জখম শিশু। রয়টার্স
সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিশুর জনবহুল চেকপয়েন্টে বোমা বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করল জঙ্গি গোষ্ঠী আল শাবাব। শনিবার বোমাবোঝাই একটি গাড়ি থেকে বিস্ফোরণটি হয় বলে পুলিশ সূত্রে খবর। প্রাণ হারান শিশু-সহ মোট ৯০ জন। নিহতদের মধ্যে দু’জন তুরস্কের নাগরিকও রয়েছেন বলে জানান সোমালিয়ার বিদেশমন্ত্রী। সোমালিয়ার এক আন্তর্জাতিক সংস্থার দফতরের অবশ্য দাবি, নিহতের সংখ্যা ৯০ ছাড়িয়েছে। টুইট করে একই কথা জানান সোমালিয়ার এক এমপি-ও। হতদের মধ্যে ১৭ জন পুলিশ আধিকারিক রয়েছেন বলেও জানান তিনি। আহতের সংখ্যাও কম নয়। ঘটনায় কলেজ পড়ুয়াদের দু’টি বাস দুমড়ে-মুচড়ে যায়। প্রাণ হারান বেশ কয়েক জন ছাত্র।
সরকারের বিরোধিতায় সোমালিয়ায় ঘন ঘন হামলা চালায় আল-কায়দার শাখা সংগঠন আল-শাবাব। এর আগে ২০১৭-র অক্টোবরে মোগাদিশুতে জ্বালানি ভরার জায়গার কাছে একটি বোমা ভর্তি ট্রাক বিস্ফোরণ করিয়েছিল তারা। আগুনের হলকা ছড়িয়ে পড়ে দাবানলের মতো। ওই ঘটনায় কমপক্ষে ৬০০ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। ফলে তারাই এই ঘটনার পিছনে রয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে অনুমান করা হচ্ছিল।
ঘটনাস্থলের কাছেই বাড়ি বছর আঠারোর কোয়ালি ইব্রাহিমের। শনিবার সকালে বিস্ফোরণের বিকট আওয়াজের আকস্মিকতা কাটিয়ে সম্বিৎ ফিরতেই স্বামীর নম্বরে ফোন করেন তিনি। মিনিট কয়েক আগেই কাজে বেরিয়েছিলেন কোয়ালির স্বামী বছর ৩৫-এর মুখতার আবুকর। নির্মাণকর্মী মুখতার গিয়েছিলেন ওই চেকপয়েন্টের দিকেই। তবে কিছুতেই তাঁকে ফোনে পাচ্ছিলেন না কোয়ালি। এর পর শুরু হয় হাসপাতালের দোরে দোরে ঘোরা। শেষ পর্যন্ত মেদিনা হাসপাতালে পৌঁছনোর পরে লাশের সারির সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় কোয়ালিকে। কাপড় সরাতেই একটি দগ্ধ দেহ দেখতে পান তিনি। আঙুলের গভীর ক্ষতের দাগ দেখে স্বামীকে শনাক্ত করেন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা কোয়ালি।
তিন প্রত্যক্ষদর্শী সংবাদ সংস্থাকে জানান, তুর্কি ইঞ্জিনিয়ারদের তিন জনের একটি দল বিস্ফোরণের সময়ে ঘটনাস্থলে ছিলেন। ওই চেকপয়েন্টের কাছ থেকে শহরের দিকে একটি রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা করতেই তাঁরা ওখানে এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে দু’জন বিস্ফোরণের বলি হয়েছেন বলে জানান সোমালিয়ার বিদেশমন্ত্রী আহমেদ আওয়াদ। ঘটনায় তাঁদের একটি গাড়িও ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। ২০১১ সালের দুর্ভিক্ষের পর থেকে সোমালিয়াকে নানা ভাবে সাহায্য করে চলেছে তুরস্ক। সেই তালিকায় রয়েছে চিকিৎসা এবং পরিকাঠামো সংক্রান্ত বিষয়ও। পাশাপাশি ২০১৭তে সোমালিয়ার বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে মোগাদিশুতেই একটি বেস ক্যাম্প তৈরি করে তুরস্ক।
যে চেকপয়েন্টে ঘটনাটি ঘটে, সেখানে একটি সরকারি কর-আদায়ের দফতরও রয়েছে। হামলাকারীদের নিশানায় সেটিও ছিল বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। শনিবারের এই বিস্ফোরণ নিয়ে ২০১৯ সালে মোট ২০টি গাড়ি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এই ধরনের বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা ২০১৮-র তুলনায় অনেকটাই বেশি বলে জানায় মোগাদিশুর নিরাপত্তা বিষয়ক একটি ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’ হিরাল ইনস্টিটিউট।