মুক্তির পর থেকেই বিতর্কের কেন্দ্রে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’। সিনেমার বিষয়বস্তু নিয়ে নানা মত সামনে এসেছে। এ বার নিউজ়িল্যান্ডে ছবি মুক্তি নিয়ে শুরু হয়েছে চাপান-উতোর। ছবিটিকে এর আগে ছাড়পত্র দিলেও কিছু মানুষের আপত্তিতে ফের ছবিটি সম্পর্কে পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিউজ়িল্যান্ডের সেন্সর বোর্ড। ছবির মুক্তি আপাতত স্থগিত করে দেওয়ায় সেন্সর বোর্ডের তীব্র সমালোচনা করেছেন নিউজ়িল্যান্ডের প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স।
এর আগে সিনেমাটির মুক্তিতে ছাড়পত্র দিলেও সেন্সর বোর্ডের তরফে ‘এ’ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। বলা হয়েছিল, ১৬ বছরের বেশি বয়সিরাই এই সিনেমা দেখার অনুমতি পাবেন।
প্রসঙ্গত সিনেমাটিতে দেখানো হয়েছে, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উপরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আক্রমণ এবং উপত্যকা থেকে তাঁদের বিতাড়নের বিষয়টি। গত ১১ মার্চ মুক্তির পর থেকেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে। নিউজ়িল্যান্ডেও একটি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা এই ছবির প্রদর্শন নিয়ে আপত্তি তুলেছেন।
নিউজ়িল্যান্ডের অন্যতম রাজনৈতিক দল ‘নিউজ়িল্যান্ড ফার্স্ট’-এর নেতা তথা প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী পিটার্সের বক্তব্য, এই সিনেমাটিকে সেন্সর করা দেশের মানুষের স্বাধীনতার উপরেই আক্রমণের শামিল। সিনেমাটি আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত-সহ বহু দেশের মানুষ ইতিমধ্যেই
দেখে ফেলেছেন। তাঁর মতে, সেন্সর বোর্ডের এই সিদ্ধান্ত ১৫ মার্চ ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হামলা কিংবা আমেরিকায় ৯/১১ জঙ্গিহানার তথ্য ও চিত্র মানুষের মন থেকে মুছে
ফেলার মতো।
এর পাশাপাশি পিটার্স জানিয়েছেন, নিউজ়িল্যান্ড তো বটেই, সারা বিশ্বের মূলধারার মুসলিমরা ইসলামের নামে সন্ত্রাসের নিন্দা করেন। ইসলাম বিদ্বেষের বিরুদ্ধে করা পদক্ষেপগুলি ভুলবশত সন্ত্রাসবাদীদের ঢাল হয়ে ওঠা উচিত নয়। ফেসবুকে পিটার্সের এই মন্তব্যের পরেই তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’-এর পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী।
টুইটারে পরিচালকের দাবি, সিনেমাটির উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপানোর জন্য কিছু সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর তরফে নিউজ়িল্যান্ড সেন্সর বোর্ডের উপরে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
যদিও স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, সিনেমাটির উপরে এখনও কোনও নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়নি। কিছু মানুষের আপত্তির জন্য সিনেমাটির প্রদর্শনের বিষয়ে পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেন্সর বোর্ডের প্রধান ডেভিস শ্যাঙ্কস জানিয়েছেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ তাঁকে জানিয়েছেন, এই সিনেমাটি মুসলিম-বিরোধী ভাবাবেগ উস্কে দিতে পারে। যার থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে বিদ্বেষ।
অন্য দিকে নিউজ়িল্যান্ডে সিনেমাটি মুক্তির দাবিতেও পিটিশন জমা পড়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ছবিটির বিষয়বস্তু বাস্তব ঘটনার উপর ভিত্তি করে নির্মিত। সারা বিশ্বে চলচ্চিত্র মাধ্যমটিকে ব্যবহার করে যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়। এর পাশাপাশি ইসলাম বিদ্বেষের অভিযোগ উড়িয়ে ওই পিটিশনে বলা হয়েছে, গোটা বিশ্বে লক্ষাধিক মানুষ সিনেমাটি দেখে ফেলেছেন। তার পরেও কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
নিউজ়িল্যান্ডে সিনেমাটির প্রদর্শন স্থগিত রাখার তুমুল বিরোধিতা করেছেন পরিচালক। সমস্ত ভারতীয়কে জোটবদ্ধ হয়ে এই অগণতান্ত্রিক কৌশলের বিরোধিতা করার অনুরোধও জানিয়েছেন বিবেক। যদিও তাঁর মন্তব্যের পরেই নেটনাগরিকদের কেউ কেউ ‘পরজ়ানিয়া’ নিয়ে বিতর্কের বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়েছেন। ২০০২ সালে গুজরাত দাঙ্গার পরে এক পারসি দম্পতির সন্তানকে খুঁজে বেরানোর বিষয় নিয়ে ‘পরজ়ানিয়া’ তৈরি করেছিলেন রাহুল ঢোলাকিয়া। সেই সিনেমার উপরে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল গুজরাতে। শাসক দল বিজেপির কোপে যাতে পড়তে না হয়, তাই সিনেমাটি প্রদর্শনে নারাজ ছিলেন সে রাজ্যের বহু হল মালিক। বিবেককে এক জনের প্রশ্ন, ‘‘সেই ঘটনাটি আপনার অগণতান্ত্রিক
মনে হয়নি?’’ আবার বহু মানুষই বিবেক ও তাঁর সিনেমার পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন।