নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী ডেভিড বল্টিমোর। ফাইল চিত্র।
করোনা সংক্রমণের খবর প্রথম মিলেছিল চিনের উহান শহরে। গোড়ার দিকে ভাইরাসের উৎস হিসেবে সন্দেহ করা হয়েছিল মাংসের বাজারটিকে। কিন্তু পরে সকলের নজর ঘোরে গবেষণাগারের দিকে। উহান শহরে একাধিক ভাইরোলজি ল্যাব রয়েছে। ল্যাব থেকে যে কোনও ভাবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে থাকতে পারে, সেই আশঙ্কা প্রথম উস্কে দিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞেরাই। তার মধ্যে অন্যতম ছিলেন আমেরিকার নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী ডেভিড বল্টিমোর। বিতর্ক যখন ফের ঘনিয়ে উঠছে, তখন নিজের পুরনো বক্তব্য থেকে পিছু হটলেন বল্টিমোর। বললেন, একটু বাড়িয়ে বলে ফেলেছিলেন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথম করোনা-সংক্রমণের খবর প্রকাশ্যে আসে। কিন্তু গত বছর মাঝামাঝি একটি বিতর্কিত তথ্য সামনে আসে। জানা যায়, ২০১৯-এর নভেম্বরেই তিন চিনা বিজ্ঞানী রহস্য-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেই সময় থেকে গবেষণাগার থেকে ভাইরাস ছড়ানোর তত্ত্ব ভেসে ওঠে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। এর মধ্যে ছিলেন আমেরিকার প্রখ্যাত জীববিজ্ঞানী বল্টিমোরও। তিনি বলেছিলেন, সার্স-কোভ-২-এর জিনোমের একটি নির্দিষ্ট চরিত্র ‘ফিউরিন ক্লিভেজ সাইট’ রয়েছে। এটি অন্য সার্স-কোভে ছিল না। বল্টিমোর সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, নতুন চরিত্রটি করোনাভাইরাসের জিনোমে ঢোকানো হয়েছে গবেষণাগারেই। তিনি বলেছিলেন, ওই ‘ফিউরিন ক্লিভেজ সাইট’ হল ‘স্মোকিং গান’। অর্থাৎ বন্দুকের নলের ধোঁয়া থেকে তাঁর সন্দেহ গুলি ছোড়া হয়েছিল। বাল্টিমোর এ-ও বলেছিলেন, ‘‘সার্স-কোভ-২ যে প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি নয়, জিনোমের ওই নতুন চরিত্রটিই তার নিদর্শন।’’
কিন্তু প্রবীণ বিজ্ঞানী সম্প্রতি জানিয়েছেন, ‘স্মোকিং গান’ বলা তাঁর ঠিক হয়নি। ভাইরাসের উৎস প্রাকৃতিক না অন্য ভাবে তৈরি, সেটা স্পষ্ট জানা যায়নি। পুরো বিষয়টাই অনিশ্চিত। বল্টিমোর বলেন, ‘‘ফিউরিন ক্লিভেজ রয়েছে বলেই সেটা প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হয়েছে, নাকি কৃত্রিম ভাবে (মলিকিউলার ম্যানিপুলেশন) তৈরি, সেই সিদ্ধান্তে পৌঁছনো অসম্ভব।’’
উহান সম্পর্কে আগেও পিছু হটতে দেখা গিয়েছে বিজ্ঞানীদের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র তদন্তকারী দল ফেব্রুয়ারি মাসে উহানে গিয়ে ভাইরোলজি ল্যাবগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ভূয়সী প্রশংসা করে। একপ্রকার ‘ক্লিনচিট’ দিয়ে তারা জানিয়েছিল, এখান থেকে ভাইরাস ছড়ানো অসম্ভব।