তুতেনখামেনের মমি। ফাইল চিত্র।
কিশোর ফারাও তুতেনখামেনের সমাধির অদূরে কোনও গোপন কুঠুরিতে থাকতে পারে তাঁর শাশুড়ি তথা সৎ মা নেফারতিতির মমি। ব্রিটিশ সংবাদপত্র ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন এই দাবি করা হয়েছে। কয়েক বছর আগে তুতেনখামেনের সমাধিতে ইউরোপীয় গবেষকদলের অনুসন্ধানে ওই গোপন কক্ষ সন্ধানের ‘সূত্র’ মিলেছে বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
প্রাচীন মিশর সংক্রান্ত একাধিক গবেষণাপত্রে, নেফারতিতির ‘গুপ্ত সমাধির’ সম্ভবনার কথা বলা হয়েছে। ব্রিটিশ মিউজিয়ামের মিশর সংক্রান্ত বিভাগের প্রাক্তন প্রধান নিকোলাস রিভস এ প্রসঙ্গে বলেন, “তুতেনখামেনের সমাধিতে যে ছবিগুলি রয়েছে, তার মধ্যেই এর সঙ্কেত থাকতে পারে।’’ তিনি জানান, একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে নেফারতিতিকে সমাধিস্থ করছেন তুতেনখামেন। যা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই তাঁর মত।
প্রাচীন মিশরের ইতিহাসে ফারাও হিসাবে তুতেনখামেনের ভূমিকা তেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল না । কিন্তু ১৯২২ সালে খোঁজ পাওয়া তাঁর মমির সঙ্গে রাখা রাজকীয় ঐশ্বর্য টেক্কা দিয়েছিল বাকিদের। সেই সঙ্গে পরবর্তী সময়ে জুড়ে গিয়েছিল মৃতের প্রতিশোধ নেওয়ার অলৌকিক কিংবদন্তি। মিশরে অনেকেই বিশ্বাস করেন, তুতেনখামেনের মমিকে যাঁরা বিরক্ত করবেন, তাঁদের মৃত্যু অনির্বায। এই বিশ্বাসটা তৈরি হয়েছিল, ১০০ বছর আগে তুতেনখামেনের মমি আবিষ্কারের পর থেকেই। খননকার্যে ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ হাওয়ার্ড কার্টারের নেতৃত্বে যে সব কর্মী-গবেষকেরা যুক্ত ছিলেন, ঘটনাচক্রে তাঁদের মধ্যে অনেকেরই মৃত্যু ঘটেছিল অস্বাভাবিক ভাবে!
দীর্ঘ ৩,৩০০ বছর ধরে তুতেনখামেনের সমাধির ভিতর লুকিয়ে থাকা কক্ষের সন্ধান শুরু হয়েছিল কয়েক বছর আগেই। তুতেনখামেনের মতোই তাঁর শাশুড়ির সমাধিতেও বিপুল পরিমাণ ধনসম্পদ থাকতে পারে বলে সে সময় জানিয়েছিলেন নিকোলাস। বস্তুত, সুন্দরী নেফারতিতিই ওই সমাধিস্থলের ‘আসল মালিক’ হতে পারেন বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। নেফারতিতির মমির সন্ধান পেতে নিকোলাসের উদ্যোগে গত দেড় দশকে ফারাও বংশের একাধির মমির ডিএনএ পরীক্ষাও হয়েছিল।
তুতেনখামেন ছিলেন ফারাও চতুর্থ আমেনহোটেপ বা আখেনাতেনের জামাই। আখেনাতেন-এর স্ত্রী ছিলেন সুন্দরী নেফারতিতি। এঁদের পুত্রসন্তান ছিল না, ছিল সাতটি কন্যা। এঁদেরই এক জনকে বিয়ে করেছিলেন তুতেনখামেন। তিনি মিশরের ১৮তম রাজবংশের সবচেয়ে কম দিনের কিশোর সম্রাট। তাঁর জন্ম আমরানাতে, খ্রিস্টপূর্ব ১৩৪১ শতকে। রাজত্বকাল খ্রিস্টপূর্ব ১৩৩২-১৩২৩। তুতেনখামেনের শ্বশুর তথা নেফারতিতির স্বামী চতুর্থ আমেনহোটেপ ছিলেন প্রাচীন মিশরের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ফারাও। অন্য দিকে, তুতেনখামেন আদতে পুরোহিততন্ত্রের হাতের পুতুল ছিলেন বলেই ইতিহাসবিদদের একাংশের দাবি। অনেকে মনে করেন, গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছিলেন কিশোর ফারাও।