জঙ্গিদের ‘নাপসন্দ’ হতে গায়ে আগুন কিশোরীর

আট বছরের মেয়েটাকে কোনও দিন ভুলতে পারবেন না— বললেন চিকিৎসক। মেয়েটার নাক নেই, কান নেই, জ্বলে গিয়েছে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ। জেনিভার চিকিৎসা শিবিরে মেয়েটাকে প্রথম বার দেখে শিউরে উঠেছিলেন জঁ ইয়াহা কিজিহা নামে ওই চিকিৎসক।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

জেনিভা শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৫৯
Share:

আট বছরের মেয়েটাকে কোনও দিন ভুলতে পারবেন না— বললেন চিকিৎসক। মেয়েটার নাক নেই, কান নেই, জ্বলে গিয়েছে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ। জেনিভার চিকিৎসা শিবিরে মেয়েটাকে প্রথম বার দেখে শিউরে উঠেছিলেন জঁ ইয়াহা কিজিহা নামে ওই চিকিৎসক। জানতে পারেন, মেয়েটা নাকি নিজেই আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল গায়ে। কেন? প্রশ্ন করেছিলেন চিকিৎসক। উত্তরটা শোনার পরে আর একটা কথাও বলতে পারেননি!

Advertisement

তিনি জানালেন, দশটা মাস দক্ষিণ ইরাকের এক জঙ্গিডেরায় যৌনদাসী হয়ে থেকেছে মেয়েটা। বিক্রি হয়েছে আট বার। শেষে আর থাকতে না পেরে নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয় সে। যাতে, পরের বার বিক্রি করতে নিয়ে গেলে ওকে নতুন খদ্দেরদের পছন্দ না হয়। চিকিৎসকের কথায়, জঙ্গিদের কাছে অপছন্দ হওয়ার জন্য গায়ে আগুন দিয়ে অর্ধেক শরীরটাই পুড়িয়ে ফেলেছে সে!

ইরাকের বিভিন্ন জঙ্গিঘাঁটি থেকে উদ্ধার করে আনা মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতের চিকিৎসা করতে জার্মানিতে শুরু হয়েছে বিশেষ ধরনের শিবির। সেই শিবিরের প্রধান চিকিৎসক জঁ। জার্মানির বাদেন-উটেমবার্গের পৃষ্ঠপোষকতায় চলছে এই শিবির। গত বছরের এপ্রিল থেকে শ’য়ে শ’য়ে ইয়েজাদি
মহিলাকে চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছে ওই শিবিরে। তাঁদের প্রায় সকলকেই যৌনদাসী বানিয়ে রাখা হয়েছিল ওই শিবিরে। সেখানে ইতিমধ্যেই এগারোশোর বেশি মহিলার চিকিৎসা করেছেন জঁ। শুনেছেন তাঁদের কাহিনি। সারিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন তাঁদের। তাঁর কথায়, শিবিরে আসা মহিলাদের বেশির ভাগেরই বয়স ষোলো থেকে চল্লিশের মধ্যে। প্রথমে শারীরিক চিকিৎসা আর তার পর মাস ছয়েক ধরে সাইকো থেরাপি। ওই শিবিরে আট বছরের মেয়েটাই ছিল সব চেয়ে ছোট। জঁ জানালেন, বাচ্চা মেয়েটাকে তার বোনেদের সঙ্গে জঙ্গিডেরায় উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। নির্যাতন আর ধর্ষণ থেকে বাঁচতে নিজেই গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল! তবে এখন সেই আতঙ্ক অনেকটাই কেটেছে। জঁয়ের কথায়, ‘‘ওর বয়স কম। চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছে। নতুন পরিবেশে ভাল আছে। আমরা সকলেই আশা করছি, ভবিষ্যতে ও এ সবের বাইরে বেরোতে পারবে।’’

Advertisement

জঁয়ের মতে, শিবিরের প্রত্যেকটা মানুষ রাত-দিন লড়াই করছেন।
কেউ লড়ছেন নরকের আতঙ্ক ভুলতে, আর কেউ লড়ছেন এই মানুষগুলোকে মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে। এই লড়াই নিয়ে আশাবাদী জঁ। বললেন, ‘‘ওদের এখন সুরক্ষার আশ্বাসটুকুই সব চেয়ে বেশি
দরকার। যে মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা ওদের হয়েছে, তার বাইরে বেরোতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement