প্রতীকী ছবি।
প্রতিষেধক চলে এসেছে বাজারে। টিকাকরণ চলছে দ্রুত গতিতে। তবু ভাইরাসের ভোলবদলে বিজ্ঞানীদের চিন্তা মিটছে না। এ অবস্থায় শত্রুপক্ষকে আরও ভাল করে জানতে ‘হিউম্যান চ্যালেঞ্জ’ শুরু হচ্ছে ব্রিটেনে।
গোটা গবেষণার পিছনে রয়েছে ব্রিটেন সরকারের তৈরি ভ্যাকসিন টাস্কফোর্স, ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন, দ্য রয়্যাল ফ্রি লন্ডন এনএইচএস ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট এবং ‘এইচভিভো’ নামে একটি সংস্থা। বিষয়টা এ রকম— এত দিন গবেষণাগারে তৈরি সম্ভাব্য প্রতিষেধক মানবদেহে প্রয়োগ করে, তার প্রভাব পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছিল। জানার চেষ্টা করা হয়েছে প্রতিষেধকটি কতটা নিরাপদ ও কতটা কার্যকরী। ‘হিউম্যান চ্যালেঞ্জ’-এ মানুষের দেহে পরীক্ষামূলক ভাবে ভাইরাস সংক্রমণ ঘটানো হবে। এর জন্য সুস্থ, অল্পবয়সি স্বেচ্ছাসেবক বেছে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের শরীরে সার্স-কোভ-২ সংক্রমণ ঘটানো হবে।
গবেষণাটির নৈতিক মূল্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু সরকারি ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ট্রায়াল শুরু হবে। ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সি ৯০ জন স্বেচ্ছাসেবককে নিয়োগ করা হয়েছে। নিরাপদ ও নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে রেখে স্বেচ্ছাসেবকদের শরীরে ভাইরাস সংক্রমণ ঘটানো হবে। তার পরে তাঁদের শরীরে ভাইরাসের গতিবিধি, কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা হবে। এ ধরনের ‘হিউম্যান চ্যালেঞ্জ’ এই প্রথম নয়। ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, কলেরা, ফ্লু-র মতো রোগেও এমন গবেষণা করা হয়েছে। সংক্রমিতের কী চিকিৎসা হওয়া উচিত, তা জানতে এবং উপযোগী ভ্যাকসিন তৈরিতে ভাইরাসটিকে জানা খুবই জরুরি। ‘হিউম্যান চ্যালেঞ্জ’-এর রিপোর্টই একমাত্র বলে দিতে পারে, পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে।
ব্রিটেন সরকারের ভ্যাকসিন টাস্ক ফোর্সের অন্যতম কর্তা ক্লাইভ ডিক্স বলেন, ‘‘প্রত্যেক দেশবাসী যাতে নিরাপদ ও কার্যকরী প্রতিষেধক পান, সেই ব্যবস্থা আমরা ইতিমধ্যেই করেছি। কিন্তু পাশাপাশি কোভিড-১৯ রোধে নতুন ভ্যাকসিন তৈরি, কিংবা জোরদার চিকিৎসা ব্যবস্থা তৈরির বিষয়ে গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে। সেটা জরুরি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের আশা এই নতুন গবেষণা আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেবে। এ ভাবে হয়তো আমরা সার্স-কোভ-২-কে প্রতিরোধে সব চেয়ে কার্যকরী ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারব।’’
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, গবেষণার ঝুঁকি কমাতে প্রাথমিক ভাবে কম ক্ষতিকর স্ট্রেনগুলি প্রয়োগ করা হবে স্বেচ্ছাসেবকদের। অংশগ্রহণকারী হিসেবেও শুধুমাত্র সুস্থ, অল্পবয়সিদের নেওয়া হবে। পরবর্তী ধাপে, অল্প সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবককে সরকারি ছাড়পত্র পাওয়া ভ্যাকসিনগুলি দেওয়া হবে। তার পর তাঁদের ভাইরাসের সংস্পর্শে আনা হবে। পরীক্ষা করে দেখা হবে, ভাইরাসটিকে রুখতে কোন ভ্যাকসিন কতটা কার্যকর।
শিশুদের নিয়েও ট্রায়াল চলছে ব্রিটেনে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও টিকাপ্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা ৬ থেকে ১৭ বছর বয়সি ৩০০ শিশু-কিশোরকে নিয়ে পরীক্ষা শুরু করেছে। এ পর্যন্ত সমীক্ষাগুলোয় দেখা গিয়েছে ছোটদের উপর করোনার প্রকোপ কম। তাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হলে কী প্রভাব পড়ে, সেটাই পরীক্ষা করে দেখা হবে এই ট্রায়ালে।