প্রতীকী ছবি
গত শীতে ছাদের টবে আলগোছে কিছু মৌরির দানা ফেলেছিলাম। নেহাতই এমনি। সারা শীত আপনমনে বরফ চাপিয়েছে সেই টবের ওপর। ভুলেই গিয়েছিলাম
মৌরির কথা। এ বছর গ্রীষ্মের শুরুতে দেখি সবুজ জীবন মাথা চাড়া দিচ্ছে একটু একটু করে। ২০২০-র ভাইরাস ঢাকা বিপর্যস্ত সময় বরফঢাকা গত শীতের কথা মনে পড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু এই বরফের মধ্যেই রয়ে যাচ্ছে আগামী গ্রীষ্মের জীবন। জীবনের আনন্দ। কোনও ভাইরাস তাকে দমাতে পারবে না।
কোনও অবাধ্য ভাইরাস আঙুল তুলে বলতে পারবে না, পুজোয় তোমরা আনন্দ কোরো না।
এখন ডেনভারে আস্তে আস্তে ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে। আর সঙ্গে সঙ্গে যেটা শুরু হয়েছে সেটা পুজোর প্রস্তুতি। অবশ্যই সেই প্রস্তুতি অন্যান্য বারের থেকে আলাদা। প্রবাসে বাঙালি জীবনেরর বেঁচে থাকাকে কিছুটা সহজ করে এই বিভিন্ন শহরের পুজো গুলো। এ বার তো আর অন্য বারের মতন স্কুল পাওয়া যাবে না। তাই কাছের হিন্দু মন্দিরে হবে ঘট পুজো। জীবনের নানা অঙ্গ গত কয়েক মাসে যে ভাবে অন্তর্জাল নির্ভর হয়ে যাচ্ছে, ডেনভারের পুজোর আয়োজনও তার শরিক হতে দ্বিধা করেনি।
বাঙালিমননে পুজো মানেই জলসা। পুজোয় কলকাতার শিল্পীদের অনুষ্ঠান একটা বড় আকর্ষণ। এ বারও তাই হবে। কিন্তু ওই অন্তর্জাল নির্ভর। মানে ‘ভার্চুয়াল’ পুজোর জলসা। কলকাতার বেশ কিছু নামী শিল্পী একসঙ্গে অনুষ্ঠান করবেন। আমরা সেই অনুষ্ঠানে অনলাইনে বাড়ি বসে শুনতে পারব। শীতের চাদরে গোটা শহর ঢেকে যাওয়ার ঠিক আগে শহর একবার জেগে ওঠে বাঙালিদের গানে-কবিতায়-নাটকে। পুজোর মিলন মেলা গমগম করে মানুষের আনন্দে। সেটা তো বন্ধ করে দেওয়া যায় না! সেই আনন্দকে টিকিয়ে রাখতেই অনলাইন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হযেছে এ বছর।
এ ভাবেই এই পুজোতে আমরা শিখে যাব, অতিমারির সময়েও পরস্পরকে নিরাপদে রেখে কী ভাবে আনন্দ করতে হয়। এই কঠিন সময়ে জীবনের এক টুকরো ভাললাগাকে বাঁচিয়ে রাখার শপথ নিয়েছি আমরা। জানি, গোটা পৃথিবীর বাঙালিরা এই একই শপথের শরিক।