২২ বছরের এই তরুণই ম্যনচেস্টার এরিনায় আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, বলছে ব্রিটেনের পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত।
সলমন রামাদান আবেদি— এই নামটাকে ঘিরে বিস্মিত ম্যানচেস্টার। বয়স হয়েছিল মাত্র ২২ বছর। লিবীয় বাবা-মায়ের সন্তান সলমন বরাবরই শান্ত-শিষ্ট ছিল— বলছেন পরিচিতরা। পুলিশের খাতায় কখনও নাম ওঠেনি তার, জানা যাচ্ছে প্রশাসনিক সূত্রেই। কিন্তু সলমনের বাবা আবু ইসমাইল যে মসজিদে আজান দিতেন, ম্যাঞ্চেস্টারের সেই মসজিদের ইমামের দাবি, সলমন রামাদান আবেদি ছিল এক ‘বিপজ্জনক উগ্রপন্থী’।
২২ জনের প্রাণ গিয়েছে ম্যানচেস্টার হামলায়। জখম ৫৯ জন। পরে জানা যায়, আত্মঘাতী বিস্ফোরণটি যে ঘটিয়েছে, তার নাম সলমন রামাদান আবেদি। ব্রিটিশ পুলিশ এখনই হামলাকারীর নাম প্রকাশ করার পক্ষপাতী ছিল না। কিন্তু মার্কিন প্রশাসন সে দেশের সংবাদমাধ্যমকে সলমনের নাম জানিয়ে দেওয়ার পর ব্রিটেন আর রাখঢাক করেনি। তাতেই আরও চমকে গিয়েছে দক্ষিণ ম্যানচেস্টারের লিবীয় কলোনি। সলমন আবেদি সন্ত্রাসবাদী? মুখচোরা ছেলেটা এত বড় গণহত্যা ঘটিয়ে ফেলল? হতচকিত সলমনের পরিজনরা, প্রতিবেশীরা, পরিচিতরা।
১৯৯৪ সালের শেষ দিনে লন্ডনে জন্ম সলমন রামাদান আবেদির। তার বাবা এবং মা লিবীয় হলেও মুয়াম্মর গদ্দাফির স্বৈরশাসন এড়াতে দেশে ছেড়ে ব্রিটেনে চলে গিয়েছিলেন অনেক আগেই। প্রথম কিছু বছর তাঁরা লন্ডনে ছিলেন। পরে চলে যান ম্যানচেস্টার। জন্মসূত্রে ব্রিটিশ নাগরিক সলমন রামাদান আবেদি ম্যানচেস্টারের স্কুলেই পড়েছে। পরে সালফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে। তবে উচ্চশিক্ষা মাঝপথেই থেমে যায়। বেকারিতে কাজ নেয় সলমন। কিছু দিন আগে সলমনের বাবা লিবিয়ায় ফিরে গিয়েছেন বলে খবর। তবে পরিবারের বাকিরা ম্যানচেস্টারেই থাকছিলেন বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে।
দক্ষিণ ম্যানচেস্টারের এই অঞ্চলেই লিবীয়দের বাস। সলমন এই লিবীয়দেরই এক জন। সোমবারের সন্ত্রাসবাদী হানার সঙ্গে এই এলাকার আর কারও যোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে শুরু হয়েছে জোর তল্লাশি। ছবি: রয়টার্স।
ম্যানচেস্টারের পুলিশ জানাচ্ছে, সলমন রামাদান আবেদিকে নিরাপত্তা বিভাগ চিনত। দক্ষিণ ম্যানচেস্টারের যে অঞ্চলে লিবীয়দের বাস, সেখানে কট্টরবাদীদের প্রভাব বাড়ছে বলে খবর ছিল পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কাছে। গোটা লিবীয় কলোনিতেই তাই নজর ছিল পুলিশের, সেই সূত্রেই পুলিশ চিনত সলমনকেও। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনও তদন্ত চলছিল না, কোনও অভিযোগও ছিল না। কোনও গোয়েন্দা রিপোর্টে ওই লিবীয় বংশোদ্ভূত তরুণকে কখনও ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। কিন্তু সেই সলমনই বিস্ফোরণটা ঘটাল। ম্যানচেস্টারে আত্মঘাতী হানার দায় নিয়েছে আইএস। কিন্তু হামলাকারী সলমনের সঙ্গে সত্যিই আইএস-এর কোনও যোগ ছিল কি না, ব্রিটিশ তদন্তকারীরা সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন।
আরও পড়ুন: সিয়াচেনে পাক যুদ্ধবিমান? সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন দাবি: বলল ভারতীয় বায়ুসেনা
সোমবার রাতে আত্মঘাতী হানা হয়েছে ম্যানচেস্টারে। পুলিশ সরকারি ভাবে হামলাকারীর নাম প্রকাশ করার আগেই কানাঘুষোয় শোনা যাচ্ছিল, লিবীয়দের মধ্যে কেউ হামলাটি চালিয়েছে। তাতেই চমকে গিয়েছিলেন ম্যানচেস্টারে বসবাসকারী লিবীয়রা। তাঁদের মধ্যে এক জনই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে, প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না অনেকেই। কে হামলা চালিয়ে থাকতে পারে? জল্পনা শুরু হয়েছিল। ২০১১ সালে লিবিয়ায় যখন গৃহযুদ্ধ চলছিল, তখন অনেক লিবীয় ব্রিটেন ছেড়ে দেশে গিয়েছিলেন সে যুদ্ধে যোগ দিতে। তাঁরা ফের ব্রিটেনে ফিরেছিলেন আতঙ্ক আর পশ্চিমি শক্তিগুলির বিরুদ্ধে এক রাশ ঘৃণা সঙ্গে নিয়ে। তাঁদের কেউই আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছে, প্রথমে ভেবেছিলেন ম্যানচেস্টারের লিবীয়রা। কিন্তু পুলিশ সলমন রামাদান আবেদির নাম প্রকাশ করার পর লিবীয় কলোনিতে বিস্ময়ের সীমা ছিল না। কোনও ধরনের কট্টরবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত ছিল না সলমন আবেদি, বলছেন তার প্রতিবেশীরা।
বিস্মিত নন একমাত্র ডিডসবেরি মসজিদের ইমাম মহম্মদ সইদ এল-সাইতি। ম্যানচেস্টারের এই ডিডসবেরি মসজিদেই আজান দিতেন সলমনের বাবা আবু ইসমাইল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই মসজিদের ইমাম জানিয়েছেন, সলমন এক বিপজ্জনক উগ্রপন্থী ছিল। তিনি জানিয়েছেন, এক বার আইএস-এর সম্পর্কে স্থানীয় মানুষকে সতর্ক করে ভাষণ দিয়েছিলেন তিনি। ভাষণ শেষ হওয়ার পর সলমন তাঁর বক্তব্যের বিরোধিতা করেছিল। ইমামের কথায়, ‘‘সলমনের মুখে আমি ঘৃণার ছায়াটা দেখেছিলাম।’’ আইএস-এর মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের কার্যকলাপ এবং কট্টরবাদকে সলমন যে সমর্থন করত, ওই তরুণের কথাবার্তাতেই তা তিনি টের পেয়েছিলেন বলে সাইতির দাবি। সলমন তাঁকে পছন্দ করত না বলেও সাইতি দাবি করেছেন।