‘শান্তি’ অলিম্পিক্সে সাড়া, এক টেবিলে দুই কোরিয়া

বিবদমান দু’পক্ষকে কাছে টানল শীতের অলিম্পিক্সই। ফেব্রুয়ারিতে এই আসর বসছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্যেয়ংচ্যাং-এ।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

সোল শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:২১
Share:

দু’বছরেরও বেশি সময় পরে এক টেবিলে এল দুই কোরিয়া। —প্রতীকী ছবি।

শীতে কাবু আমেরিকা। বম্ব সাইক্লোনের দাপটে জমে গিয়েছে নায়াগ্রা জলপ্রপাত থেকে শুরু করে স্ট্যাচু অব লিবার্টির আশপাশও। আর ঠিক তখনই বরফ গলার ইঙ্গিত মিলল অন্য প্রান্ত থেকে। দু’বছরেরও বেশি সময় পরে আজ এক টেবিলে এল দুই কোরিয়া।

Advertisement

বিবদমান দু’পক্ষকে কাছে টানল শীতের অলিম্পিক্সই। ফেব্রুয়ারিতে এই আসর বসছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্যেয়ংচ্যাং-এ। আজ বৈঠক শেষে উত্তর কোরিয়া জানাল, তারা সেখানে প্রতিযোগী পাঠাতে তৈরি। এমনকী, দীর্ঘ ১৩ বছর পরে একঝাঁক তন্বী চিয়ারলিডার্স-ও পাঠাবে পিয়ংইয়ং। কিন্তু কী ভাবে? দক্ষিণ কোরিয়ার তরফে নিষেধাজ্ঞার খাঁড়া রয়েছে যে! সমাধান বাতলে দেওয়ার মতো করেই দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধি চো মিয়ং গিয়ন জানালেন, পিয়ংইয়ংয়ের উপর থেকে সাময়িক ভাবে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথাও ভাবছে সোল।

তা হলে তো মিটেই গেল। বৈঠক শেষে দু’দেশের কর্তাদের হাসি-হাসি মুখে এমন একটা আভাস মিললেও, কূটনীতিকেরা কিন্তু অন্য সমীকরণ দেখছেন। তাঁদের দাবি, সোলকে পাশে টেনে উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন আদতে ওয়াশিংটন জোটের মধ্যে ভাঙন ধরাতে চাইছেন। ‘খেলার ছলে’ আন্তর্জাতিক চাপ কমাতে চাইছে পিয়ংইয়ং। পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষায় বেপরোয়া কিমকে ঠেকাতে বরবারই সুর চড়িয়ে এসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আলোচনা নয়, উত্তর কোরিয়াকে অন্য পথে জবাব দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। পারমাণবিক অস্ত্রে কার ভাঁড়ার ভারী, তা নিয়েও শুরু হয়েছিল তরজা। তবে সম্প্রতি সুর নামিয়ে ট্রাম্প জানান, প্রয়োজনে কিমের সঙ্গে বৈঠকে আপত্তি নেই তাঁর। কূটনীতিকদের একাংশ বলছেন, এই ভোলবদল সম্ভবত দুই কোরিয়ার বৈঠক-নির্ঘণ্ট আঁচ করেই।

Advertisement

দক্ষিণ কোরিয়ার ভাগে ‘যুদ্ধবিরতি’ গ্রাম পানমুনজমের যে ‘পিস হাউস’, উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত পেরিয়ে জয়েন্ট সিকিওরিটি এরিয়া হয়ে দিনের শুরুতেই সেখানে পৌঁছন উত্তর কোরিয়ার নেতারা। বৈঠক শুরু হয় স্থানীয় সময় সকাল ১০টা নাগাদ। চলে প্রায় বিকেল পর্যন্ত। শীতকালীন অলিম্পিক্সে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে যে টানাপড়েন চলছিল, তা কাটিয়ে উঠতে চান বলে দিন কয়েক আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কিম। আজ তাঁর হয়ে বৈঠকে উত্তরের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন রি সন গন। দুই কোরিয়ার পুনর্মিলনের লক্ষ্যে গঠিত ‘কমিটি ফর পিসফুল রিউইনিফিকেশন অব দ্য ফাদারল্যান্ড’-এর চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন রি। আর সোলের হয়ে নেতৃত্ব দেন সে দেশের একত্রীকরণ মন্ত্রী (ইউনিফিকেশন মিনিস্টার) চো মিয়ং। দু’পক্ষই এই বৈঠকটিকে সমঝোতার পথে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।

সোলের দাবি, কোরীয় উপদ্বীপ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার জেরে যে সব নাগরিক আত্মীয়-পরিজনের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছেন, তাঁদের নিয়েও আলোচনা হয়েছে আজ। অলিম্পিক্স চলাকালীনই হবে পারিবারিক পুনর্মিলন উৎসব। এতে সায় দিয়েছে কিমের দেশও। সোল চায়, গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দু’দেশের অ্যাথলিটরাই এক সঙ্গে মার্চ পাস্ট করুক। অবিচ্ছিন্ন কোরীয় উপদ্বীপের পতাকা হাতে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল ২০০৬-এর অলিম্পিক্সে। উত্তর কোরিয়া অবশ্য এই প্রস্তাবে রাজি হয়েছে কি না, জানা যায়নি। তবে ধারাবাহিক আলোচনায় উপদ্বীপ এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে পিয়ংইয়ং।

পিয়ংইয়ংয়ের একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার প্রতিবাদে ২০১৬-র ফেব্রুয়ারিতে কেয়াসং শিল্প তালুক থেকে একটি যৌথ অর্থনৈতিক প্রকল্প বাতিল করে দিয়েছিল সোল। সাম্প্রতিক ঝামেলার সূত্রপাত সেখান থেকেই। তার পর মুখ দেখাদেখি ছাড়, টেলি-যোগাযোগও বন্ধ হয়ে যায় দু’দেশে। বুধবার থেকে ফের তা শুরুর প্রস্তাব গিয়েছে পিয়ংইয়ং। শীঘ্রই দু’দেশের মধ্যে মিলিটারি হটলাইন চালু হবে বলেও শোনা যাচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement