যুবরাজ বিন সলমন। —ফাইল চিত্র
ভিন্দেশিদের জন্য মক্কা-মদিনার দরজা কার্যত বন্ধ রেখেই করোনা মোকাবিলার নেমেছে সৌদি আরব। জায়গায় জায়গায় চলছে স্বাস্থ্য পরীক্ষা। রাজধানী রিয়াধ এখন আঁটোসাঁটো নিরাপত্তায় মোড়া। সৌদি যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন (এমবিএস) কিন্তু এরই মধ্যে নিজের ‘পথের কাঁটা’ সরানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ। অন্তত দু’টি মার্কিন সংবাদমাধ্যমের দাবি, সরকার-বিরোধী চক্রান্তে শামিল থাকার অভিযোগে রাজা সলমন বিন আবদুলাজিজ আল-সৌদের ভাই এবং ভাইপো-সহ সৌদি রাজ পরিবারের তিন সিনিয়র সদস্যকে আটক করেছে সৌদি প্রশাসন।
সৌদি রাজ দরবার সূত্রের খবর, সৌদি রাজা এবং যুবরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালানোর দায়ে তিন জনকেই যাবজ্জীবন কিংবা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে। যার অর্থ, সিংহাসন দখলে সলমনের রাস্তা এ বার নিষ্কণ্টক হল বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক কুটনীতিক মহলের একটা বড় অংশ। যদিও যুবরাজের নির্দেশেই রাজা সলমনের ভাই আহমেদ বিন আবদুলাজিজ আল-সৌদ এবং ভাইপো মহম্মদ বিন নায়েফকে আটক করা হল কি না, তা নিয়ে মুখ খুলতে চায়নি সৌদি প্রশাসন। একটা সময় পর্যন্ত কিন্তু এই দুই রাজকুমারকেই সিংহাসনের অন্যতম যোগ্য দাবিদার বলে মনে করা হত। মার্কিন সংবাদমাধ্যমের দাবি, গত কাল সকালে এই দু’জনের পাশাপাশি নায়েফের ছোট ভাই রাজকুমার নওয়াফ বিন নায়েফকেও বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় সৌদি রয়্যাল গার্ডস।
রাজা সলমন এখন ৮৪। ২০১৬-য় যুবরাজ ঘোষণার পর থেকে এমবিএস-ই কার্যত সৌদির অঘোষিত শাসক হিসেবে সৌদি অর্থনীতি থেকে প্রতিরক্ষায় ছড়ি ঘোরাচ্ছেন। অথচ রাজ পরিবারের রীতি অনুযায়ী,
এর আগে সৌদি শাসকেরা বরাবর নিজের ভাইকেই সিংহাসনের উত্তরাধিকার দিয়ে এসেছেন। তাই এমবিএসের হাতে ক্ষমতা চলে যাওয়ায় পরিবারের অন্দরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। অভিযোগ, সেই কারণেই ২০১৭-য় সৌদি রাজ পরিবারের বহু সদস্য, মন্ত্রী এবং ব্যবসায়ীকে একটি হোটেলে বন্দি করে রাখা হয়েছিল খোদ যুবরাজের নির্দেশেই। সৌদি পরিবারের কট্টর সমালোচক বলে পরিচিত সাংবাদিক জামাল খাশোগি খুনের পিছনেও এমবিএসেরই হাত ছিল বলে দাবি।
খাশোগি-খুনের পরেই রাজার ভাই আহমেদ লন্ডন থেকে চলে আসেন রিয়াধে। অনেকেই বলেন, সিংহাসন লাভের তাগিদে। আহমেদের বয়স এখন সত্তরের কোঠায়। বলা হয়, দেশের একটা বড় অংশের সমর্থন রয়েছে তাঁর। দেশে ফেরার আগে লন্ডনে বিক্ষোভকারীদের মুখোমুখি হয়ে তাঁকে সৌদি পরিবারের বর্তমান নীতি নিয়ে সরব হতেও শোনা গিয়েছিল এক বার। একাধিক সংবাদমাধ্যমের দাবি, এর পর থেকেই সিংহাসনের দৌড়ে আহমেদকে নিজের জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বী বলে ভাবতে শুরু করেন। অন্দরের খবর, রাজার ভাইপো মহম্মদ বিন নায়েফকেও ২০১৭ থেকে লাগাতার ক্ষমতাদখলের পথ থেকে সরাতে চাইছেন এমবিএস। নায়েফ একটা সময়ে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। আল-কায়দা দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৭-য় রাতারাতি তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করে গৃহবন্দি করে রাখা হয়।
এ বারও আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়ার অভিযোগ উঠল যুবরাজের বিরুদ্ধেই। তবে রাজার ভাই ও দুই ভাইপোর বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্রে শামিল হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে, তা একেবারেই ভিত্তিহীন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আমেরিকার একটি নীতি বিশ্লেষক সংস্থার তরফে বেকা ওয়েসার যেমন বলেই দিলেন, ‘‘যুবরাজের এই পদক্ষেপ নিশ্চিত ভাবেই নিজের একছত্র ক্ষমতা ধরে রাখতে।’’