বিস্ফোরণস্থল। ছবি: রয়টার্স।
রাত এগারোটা। খানিক ক্ষণ আগেই শেষ হয়েছে সুপার লিগের ম্যাচ। খেলা দেখতে আসা ভিড়টাও তত ক্ষণে ঘরমুখো। সদ্য নতুন করে সাজানো ফুটবল স্টেডিয়ামের বাইরে তখন পুলিশের জটলা। আচমকা কানফাটা শব্দে কেঁপে ওঠে চারপাশ। কিছু বুঝে ওঠার আগে মিনিট খানেকের মধ্যে ফের জোরালো আওয়াজ।
কাল রাতে তুরস্কের ইস্তানবুলে জোড়়া বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে ৩৮ জনের। আহতের সংখ্যা দু’শো ছুঁইছুঁই। নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই পুলিশকর্মী। আজ সকালে সাংবাদিক সম্মেলনের সময় তুরস্ক সরকারও স্বীকার করে নিয়েছে বেশি সংখ্যায় পুলিশকে মারাই লক্ষ্য ছিল জঙ্গিদের। তাই ম্যাচ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে দর্শকরা বাড়ির দিকে রওনা হওয়ার পরেই বিস্ফোরণ ঘটে। স্টেডিয়ামের একটু দূরেই তাকসিম স্কোয়ার। প্রচুর বিদেশি পর্যটক আসেন সেখানে।
কী হয়েছিল কাল রাতে? কাল ম্যাচ চলাকালীন দর্শক আর খেলোয়াড়দের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। খেলা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও পুলিশের
জটলা ছিল স্টেডিয়ামের বাইরে। আর সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগায় জঙ্গিরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বেসকিতাস স্টেডিয়ামের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাড়িতে প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটে। বিস্ফোরণের
শব্দে শহরের একটা বড় অংশ কেঁপে ওঠে। মুহূর্তের মধ্যে অনেক পুলিশকর্মীর দেহ ছিটকে পড়ে রাস্তার চারপাশে। এর মিনিট খানেকের মধ্যে আবার একটা বিস্ফোরণ। স্টেডিয়ামের মাইল খানেকের মধ্যে একটা পার্কে এ বার নিজেকে উড়িয়ে দেয় এক আত্মঘাতী জঙ্গি। সেখানে অত রাতেও বেশ কয়েক জন পুলিশ মোতায়েন ছিল। হামলার লক্ষ্য ছিল তারাই। কাল প্রথম বিস্ফোরণের
পরে গুলি চলার শব্দও পাওয়া গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি তুলনায় কম জোরালো ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এখনও পর্যন্ত কোনও জঙ্গি সংগঠন এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে তুরস্ক সরকারের ইঙ্গিত, আইএস নয়, এর পিছনে রয়েছে দেশেরই কুর্দ জঙ্গি বাহিনীর হাত।
সেনা অভ্যুত্থান থেকে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ। একের পর এক
অস্থিরতায় জর্জরিত তুরস্কের রাজনীতি। চলতি বছরের জুন মাসে ইস্তানবুলেরই আতাতুর্ক বিমানবন্দরে সন্ত্রাসবাদী হামলায় মৃত্যু হয়েছিল ৪৪ জনের। তার পরের মাসেই সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়। কড়া হাতে সেই চেষ্টা ব্যর্থ করেছিলেন দেশের প্রেসিডেন্ট রিসেপ টি এরডোগান। তার পর, অগস্টে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী গাজিয়ানতেপ শহরে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ৫৪ জনের। শুধু তাই নয়, গোটা বছর ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছোটখাটো সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েই চলেছে।
কালকের জঙ্গি হামলারও কড়া সমালোচনা করেছেন এরডোগান। একটি বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘‘কোন জঙ্গি সংগঠন কী কায়দায় হামলা চালাল, সেটা বড় কথা নয়। যখনই তুরস্ক সদর্থক ভাবে ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াতে চেয়েছে, রক্তাক্ত হামলায় তার জবাব এসেছে।’’ মার্কিন সরকারের মুখপাত্র আর ন্যাটো বাহিনীর সেক্রেটারি জেনারেলও কালকের হামলার কড়া সমালোচনা করেছেন।