ব্রাজিলের ঘন বৃষ্টিঅরণ্য। ভাল করে সূর্যালোকও পৌঁছয় না। রাতদিন ভয়াল পশুদের আনাগোনা। বড় গাছেদের সঙ্গেই গা ঘেঁষাঘেঁষি করে আছে ছোট ছোট ঝোপঝাড়। তার মধ্যেই হাতে কুঠার নিয়ে গাছ কাটছেন এক অর্ধনগ্ন মানুষ। ফুটেজটা এরকমই। কার জানেন?
ব্রাজিলের রন্ড-নিয়া প্রদেশের এই গহীন জঙ্গলেই দেখা মিলেছিল আমাজনের জঙ্গলের একটা গোটা জনজাতির একমাত্র জীবিত আদিবাসী মানুষের।‘দ্য ম্যান অব হোল’ নামেই এই মানুষকে চেনে বহির্বিশ্ব। গহন অরণ্যেই খড়, কাঠ ও গাছের পাতা দিয়ে বানানো কুঁড়ে ঘরে থাকেন তিনি।
১৯৯৬-তে ব্রাজিল সরকারের সংস্থা ‘ফুনাই’ এই মানুষটির অস্তিত্ব দাবি করে একটি ফুটেজ প্রকাশ করে। ফুটেজ প্রকাশ্যে আসতেইএই গোষ্ঠী নিয়ে কৌতূহল বাড়ে।
এর পর ২০০৯ সালে পোর্তো ভেলহোর কাছে মাছ ধরতে যাওয়া এক জেলে সুঠাম চেহারা, অর্ধনগ্ন ও হাতে কুঠার— এমনই অবস্থায় এই আদিবাসীর দেখা পেয়েছেনবলে দাবি করেন।
১৯৭০-’৮০ সালে কৃষক ও জমিআগ্রাসীদের ক্রমাগত আক্রমণের শিকার হন ব্রাজিলের আদিবাসীরা। বহু আদিবাসীর এতে মৃত্যুও হয়। হাতে গোনা জীবিত কয়েক জনের সঙ্গে ১৯৯৫ সালে এক দল কৃষকের হামলায় মৃত্যু হয় প্রায় সকলের। ধরে নেওয়া হচ্ছে এই জীবিত মানুষটিই ওই আদিবাসী সম্প্রদায়ের শেষ প্রতিনিধি।
২০০৯–এর পর তাঁকে আর দেখা না গেলেও ফুনাইয়ের আধিকারিকদের দাবি, এখনও অরণ্য অঞ্চলে তাঁর পায়ের ছাপ, বর্শাবিদ্ধ মরা পশু ইত্যাদিতে তাঁর বেঁচে থাকার নানা প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রায় ৫০-এর কোঠায় বয়স এই আদিবাসী মানুষটির বলে দাবিএই সংস্থার।তাঁর চেহারা, তির-ধনুক ও অন্যান্য অস্ত্র চালানোর ধরন জানান দেয়, বেশ সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করেন তিনি।
‘ফুনাই’-এর রিজিওনাল কো-অর্ডিনেটর অ্যালটেয়ার অ্যালগেয়ারের মতে, ‘ফুটেজে এই মানুষটিকে সব সময় একা চলাফেরা করতে দেখা গিয়েছে। বন্য শূকর, পাখি, বানর প্রভৃতি পশু শিকার করে ও বনের ফলমূল খেয়েই তাঁর দিন কাটে। তির চালনা ও জঙ্গলের মাঝে গর্ত খুঁড়ে যাবতীয় জৈবিক প্রয়োজন মেটাতে যথেষ্ট দক্ষ তিনি।
যন্ত্রপাতির মধ্যে কাঠ ও পাথর দিয়ে হাতে বানানো হাতুড়ি, নাট-বল্টু ও বর্শার ব্যবহারও তাঁর জানা। অস্ত্র ছুড়ে শিকার করতেও যথেষ্ট অভ্যস্ত তিনি। বিগত ২৩-২৪ বছর তিনি একাই বাস করছেন বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।
ফুনাইয়ের পক্ষ থেকে এঁর সঙ্গে যোগাযোগ করারও চেষ্টা করা হয়। তাঁর কাছে উন্নয়নের আলো পৌঁছে দিতে তাঁর যাতায়াতের পথে দেশলাই, কুঠার, খাদ্যশস্যের বীজ রেখেও আসা হয়। কিন্তু সে সব তিনি গ্রহণ করেননি। ‘ফুনাই’-এর যোগাযোগের চেষ্টাও ব্যর্থ হয় প্রতি বারই। তাঁর একা থাকতে চাওয়ার মানসিকতা ও সভ্য সমাজকে এড়িয়ে চলার প্রবণতাই এই ব্যর্থতার কারণ বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।