন আচরণ করেননি। ওই কথা শুনেই চটে যান র্যাচেল। অনেক দিন আগেকার একটা ঘটনার কথা তাঁর মনে পড়ে যায়।
র্যাচেল বলেছেন, ‘‘সেটা ২০০৫ সাল। তখন আমার ২২ বছর বয়স। ম্যানহাটনের ‘ট্রাম্প টাওয়ারে’ একটি রিয়েল এস্টেট লগ্নি সংস্থায় কাজ করতাম। এক দিন সকালে অফিসে এলিভেটরে উঠতে গিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা। তার আগে ট্রাম্পকে দূর থেকে দেখেছি বটে, কিন্তু অত সামনাসামনি ট্রাম্পকে দেখিনি কখনও। ট্রাম্পের সংস্থার সঙ্গে আমার অফিসের ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে বলে আমি যেচেই গিয়ে ওই দিন আলাপ করেছিলাম ট্রাম্পের সঙ্গে। তাতে ট্রাম্প নিজেই হাত বাড়িয়ে আমার সঙ্গে করমর্দন করেন। তার পরেই আমাকে জড়িয়ে ধরেন। আমার চিবুকে চুমু খান প্রথমে। তার পর হঠাৎই আমার মুখের ওপর ঝুঁকে পড়ে আমাকে চুমু খান। আমাকে সরে যাওয়ার ফরুসতও দেননি। আমার মোটেও মনে হয়নি, সেটা উনি হঠাৎ করেই আবেগের বশে করে ফেলেছেন। বরং বেশ ভাল করেই বুঝেছিলাম, উনি ইচ্ছে করেই আমার সঙ্গে ওই অভব্য আচরণটা করেছিলেন। আমার মনে হয়েছিল, ট্রাম্পের কাছে মেয়েদের কোনও দামই নেই। কোনও সম্মানই নেই। আমি অফিসে গিয়ে শুধু টেলিফোনে কাঁদতে কাঁদতে বোনকে সেই অপমানের কথা বলতে পেরেছিলাম। আর সন্ধ্যায় অফিস থেকে বেরিয়ে আমার প্রেমিক ক্লিন্ট হ্যাকেনবার্গের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে তাকে কাঁদতে কাঁদতে আমার অপমানের কথা, দুঃখের কথা বলতে পেরেছিলাম।’’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মহিলাদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ অবশ্য নতুন কিছু নয়। কিছু দিন আগে এমনই একটি অভিযোগ করেছিলেন প্রাক্তন ‘মিস উটা’ টেম্পল টেগার্ট। দুই মহিলার সাম্প্রতিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার টেলিফোনে ধরা হলে টেম্পল ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’কে বলেন, ‘‘ট্রাম্প বহু বার আমাকে মুখে চুমু খেয়েছে, আমার সম্মতি ছাড়াই।’’ টেম্পল সংবাদ মাধ্যমের হাতে এমন একটি রেকর্ডেড টেপ তুলে দিয়েছেন, যেখানে ট্রাম্পকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমি হঠাৎ করেই চুমুটা খেতে শুরু করে দিই। এটা অনেকটা চুম্বকের মতো। চুমু খাওয়ার ব্যাপারে আমি অপেক্ষা করি না।’’
হাতেগরম একরাশ অভিযোগ নিয়ে মার্কিন দৈনিক ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’-এর এক মহিলা সাংবাদিক গিয়েছিলেন রিপাবলিকান প্রার্থীর কাছে। তাঁর মতামত জানতে। তাঁর চোখাচোখা প্রশ্ন শুনে খুব রেগে গিয়ে চেঁচিয়ে-টেঁচিয়ে ট্রাম্প বলতে থাকেন, ‘‘আমি ও সব কোনও দিন করিনি। করি না। ফালতু কথা যত্তোসব! যাও, তুমি মনুষ্য পদবাচ্যই নও।’’
আরও পড়ুন- কেচ্ছা নিয়েই ব্যস্ত রইলেন হিলারি-ট্রাম্প