মুহাম্মদ ইউনূস। —ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশের বাজারে আগুন। বেহাল অর্থনৈতিক অবস্থা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের কাজ চাই। এখনই কমাতে হবে জিনিসের দাম। জরুরি অর্থনৈতিক সংস্কার। কিন্তু অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের সে দিকে নজর নেই বলে অভিযোগ ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ব ব্যাঙ্কও উদ্বিগ্ন। শেখ হাসিনা সরকারের বিদায়ের পরে বিন্দুমাত্র কমেনি জনজীবনের দুর্ভোগ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির হাল করুণ। কিন্তু সে দেশের সরকার কখনও রাষ্ট্রপতিকে নিশানা করে, কখনও জাতীয় ভাষ্য ও ইতিহাসে বদল এনে মানুষের ‘দৃষ্টি ঘোরাতে’ তৎপর।
অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি জাতীয় ৮টি দিবস বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এগুলির অন্যতম ১৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিবসে শিশু দিবস, ১৫ অগস্ট শেখ মুজিবের
মৃত্যুদিনে জাতীয় শোক দিবস, ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিবস। সাউথ ব্লক মনে করছে, দিবস বাতিল করা বা না-করা সে দেশের সরকারের সিদ্ধান্ত। কিন্তু এ সবের থেকেও অনেক বড় সমস্যার মুখোমুখি বাংলাদেশ। সেগুলি মোকাবিলা আগে দরকার।
নয়াদিল্লি মনে করছে, পদে পদে উগ্র ভারত-বিরোধিতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে সরকার। আবার সেই সরকারই ভারত থেকে ডিম, পেঁয়াজ, কাঁচা লঙ্কার মতো নিত্যব্যবহার্য পণ্য এনে মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে চাইছে। মানুষ চাইছেন নির্বাচন। কিন্তু নির্বাচনের কোনও পথনির্দেশিকা দিচ্ছেন না ইউনূস সরকার। পাশাপাশি ‘বিশ্ব ব্যাঙ্ক বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’-এর অক্টোবর সংখ্যায়, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে টালবাহানায় দেশকে অস্থিরতার দিকে ঠেলে দেওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে সেই রিপোর্টে। আকাশছোঁয়া জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারি ব্যর্থতার পাশাপাশি শিল্পে নতুন বিনিয়োগ না হওয়ায় কর্মসংস্থানের অভাব ভাবিয়ে তুলছে অর্থনীতিবিদদের। খাদ্যে মূল্যবৃদ্ধি ঠেকিয়ে নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টিই অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন। দ্রব্যমূল্য এখন মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। ডিম থেকে কাঁচা লঙ্কা— ভারত থেকে আমদানি করেও সুফল মিলছে না। মুনাফাবাজ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের ঢাকা অফিসের শীর্ষ পর্যায়ের অর্থনীতিবিদ ধ্রুব শর্মা জানিয়েছেন, চলতি বছরে খাদ্যের দাম ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্য দিকে, চলতি অর্থ বছরে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি কমে হচ্ছে ৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্ব ব্যাঙ্কের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক-এর আশঙ্কা— মূল্যবৃদ্ধি, আর্থিক খাতের ভঙ্গুরতা ও খেলাপি ঋণের চাপ আগামী দিনগুলিতে আরও ভয়ঙ্কর হবে। তিনি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ অনেক বেশি। বিশ্ব ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস অনুযায়ী চলতি অর্থ বছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন কমছে। জিডিপি আগের অবস্থায় ফিরতে অনেকটাই সময় লাগবে।
বর্তমান সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আর্থিক খাতে সংস্কারের পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার তাগিদও দিয়েছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। তাদের মতে, রফতানি বহুমুখীকরণ, বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং শিক্ষার মান বাড়াতে হবে অবিলম্বে। আর সে কারণেই চাই গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকার।