জে ডি ভান্স এবং টিম ওয়ালজ়। ছবি: রয়টার্স।
বহু দিন পরে একটি ভদ্র ও পরিশীলিত রাজনৈতিক বিতর্ক দেখল আমেরিকা, যেখানে কোনও বক্তাই ব্যক্তিগত পারস্পরিক আক্রমণের দিকে যাননি। বরং তাঁদের আলোচনা সীমাবদ্ধ ছিল দেশ ও দশের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির মধ্যেই। গত কাল আমেরিকায় আসন্ন নির্বাচনের দুই ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জে ডি ভান্স এবং টিম ওয়ালজ়ের মধ্যে বিতর্ক সম্বন্ধে এটাই মত সাধারণ মানুষের। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের স্টুডিয়োয় হওয়া বিতর্কটি রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মধ্যে হওয়া প্রথম এবং সম্ভবত একমাত্র বিতর্ক।
এ বারের নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ‘রানিং মেট’ হিসেবে বেছে নিয়েছেন সেনেটর জে ডি ভান্সকে। অন্য দিকে, বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট, তথা নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের পছন্দের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মিনেসোটার গভর্নর টিম ওয়ালজ়। প্রসঙ্গত, ডোনাল্ড ট্রাম্পের থেকে বয়সে অনেক ছোট কমলা হ্যারিসের মনোনীত প্রার্থী ওয়ালজ় ঠিক কমলারই বয়সি। দু’জনেরই বয়স ৬০। অন্য দিকে, ৭৮ বছর বয়সি ট্রাম্পের পছন্দের ভান্স এঁদের সকলের থেকে অনেক তরুণ। তিনি সবে ৪০ ছুঁয়েছেন।
অসমবয়সি হলেও দুই ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে বেশ মিল রয়েছে। তাঁদের দু’জনেরই সরাসরি কোনও যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার অভিজ্ঞতা না থাকলেও সেনাবাহিনীতে থাকার কিছুটা অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত দু’জনেই নিয়েছিলেন খুব অল্প বয়সে, এবং তাঁরা দুজনেই মনে করেন যে, এই সচেতন সিদ্ধান্ত তাঁদের জীবনকে অনেকটা সদর্থক দিকে নিয়ে গিয়েছে।
দু’জনের মধ্যে আর একটি মিল— দু’জনের কাছে পরিবার খুব গুরুত্বপূরণ। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে এ কথা বহু বার বলেছেন দু’জনে। আমেরিকার আর পাঁচটা সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার এবং তাদের সংগ্রাম ও সাফল্যের অংশীদার তাঁরাও, দুই ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর এই ভাবমূর্তি তাঁদের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে অনেকটা সাহায্য করেছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
২০১৬ সালে প্রকাশিত ভান্সের আত্মজীবনী ‘হিলিবিলি এলিজি’ বহু দিন ধরে আমেরিকার বেস্টসেলার বইয়ের তালিকায় ছিল। ভান্স যে প্রদেশের বাসিন্দা, সেই ওহায়োর আপেলেচিয়া অঞ্চলের সাধারণ মানুষের দারিদ্র, নেশাসক্তি, বিচ্ছিন্নতা এই সব কিছুকে ভান্স তাঁর বইতে তুলে এনেছেন। তার সঙ্গে রয়েছে তাঁর নিজের লড়াই করে উঠে আসা এবং ইয়েল ল স্কুলে পৌঁছনোর কাহিনি। অন্য দিকে, গভর্নর ওয়ালজ়ও নিজেকে ‘সাধারণ মানুষ’ হিসেবেই তুলে ধরেন। তিনি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ও কোচ ছিলেন এবং দীর্ঘদিন ধরে ন্যাশনাল গার্ডের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
এমন দুই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিতর্কে গত কাল মধ্যবিত্ত মূল্যবোধই গুরুত্ব পেয়েছে। যে সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তার মধ্যে ছিল— অর্থনীতি, অভিবাসন, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতি, জলবায়ু, গর্ভপাতের অধিকার, বন্দুক-হিংসা ইত্যাদি। দুই প্রার্থীর মধ্যে ভান্স অত্যন্ত দক্ষ তার্কিক। তিনি কৌশলে বিতর্কিত বিষয়গুলি এড়িয়ে বারবার অর্থনীতি ও ট্রাম্পের ‘মেক ইন আমেরিকা’ নীতির কথা বলেছেন। তবে গর্ভপাত অধিকারের বিষয়ে ভান্স স্বীকার করে নিয়েছেন যে, এ বিষয়ে মানুষের সমর্থন পাওয়ার জন্য তাঁর দলকে আরও কাজ করতে হবে। শেষে বন্দুক-হিংসা প্রসঙ্গে ভান্স ও ওয়ালজ় স্বীকার করে নেন যে, সন্তানদের নিয়ে দু’জনেই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।
সৌজন্য বজায় রেখে বিতর্কে জিতে গেলেন দু’বাবা-ই।