প্যারিসে যেন ফিরে এল ২৬/১১-র সেই আতঙ্ক। মুম্বইয়ের মতো প্রায় একই কায়দা, প্রায় একই সময়, প্রায় একই রকম ছক। শহরের নানা জায়গায় একই সময় হামলা চালাল জঙ্গিরা।
২০০৮ সালে ভারতের বাণিজ্য নগরীতে হঠাত্ হামলা চালিয়ে ছিল লস্কর-ই-তৈবা। না, কোনও প্লেন হ্যাইজ্যাক করে স্কাইস্ক্রাপারকে উড়িয়ে দেওয়া হয়নি সে বার। ব্যবহার করা হয়নি কোনও ভীষণ শক্তিশালী উন্নত প্রযুক্তির আগ্নেয়াস্ত্রও। অন্তর্জাল বা সেল ফোনের বদলে জঙ্গিরা অপরেশনের পরিকল্পনাটা মৌখিক ভাবেই সেরে ফেলেছিল। শীতল মস্তিষ্কে সাধারণ বন্দুক আর গ্রেনেড দিয়েই ভয়ঙ্কর সেই ধ্বংসলীলা চালিয়ে ছিল কসাভরা। নিহত হয়েছিলেন অসংখ্য সাধারণ মানুষের।
ঠিক একই রকম ঢঙে ফ্রান্সের রাজধানীতেও চালানো হল সন্ত্রাস। ফরাসি পুলিশের অনুমান, এ ক্ষেত্রেও উন্নত যোগাযোগ প্রযুক্তির বদলে মুখে মুখেই এই ভয়াবহ হামলার পরিকল্পনাটা সেরেছিল জঙ্গিরা। সম্ভবত সেই জন্যেই আগে থেকে এই হামলার কোনও আঁচই পাওয়া যায়নি। ব্যবহার করেছে সাধারণ আগ্নেয়াস্ত্র। শুরুটা হয়েছিল স্তাদে দ্য ফ্রান্স স্টেডিয়ামের বাইরে। তারপর হামলা চালানো হয় পরপর পাঁচটি জায়গায়।
মুম্বইয়ে ১০ জন কেড়ে ছিল ১৬৪ জনের প্রাণ। এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী প্যারিসে মাত্র ৮ জন নিখুঁত ছকে দেড় ঘণ্টার মধ্যেই খুন করছে অন্তত ১২৭ জনকে। হৃদয়হীন সন্ত্রাস কোথায় যেন মুম্বইয়ের রাজপথকে মিলিয়ে দিল প্যারিসের রক্তাক্ত সন্ধের সঙ্গে।
পার্থক্য শুধু এক জায়গায়। ফরাসি প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন পিছনে আছে আইএস জঙ্গিরাই। মুম্বই হামলার সময় জঙ্গিরা এসেছিল প্রতিবেশী দেশ থেকে। ফ্রান্সের ক্ষেত্রে সম্ভবত সে রকম কোনও ঘটনা ঘটেনি। কিছুদিন আগেই ফরাসি সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত একটি তথ্য অনুয়ায়ী গোটা ইউরোপে এই মুহূর্তে আইএস-এর সর্বাধিক সদস্য সংখ্যা ফ্রান্সেই। অনুমান করা হচ্ছে, কোনও বহিরাগত নয়, এই হামলা চালিয়েছে দেশীয় জঙ্গিরাই।